অনেকেই মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়ান ও সেলফি তোলেন : ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলায় উপচে পড়া ভিড়

আগের সংবাদ

ঘরে ঘরে সর্দি কাশি জ্বর : নমুনা পরীক্ষায় ৮০ শতাংশেরই করোনা > ‘পজেটিভ’ হওয়ার ভয়ে নমুনা পরীক্ষায় অনাগ্রহ

পরের সংবাদ

সফল কৃষি উদ্যোক্তা শেরপুরের রেশমা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নাহিদ আল মালেক, শেরপুর (বগুড়া) থেকে : পড়াশোনায় এসএসসির গণ্ডি পার হতে পারেননি। ভাঙনের সংসারে জীবনের হাল ধরতে হিমশিম খেতে হয়েছে। তারপরও অটুট লক্ষ্য নিয়ে নিজের সংসারে সচ্ছলতা আনার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব নিরাপদ খাদ্য ও কৃষি বিনির্মাণে কাজ করছেন তিনি। তিনি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গাড়ীদহ ইউনিয়নের বোংগা গ্রামের এক নারী। তার নাম মোছা. সুরাইয়া ফারহানা রেশমা।
অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসাবে তিনি ২০২০ সালে শেরপুর উপজেলা ও বগুড়া জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন। ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরি করে এখন তার মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া তার খামারে আছে দেশীয় মুরগি, ব্লাক বেঙ্গল ছাগল, ২০টি গরু এবং রাজহাঁস। এছাড়া তিনি নিজের খামারে উৎপাদিত কেঁচো সার জৈব সার হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখছেন। পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সুরাইয়া ফারহানা রেশমা ভোরের কাগজকে জানান, বাবা তাদের কোনো খবর রাখতেন না। তাই মায়ের কাছেই বেড়ে ওঠেন। অভাবের সংসারে অনেক কষ্ট করে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর ১৫ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। বাধ্য হয়েই স্বামীকে তালাক দিয়ে মায়ের কাছে চলে আসি। এরপর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় সুরাইয়া ফারহানা রেশমার সংগ্রামী জীবন শুরু হয়। ধৈর্য এবং সততার সঙ্গে নিজের কর্ম প্রচেষ্টায় এখন অভাবের সেই দিন পাল্টে গেছে তার। ২০১৭ সাল থেকে বাড়িতে কেঁচো সার তৈরি করে বিক্রির টাকায় এখন তার অভাব দূর হয়েছে। তার নানামুখী উদ্যোগ দেখে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের নারীরাও আকৃষ্ট হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, রাসায়নিক সার অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাছাড়া রাসায়নিক সার দিয়ে উৎপাদিত ফসল খেয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত নানান জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রাসায়নিক সার জমিতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাভাবিক স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে। এজন্য তিনি কেঁচো সার তথা জৈব তৈরির উদ্যোগ নেন। ভালো কাজ করতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ও বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এছাড়া ব্লাক সোলজার ফ্লাই বা কালো যোদ্ধা মাছি নামের এক ধরনের পতঙ্গও পালন করছেন। যা পরিবেশবান্ধব এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে সহায়ক।
রেশমা জানান, বর্তমানে প্রতি মাসে ৫ থেকে ৬ টন ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন হয়। প্রতি টন জৈব সার ১০ হাজার টাকা করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করেন। এছাড়া গরু, ছাগল, মুরগি থেকেও মাসে প্রচুর আয় হয়। তিনি নিজেই এসব দেখাশোনা করেন। এছাড়া কয়েকজন অনিয়মিত শ্রমিকও রয়েছেন।
এ ব্যাপারে শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু রায়হান জানান, গাভী পালনের পাশাপাশি রেশমা কোঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এছাড়া দেশীয় মুরগি ও ছাগল পালন করেও তিনি সফলতা পেয়েছেন। আমরা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি। শেরপুর উপজেলা মহিলাবিষযক কর্মকর্তা সুবির কুমার পাল জানান, সুরাইয়া ফারহানা রেশমার বহুমুখী কৃষি উদ্যোগ ও কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন পদ্ধতি নিজে দেখেছি। একজন সংগ্রামী নারীর চেষ্টায় শূন্য থেকে সফলতা অর্জন দেশের কৃষক ও কৃষাণীদের জন্য অনুকরণীয়। মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করে যখন জমির উর্বরতা নষ্ট করছে তখন রেশমার জৈব সার তৈরি এবং জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ সবাইকে চমকে দিয়েছে।
শেরপুর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা বিজয় চন্দ্র দাস জানান, সুরাইয়া ফারহানা রেশমা একজন সফল আত্মকর্মী। তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গাভী পালন শুরু করেন। এরপর গরুর উচ্ছিষ্ট থেকে তিনি কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
এ ব্যাপারে শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোসা. জান্নাতুল ফেরদৌস ভোরের কাগজকে জানান, রেশমার মতো অন্য নারীরাও যদি উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসেন তাহলে পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ কৃষি গড়ে তোলা সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়