অনেকেই মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়ান ও সেলফি তোলেন : ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলায় উপচে পড়া ভিড়

আগের সংবাদ

ঘরে ঘরে সর্দি কাশি জ্বর : নমুনা পরীক্ষায় ৮০ শতাংশেরই করোনা > ‘পজেটিভ’ হওয়ার ভয়ে নমুনা পরীক্ষায় অনাগ্রহ

পরের সংবাদ

১০১ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা গত এক বছরে : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহনন প্রবণতা বাড়ছে কেন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মহামারি করোনাকালে গত বছর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এদের অধিকাংশই অনার্স তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষে পড়–য়া। আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটেছে ২২ থেকে ২৫ বছর বয়সিদের মধ্যে। ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক চাপ এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশার ছাপ বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া পুরুষ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে করোনাকালে আর্থিক ও পারিবারিক চাপ বেড়ে যাওয়া।
সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল শনিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জরিপের এ তথ্য প্রকাশ করে সংগঠনটি। প্রায় অর্ধশতাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার তথ্য এবং আত্মহত্যায় জড়িতদের পরিবারের সাক্ষাৎকার নিয়ে পরিচালনা করা হয়েছে এই সমীক্ষা।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিটের পরিচালক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ।
জরিপের তথ্য বলছে, গত বছর ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর সংখ্যা ৬২ জন, যা মোট আত্মহননকারীর ৬১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মেডিকেল কলেজ ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি ১২, যা মোট আত্মহননকারীর ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন, যা মোট আত্মহত্যাকারীর ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা সংখ্যায় ২৩ জন। এক বছরে এত বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা এবারই প্রথম বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই সংখ্যা ৯ জন। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এ সংখ্যাটি ৩ জন।
জরিপে আত্মহননকারীদের বয়সভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২২ থেকে ২৫ বছর বয়সিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তুলনামূলক বেশি। সমন্বয়কৃত তথ্যগুলোর মধ্যে ৬০টি আত্মহত্যার ঘটনা এই বয়সসীমার শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে, যা মোট ঘটনার ৫৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে, ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সি তরুণদের আত্মহত্যার ঘটনা ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ বা ২৭ জন। এছাড়া ২৬ থেকে ২৯ বছর এবং ২৯ বছরের ঊর্ধ্বে এই হার যথাক্রমে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ, যা সংখ্যায় যথাক্রমে ১০টি ও ৪টি।
সাধারণত নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি থাকলেও এবারের জরিপে দেখা গেছে, গত বছর একটা বড় অংশই ছিল পুরুষ শিক্ষার্থী। সর্বমোট ৬৫ জন পুরুষ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে, যা মোট শিক্ষার্থীর ৬৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অন্যদিকে নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ছিল ৩৬ জন বা ৩৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। পুরুষ আত্মহত্যাকারীদের সংখ্যা নারীদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। করোনার মধ্যে সামাজিক, আর্থিক ও পারিবারিক চাপ বেড়ে যাওয়ায় পুরুষ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
মাসভিত্তিক আত্মহত্যা প্রবণতা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিসেম্বর মাসে এই হার সবচেয়ে বেশি ছিল, যা সমন্বয়কৃত ঘটনার ১৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ বা ১৫ জন। সবচেয়ে কম ছিল এপ্রিল মাসে, যা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ বা ২ জন। গ্রীষ্মকালের চেয়ে শীতকালে আত্মহত্যার হার বেশি দেখা যায়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অনার্স পড়–য়া তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার তুলনামূলক বেশি, যা ৩৬ দমমিক ৬৩ শতাংশ। ধারণা করা যায়, এই শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক সামাজিক চাপ বেশি থাকে এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কারণে তাদের মধ্যে হতাশার ছাপ বেশি দেখা যায়। সম্পর্কগত কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে এ পথে ধাবিত হয়েছে ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী। অন্যদিকে মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বেছে নিয়েছে আত্মহননের পথ। পড়াশোনা সংক্রান্ত কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং আর্থিক সমস্যার কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। মাদকাসক্ত হয়ে নির্বিকারে নিজের জীবন হননের পথ বেছে নিয়েছে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া আরো নানাবিধ কারণে আত্মহত্যা করেছেন মোট ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, আত্মহত্যার এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট ভীতিকর। কোভিড-১৯ ভাইরাস নিয়ে আমরা যতখানি আতঙ্কিত, আত্মহত্যা করে মারা যাওয়া অসংখ্য মানুষকে নিয়ে কিন্তু আমরা ততটা চিন্তিত নই। সমীক্ষা বলছে, শিক্ষাসংক্রান্ত যেমন পড়াশোনার চাপ, বিভিন্ন পরীক্ষায় ব্যর্থতা, পরিবারের সঙ্গে অভিমান, প্রেমঘটিত সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতা, একাকীত্ব ইত্যাদি নানাবিধ কারণ আত্মহত্যার জন্য দায়ী।
তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, এই মৃত্যুর মিছিলে প্রতি বছরই নতুন নতুন অসংখ্য তরুণ-তরুণী শামিল হবেন, যেহেতু মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে আমরা উদাসীন। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশের জন্য হওয়া এই বড় ধরনের ক্ষতিরোধ করতে যদি সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিতভাবে কাজ করা যায় এবং প্রতিটি জেলায় আত্মহত্যা সেল গঠন করে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়, তবে অনেকাংশেই আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে না পারাকে আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়ার প্রধান নিয়ামক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ। তিনি বলেন, পত্রিকা বিশ্লেষণ করে এটা স্পষ্ট যে, আত্মহত্যার কারণগুলো বাইরে থেকে যতটা দেখা যাচ্ছে, সমস্যা তার চেয়েও গভীরে। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রয়োজনীয় শিক্ষার সুযোগ অপর্যাপ্ত বিধায়, তাদের জীবনে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে তারা সেটি সামলাতে পারে না। প্রেমে বিচ্ছেদ হলে তারা যেমন ভেঙে পড়ে, তেমনি পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলও তাদের আশাহত করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়