কিশোরের মৃত্যু : আজমেরী গেøারির দুই চালক কারাগারে

আগের সংবাদ

সিনহা হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত : আদালতে রায় ঘোষণা

পরের সংবাদ

যাবজ্জীবন সাজা খাটতে কারাগারে নকল সোহাগ : টিকা নিতে গিয়ে গ্রেপ্তার আসল সোহাগ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মাত্র ৫ হাজার টাকা মাসোহারা ও অন্যান্য সুবিধার বিনিময়ে সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ তার মাদকাসক্ত ফুপাতো ভাই মো. হোসেনকে (৩৫) যাবজ্জীবন সাজা খাটতে জেলে পাঠায়। যদিও সোহাগ বলেছিল তিন মাসের মধ্যেই তাকে জামিনে বের করে আনবে। তবে তা না করে সে দেশ ত্যাগের পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় দালালের সহায়তায় সোহাগ নতুন ভোটার আইডি কার্ড ও পাসপোর্ট করে। এ মাসের ১৮ তারিখ সে দুবাই যাওয়ার ভ্রমণ ভিসা পায়। আর সেখানে যাওয়ার জন্যই করোনা টিকা নিতে আসার সময় র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টি মামলা রয়েছে।
কারাগারে থাকা নকল আসামির পরিবর্তে বাইরে থাকা প্রকৃত যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সোহাগকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১০ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) অতি. ডিআইজি মাহফুজুর রহমান। গতকাল রবিবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সিও বলেন, গত ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর কদমতলী থানাধীন আউটার সার্কুলার রোডে নোয়াখালী পট্টিতে, নান্নু জেনারেল স্টোরের সামনে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ, মামুন ও সোহাগ ওরফে ছোট সোহাগসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৩-৪ জনকে আসামি করে কদমতলী থানায় একটি মামলা করা হয়। ওই আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে হুমায়ূন কবির টিটুকে গুলি করে হত্যা করে। এ মামলার ১ নম্বর আসামি সোহাগকে ২০১০ সালের ২২ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০১৪ সালের ১৬ মে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পায়। তবে এরপরই সে ফেরারি হয়। এ অবস্থায় ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর সোহাগের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার অনুপস্থিতিতেই আদালত যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে তাকে।
তিনি আরো বলেন, কারাদণ্ডের পরই সোহাগ পরিকল্পনানুযায়ী মাদকাসক্ত ফুপাতো ভাই মো. হোসেনকে তার পরিবর্তে জেলে যেতে নানা প্রলোভন দেখায়। মাসিক পাঁচ হাজার টাকাসহ অন্যান্য সুবিধা মিলবে এমন শর্তে জেলে যেতে রাজি হয় হোসেন (সোহাগ নাম ধারণ করে)। সেই মোতাবেক গত ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি সোহাগ হিসেবে আদালতে আত্মসমর্পণ করে সে। পরে জামিন চাইলেও বিজ্ঞ আদালত তা নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তবে গত বছর এক সাংবাদিক টিটু হত্যা মামলায় একজনের পরিবর্তে অন্যজন জেলে থাকার বিষয়টি নজরে নিয়ে এলে আদালত কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চায়। সেই প্রতিবেদনে অমিলের বিষয়টি উঠে আসে। থানা পুলিশের প্রতিবেদনেও বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। এরপর থেকেই গত বছরের আগস্ট মাস থেকে বিষয়টি নিয়ে র‌্যাব-১০ ও সদর দপ্তরের গোয়েন্দা দল কাজ শুরু করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত শনিবার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল মিডফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে সোহাগকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিন মাসের মধ্যেই ফুফাতো ভাইকে জামিনে বের করে আনার কথা দিলেও সোহাগ পালানোর পরিকল্পনা করছিল। এরই অংশ হিসেবে নতুন ভোটার আইডি ও পাসপোর্ট করে সে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে পাসপোর্টে আসল বাবার নাম গিয়াস উদ্দিন বাদ দিয়ে মামা শাহ আলম ফকিরের নাম ব্যবহার করে সে। এর মধ্যেই চলতি মাসের ১৮ জানুয়ারি দুবাইয়ের ভ্রমণ ভিসা নেয় সে। করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের বাইরে যেতে কোভিড টিকা নিতে হয়। আর গত শনিবার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল মিডফোর্ড হাসপাতালে করোনার দ্বিতীয় ডোজ নিতে আসার সময়ই গ্রেপ্তার হয় সে। মামলার তথ্য বিবরণী অনুযায়ী আসল সোহাগ অটোচালক হলেও তিনি মূলত পেশাদার অপরাধী। এর মধ্যে টিটু হত্যাসহ দুটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সে।
এনআইডির তথ্য সংশোধন ও পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা- প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা প্রথমত আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আসল অপরাধীতে গ্রেপ্তার করলাম। এখন ওই মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা বিষয়টি দেখভাল করবেন। কীভাবে আসল সোহাগের পরিবর্তে নকল সোহাগ আদালতে জামিন চাইল ও কারাগারে গেল?
তিনি আরো বলেন, আদালতে আসামি বদলে ফেলার বিষয়টি ধরতে পারা কঠিন বিষয়। তবে এক্ষেত্রে কারাগার অবশ্যই পারে। কারণ তাদের কাছে ডাটাবেজ আছে ও আসামি শনাক্তকরণেও বিবরণীও সংরক্ষিত থাকে। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রকৃত আসামির আইনজীবী জেনেই নকল সোহাগের জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিল। তার দায় তদন্তকারী কর্মকর্তা নিশ্চয় খুঁজবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়