অনেকেই মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়ান ও সেলফি তোলেন : ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলায় উপচে পড়া ভিড়

আগের সংবাদ

ঘরে ঘরে সর্দি কাশি জ্বর : নমুনা পরীক্ষায় ৮০ শতাংশেরই করোনা > ‘পজেটিভ’ হওয়ার ভয়ে নমুনা পরীক্ষায় অনাগ্রহ

পরের সংবাদ

মৃত্যুঞ্জয়ের হ্যাটট্রিকে শীর্ষে চট্টগ্রাম : খুলনাকে হারিয়ে জয়ে ফিরল সাকিবের বরিশাল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে গতকাল রাতের ম্যাচে সিলেট সানরাইজার্সকে ১৬ রানে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। এ জয়ের ফলে ৫ ম্যাচ শেষে তাদের পয়েন্ট ৬ পয়েন্ট। অন্য দিকে ২ ম্যাচ শেষে ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইমরুল কায়েসের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সিলেটের বিপক্ষে গতকাল হ্যাটট্রিক করেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের পেসার মৃত্যুজ্ঞয় চৌধুরী। তিনি পর পর ৩ বলে এনামুল হক, মোসাদ্দেক হোসেন এবং রবি বোপারাকে আউট করেন। চট্টগ্রামের ২০২ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৬ উইকেটে ১৮৬ রানে থেমে যায় সিলেটের ইনিংস। বিপিএল ইতিহাসে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী নিপুন বাংলাদেশি হিসেবে তৃতীয় এবং অভিষিক্ত দ্বিতীয় বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড গড়েন। এর আগে বাংলাদেশিদের মধ্যে বিপিএলে হ্যাটট্রিক করেছেন আলআমিন হোসেন ও আলিস আল ইসলাম। গতকাল সিলেটের ইনিংসের ১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে এনামুল বিজয়, চতুর্থ বলে মোসাদ্দেক সৈকত এবং পরের বলে দারুণ এক ইয়র্কারে রবি বোপারাকে আউট করে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেছেন তিনি। যা এবারের বিপিএলের প্রথম এবং সবমিলিয়ে এই টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ হ্যাটট্রিক। ম্যাচ শেষে মৃত্যুঞ্জয় জানিয়েছেন বিপিএলের মতো পর্যায়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই হ্যাটট্রিক করা ক্যারিয়ারের বড় একটি প্রাপ্তি। শুরুতে খানিক নার্ভাস থাকলেও ধীরে ধীরে নিজের স্বরুপে ফিরেই হ্যাটট্রিকের নৈপুণ্য দেখাতে পেরেছেন মৃত্যুঞ্জয়। আগের ৪ ম্যাচে একাদশে জায়গা হয়নি, সাইড বেঞ্চে বসে সময় কাটিয়েছেন। গতকাল একাদশে সুযোগ পান অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। তাকে নিয়ে কেন এতো আলোচনা, সেটিই যেন বুঝিয়ে দিলেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার। দীর্ঘ ইনজুরি থেকে ফিরে সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে আলো ছড়িয়েছেন বল হাতে। গতকাল তো বিপিএল খেলতে নেমেই হ্যাটট্রিক করে বসলেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের এই পেসার।
বিপিএল ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রিক করেছিলেন মোহাম্মাদ সামি। ২০১২ সালের বিপিএলের প্রথম আসরে দুরন্ত রাজশাহীর জার্সিতে এই কীর্তি করেন পাকিস্তানি পেসার। এরপর ২০১৫ সালের আসরে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে বরিশাল বুলসের হয়ে এই কীর্তি গড়েন ডানহাতি পেসার আলআমিন হোসেন।
পরের তিন হ্যাটট্রিক হয় ২০১৯ সালে একই আসরে। যার প্রথমটি করেন ঢাকা ডায়নামাইটসের অভিষিক্তি স্পিনার আলিস আল ইসলাম। এরপর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের পাকিস্তানি পেসার ওয়াহাব রিয়াজ এবং ঢাকা ডায়নামাইটসের আন্দ্রে রাসেল করেন হ্যাটট্রিক। সেই আসরের পর এবার হ্যাটট্রিকের মুখ দেখেন মৃত্যুঞ্জয়।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচ জয় দিয়ে শুরু করার পর টানা দুই ম্যাচ হেরে পয়েন্ট টেবিলের একদম তলানিতে নেমে যায় সাকিব আল হাসানে দল। ঢাকা পর্ব শেষে চট্টগ্রামে গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গতকাল নিজেরা আগে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে ১৪১ রান তুলে খুলনাকে স্পিনের ফাঁদে ফেলে আটকে দেয় ১২৪ রানে। এতে ১৭ রানের জয় তুলে নিয়েছে বরিশাল। চার ম্যাচে এটি তাদের দ্বিতীয় জয়। অন্যদিকে এই ম্যাচ হারের ফলে লিগ পর্বে আরো একবার হারের স্বাদ পেল খুলনা। চার ম্যাচে তাদেরও জয়পরাজয়ের সংখ্যা সমান ২টি করে।
এবার বিপিএল শুরুর আগে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স অধিনায়ক হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজের নাম ঘোষণা করেছিল। কিন্তু হুট করেই নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে এসে অধিনায়ক পরিবর্তন করলো ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। মিরাজের বদলে গতকাল সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে ম্যাচে নাঈম ইসলামকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মূলত কোচ পল নিক্সনের ‘সুনির্দিষ্ট’ কিছু নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এমন বদল এসেছে বলে নিশ্চিত করেছেন দলটির চিফ অপারেটিং অফিসার ইয়াসির আলম।
শুধু অধিনায়কত্বে নয়, চট্টগ্রাম পরিবর্তন এসেছে কোচিং স্টাফেও। প্রধান কোচ পল নিক্সন চার ম্যাচ দায়িত্ব সামলেই দেশে ফিরে গেছেন। তার বদলে বোলিং কোচ শন টেইটকে প্রধান কোচের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দলটির ‘অভ্যন্তরীণ সমঝোতার’ ভিত্তিতেই এমন পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিপিএলের পুরো সময়ের জন্যই চট্টগ্রামের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন নিক্সন। এমনিতে তিনি কাউন্টি দল লিস্টারশায়ারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। হুট করে কাউন্টি দল থেকে ডাক পড়াতে চলে যেতে হয়েছে তাকে। বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রামের চিপ অপারেটিং অফিসার ইয়াসির বলেছেন, বিশেষ পরিস্থিতির কারণেই আমাদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। চট্টগ্রামের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন নাঈম ইসলাম। আর প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করবেন শন টেইট। পল নিক্সন কাউন্টিতে দায়িত্ব পালনের জন্য চলে গেছেন। তার পর্যবেক্ষণে এগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা অভ্যন্তরীণ আলোচনায় মাধ্যমে এই পরিবর্তন করেছি। মিরাজের নেতৃত্বে ঢাকা পর্বে তিনটি ও চট্টগ্রামে একটি ম্যাচ খেলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। তার মধ্যে দুটিতে জয় আর দুটিতে হার। নেতৃত্বের সঙ্গে ব্যাট-বল হাতে পারফর্মও করছিলেন মিরাজ। বল হাতে ৮ উইকেটের পাশাপাশি ব্যাট হাতে করেন ৭০ রান। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে মাত্র ১৬ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছিলেন।

কিন্তু প্রধান কোচ নিক্সনের মনে ধরেনি মিরাজের নেতৃত্ব। তাই যাওয়ার আগে পর্যবেক্ষণ দিয়ে যান টিম ম্যানেজমেন্টকে। তার কথায় নেতৃত্বে বদল আনে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গতকাল টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪১ রান করে বরিশাল। চার পরিবর্তন নিয়ে খুলনার বিপক্ষে খেলতে নামা বরিশালের ব্যাটিং লাইনআপে দেখা যায় ব্যাপক রদবদল। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতেই চমক দেয় বরিশাল। ক্রিস গেইলের সঙ্গে ইনিংস সূচনা করতে পাঠানো হয় লোয়ার অর্ডার ব্যাটার জ্যাকব লিন্টটকে। এ দুজনের জুটি টেকে মাত্র ২.৩ ওভার। ইনিংসের প্রথম ওভারেই কামরুল ইসলাম রাব্বিকে তিন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ঝড়ের আভাস দেন গেইল। শরিফউল্লাহর করা তৃতীয় ওভারে ব্যাক টু ব্যাক বাউন্ডারি লিন্টটও।
কিন্তু টানা তৃতীয় বাউন্ডারি হাঁকানোর চেষ্টায় এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ১০ রান করা লিন্টট। দুই অফস্পিনারের বিপক্ষে সুবিধা করার জন্য সাকিবের বদলে তিন নম্বরে পাঠানো হয় জিয়াউর রহমানকে। কিন্তু তিনি খেলতে থাকেন একের পর এক ডট। একপর্যায়ে ১০ বল থেকে মাত্র ৩ রান ছিল তার নামের পাশে। গতকাল গেইল ছিলেন এক প্রান্তে দেওয়াল হয়ে। তার ব্যাট থেকে আসে ৩৪ বলে সর্বোচ্চ ৪৫ রান। ২ ছয় ও ৪ চারে এ রান করেন গেইল। শুরুতে গেইলের এই ইনিংস না হলে বিপদ বাড়তো বরিশালের।
তিন থেকে সাতে আসে সাকিবকে দেখা গিয়েছিল সাবলীল। এক্সট্রা কাভারে দারুণ চারে খোলেন রানের খাতা। পরের বলেও হাঁকিয়েছিলেন বাউন্ডারি। তবে ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। থিসারা পেরেরার বলে স্কয়ার লেগে আন্দ্রে ফ্লেচারের দারুণ ক্যাচে ফেরেন সাজঘরে। তার ব্যাট থেকে আসে ৫ বলে ৯ রান। সাকিবের আউটের পর তিন উইকেট হারিয়ে পরবর্তী ১৬ বলে বরিশাল তোলে ১১ রান।
এদিন দারুণ ফিল্ডিং করেছে মুশফিকের দল। ফ্লেচার ছাড়াও বাউন্ডারি লাইনে পেছন দিকে লাফিয়ে ইরফান শুক্কুরের ক্যাচ ধরেন মেহেদী হাসান। তিনি বোলিংও করেছেন দারুণ, ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নিয়েছেন কামরুল ইসলাম রাব্বী, থিসারা পেরেরা ও ফরহাদ রেজা।

বরিশালের ১৪২ রানের জবাবে খেলতে নেমে ১৯ ওভারেই ১২৪ রানে গুটিয়ে য়ায় মুশফিকুর রহিমের খুলনার ইনিংস। তাদের ১৭ রানে হারিয়ে দুই ম্যাচ পর জয়ে ফিরে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন বরিশাল। বাঁ-হাতি পেসার মেহেদি হাসান রানা ১৭ রান খরচায় নিয়েছেন ৪টি উইকেট, তার হাতেই উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কারটি।
খুলনার পক্ষে একাই লড়েছেন অধিনায়ক মুশফিক। দশম ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৩৬ বলে করেছেন ৪০ রান। তবে মুশফিকের তাড়াহুড়োর কারণেই মূলত ১৯ ওভারে অলআউট হয়ে গেছে খুলনা।
শেষদিকে ১ উইকেট হাতে রেখে ৭ বলে ১৮ রান প্রয়োজন ছিল খুলনার। শেষ স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে স্ট্রাইকে ছিলেন মুশফিক। মেহেদি হাসান রানার সেই ওভারের শেষ বলে এক রান নিলে, শেষ ওভারে ১৭ রানের সমীকরণের সামনে পড়তেন মুশফিক। স্ট্রাইকও থাকত তার কাছে।
কিন্তু সেই পথে না হেঁটে ১৯তম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারির আশায় স্কুপ করেন মুশফিক। সেটি ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক হয়নি, বল চলে যায় উইকেটরক্ষকের গøাভসে, অলআউট হয়ে যায় খুলনা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়