কিশোরের মৃত্যু : আজমেরী গেøারির দুই চালক কারাগারে

আগের সংবাদ

সিনহা হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত : আদালতে রায় ঘোষণা

পরের সংবাদ

লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান : মনপুরায় ৫ হাজার টাকায় বিদ্যুতের খুঁটি বিক্রি!

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সোহাগ মাহামুদ সৈকত, মনপুরা (ভোলা) থেকে : মনপুরায় সরকারি বিদ্যুতের খুঁটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএনজে কোম্পানির বিরুদ্ধে। বিনামূল্যে বসানোর নিয়ম থাকলেও খুঁটিপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। এছাড়া সংযোগ সড়কে খুঁটি বসাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার একাধিক প্রমাণ রয়েছে। নিয়মিত আবাসিক সংযোগ নিবন্ধিত গ্রাহকরা আবেদন করেও পাচ্ছেন না এসব সরকারি বিদ্যুতের খুঁটি।
জানা যায়, মনপুরা উপজেলাটি ভোলা জেলা শহর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ হওয়ায় এখানে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) মাধ্যমে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’-এর আওতায় ওজোপাডিকোর বিদ্যুৎ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পুরনো লোহার খুঁটি তুলে নেয়া হচ্ছে। লোহার খুঁটি সরিয়ে সিমেন্টের তৈরি খুুঁটি বসানো হচ্ছে মূল সড়কসহ সংযোগ সড়কগুলোতে।
বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএনজে কোম্পানি দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে এই খুঁটি বসানোর দায়িত্ব পায়। প্রথম পর্যায়ে উপজেলা সদর হাজীর হাট ইউনিয়নে এক হাজার খুঁটি বসানোর কার্যক্রম চলছে। কিছু খুঁটি না বসাতেই গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএনজে কোম্পানির বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রাহক সুমন, কামরুল, বিপ্লব, আলাউদ্দিন, লোকমান বলেন, আমাদের নিবন্ধিত বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। আমাদের বাড়িতে লোহার পিলার (খুঁটি) রয়েছে। অথচ আবেদন করার পরও আমরা সিমেন্টের তৈরি নতুন খুঁটি পাচ্ছি না। পুরনো লোহার খুঁটি ভেঙে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বিদ্যুৎ চলছে। খুঁটিপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা না দিলে কোনো খুঁটি দেয়া হবে না বলে জানান ঠিকাদার।
যাদের বাড়িতে ওজোপাডিকোর বিদ্যুতের কোনো আবাসিক সংযোগ নিবন্ধন নেই, তাদের বাড়িতে দেখা গেছে সরকারি বিদ্যুতের নতুন খুঁটি ও তার সংযোগ। যাদের বাড়ি মূল সড়ক থেকেও অনেক দূরে সেসব বাড়িতেও দেখা যাচ্ছে বিদ্যুতের একাধিক নতুন খুঁটি। রাস্তা থেকে দূরে হওয়ায় একটি বাড়ির জন্য তিনটি, চারটি বা পাঁচটি নতুন সিমেন্টের খুঁটিও বসানো হয়েছে শতাধিক বাড়িতে। অথচ পুরনো নিবন্ধিত গ্রাহকরা নতুন খুঁটি পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনিবন্ধিত একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ভবিষ্যতে মনপুরায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ চালু হবে। সেজন্য আমরা খুঁটিপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছি জেএনজে কোম্পানির ঠিকাদার মো. শাহীনের ছেলে সোহানকে। আমাদের বাড়ি মূল রাস্তা থেকে দূরে হওয়ায় ৪-৫টি পিলারের প্রয়োজন হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএনজে কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মো. শাহীন বলেন, সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের খুঁটি বসানোর কাজ চলছে। পুরনো সংযোগসহ মূল সড়ক ও সংযোগ সড়কে খুঁটি বসানোর পরিকল্পনা কাঠামো আছে। তবে আমার ছেলে সোহান কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েছে কিনা সে ব্যাপারে আমার জানা নেই।
এছাড়া সংযোগ সড়কে খুঁটি বসানোর অনুমোদিত পরিকল্পনা থাকলেও কিছু কিছু সড়কে এখনো খুঁটি বসানো হয়নি। সেসব সংযোগ সড়কে নতুন খুঁটি দেখা যাচ্ছে সেগুলো টাকার বিনিময়ে বসানোর অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একটি সংযোগ সড়কের প্রত্যেক বাসিন্দার কাছ থেকে দালালদের মাধ্যমে খুঁটিপ্রতি তিন হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে।
অনিয়মের ব্যাপারে ওজোপাডিকোর উপজেলা আবাসিক প্রকৌশলী আব্দুস সালাম জানান, সরকারি বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর জন্য কোনো প্রকার টাকা নেয়া হয় না। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সচেতনতামূলক মাইকিং করা হয়েছে। তার পরও যদি কেউ টাকা দিয়ে থাকেন তার দায় ওজোপাডিকোর নয়।
উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. শামীম মিঞা জানান, সরকারি বিদ্যুতের খুঁটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণের নিয়ম রয়েছে। খুঁটি বসাতে টাকা নেয়ার অভিযোগ শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রমাণসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়