কিশোরের মৃত্যু : আজমেরী গেøারির দুই চালক কারাগারে

আগের সংবাদ

সিনহা হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত : আদালতে রায় ঘোষণা

পরের সংবাদ

কমিউনিটি সেন্টার

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রিনা বুবু আয়নার সামনে বসে একমনে সাজছে। গায়ে নীল শাড়ি। সাজলে বুবুকে এত দারুণ লাগে আগে জানতাম না। আমি পাশে বসে বলি- ‘কোথায় যাচ্ছিস বুবু?’ হি হি করে হেসে বুবু বলল, ‘আমার বান্ধবী মনিকার বিয়ে। কমিউনিটি সেন্টারে। ওখানে যাব।’ কমিউনিটি সেন্টারের কথা শুনে আমার কৌতূহল বেড়ে গেল। জীবনে কখনো কমিউনিটি সেন্টারের বিয়েতে যাইনি। বুবুকে বললাম, ‘আমাকে নিবি?’ চোখ কপালে তুলে বুবু বলল, ‘মাথা খারাপ? এটা কারো কুলখানি নয়। বিয়ে। তোকে দাওয়াত দেয়নি।’
তবু আমার অস্থিরতা বাড়ে। আমি যেন অবুঝ হয়ে যাই। কমিউনিটি সেন্টারের ভেতরে বিয়ে কীভাবে হয়, সেটা জানতে মরিয়া হয়ে বুবুকে বারবার অনুরোধ করি আমাকেও নেয়ার জন্য। কিন্তু বুবুর এক কথা, ‘কোনোভাবেই সম্ভব নয়রে।’ আমি কেঁদে ফেলি। মা এসে বুবুকে বলেন, ‘ও এত করে বলছে যখন নিয়ে যা।’ বুবু মাকে ধমক দিয়ে বলে, ‘কী যা তা বলছেন! বিনা দাওয়াতে ওরে নিলে আমার মান থাকবে!’
বুবু গিফটের বড় বাক্সটি নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে যাচ্ছে তার বান্ধবীর বিয়েতে। আমার কান্না বাড়তে থাকে। বারবার বুবুর পথ আগলে দাঁড়িয়ে বলি, ‘বুবু, আমাকে নে। নে না। তোর পায়ে পড়ি।’ আমি বুবুর পায়ে পড়ার আগেই সে ঠাস করে আমাকে এক চড় মেরে বলল, ‘খুব বেড়ে গেছিস তুই। ঘরে যা। যা বলছি!’ আমি কাঁদতে কাঁদতে ঘরে আসি। বুবু রিকশায় চেপে বসে তার বান্ধবীর বিয়েতে চলে যায়।
আমি ঘরে এসে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে কাঁদি। হঠাৎ উঠোন থেকে রিনা বুবুর চেঁচানো কণ্ঠ, ‘কইরে রঞ্জু, আয়। তোকে চড় মেরে নিজের কাছে খারাপ লাগছে। আয় রেডি হ।’
আমি রাজ্যের আনন্দ নিয়ে রেডি হই। জিন্সের পুরনো প্যান্ট পরি। আলমারি থেকে সাদা শার্টটি বের করতেই দেখি বগলের তলা ইদুরে কেটে ফেলেছে। বুবু বলল, ‘আর শার্ট নেই তোর?’
আমার যে আর ভালো শার্ট নেই। ভালো শার্ট বলতে এই একটাই। ইদুরে আজ বগলের তলা কেটে ফেলেছে। ছেঁড়া শার্ট গায়ে দিয়েই রিনা বুবুর সঙ্গে বিয়ে বাড়ি রওনা দিলাম। কমিউনিটি সেন্টারের বিয়েতে আজ প্রথম যাব, এটা ভাবতে গিয়ে ইচ্ছে হলো জোরে একটা চিৎকার দেই।
২.
বিশাল কমিউনিটি সেন্টার। দোতলা। সেন্টারের চারদিকে লাল-নীল বাত্তির মালা জ¦লছে। সাউন্ড বক্সে বাজছে হিন্দি গান। সেন্টারের গেটে দুজন গার্ড। তারা অতিথিদের ভালোভাবে চেক করে ভেতরে ঢুকাচ্ছে। বুবুর পেছনে দাঁড়িয়ে আমি। বুবুর হাতে উপহারের বাক্স দেখে গার্ড তাকে ভেতরে ঢুকার অনুমতি দিল। বিপত্তি ঘটল আমার বেলায়। গার্ড কীভাবে যেন দেখে ফেলল আমার শার্টে বগলের তলা ছেঁড়া। তাদের একজন বলল, ‘এই ছেলে, তোমাকে তো দেখে মনে হচ্ছে টোকাই। এখানে আসছো কেন? যাও, ভাগো বলছি।’ বুবু বলল, ‘না না। ও টোকাই হবে কেন! ও আমার সঙ্গে আসছে।’ গার্ড বলল, ‘ম্যাডাম, মিথ্যে বলে ওর জন্য দয়া দেখাবেন না। এসব অনুষ্ঠানে ওরা আজকাল মেহমান সেজে আসে। আমরা সব বুঝি।’
গার্ডদের সঙ্গে তর্কে হেরে গেল রিনা বুবু। সত্যি সত্যি আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এসবের জন্য এই ছেঁড়া শার্ট দায়ী। নিরস মুখে বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম। কমিউনিটি সেন্টারের জানালা দিয়ে উন্নত সব খাবারের ঘ্রাণ আমার নাকে আসছে। ওসব খাবারের প্রতি আমার লোভ নেই। লোভ হলো কমিউনিটি সেন্টারের ভেতরটা কেমন, তা দেখার। অথচ আমাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
মিনিট দশেক পর বুবু মলিন মুখে কমিউনিটি সেন্টারের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। বললাম, ‘কিরে, এত জলদি খাওয়া শেষ?’ বুবু ¤øান গলায় বলল, ‘না। খাইনি। খাব না। চল।’ বুবুকে থামিয়ে দিয়ে বললম, ‘কী বলছিস? বড় লোকের বিয়ে। কত দামি দামি খাবার এখানে। না খেয়ে চলে যাবি? পাগল হইছিস? তোর বান্ধবী তোকে না খেয়ে বের হতে দিল?’ বুবু কাঁপা গলায় বলল, ‘না। মনিকাকে এখনো পার্লার থেকে আনা হয়নি। চলত রঞ্জু!’

৩.
পড়ন্ত দুপুরে বুবুর হাত ধরে রাজপথ বেয়ে আমরা চলে আসছি। হাওয়ায় বুবুর নীল শাড়ির আঁচল উড়ছে আর জলে তার দু চোখ ভিজে যাচ্ছে। আমার এই বোনটা বড় আবেগি। সামান্য ব্যাপারে কেঁদে ফেলে।
রিনা বুবু আমাকে নিয়ে এলো খাবারের হোটেলে। আমরা আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত খেলাম। বুবু বলল, ‘বাড়িতে গিয়ে কাউকে এসব বলিস নারে।’ আমি বললাম, ‘বলব না। আচ্ছা বুবু, তোর বিয়েও কী ওরকম কমিউনিটি সেন্টারে হবে?’ রিনা বুবু বলল, ‘না। ওখানে বড় লোকদের বিয়ে হয়। মনিকারা বড় লোক।’
বুবু কাঁদছে। কেন কাঁদছে, বুঝতে পারছি না।
জোবায়ের রাজু
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়