অনেকেই মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়ান ও সেলফি তোলেন : ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলায় উপচে পড়া ভিড়

আগের সংবাদ

ঘরে ঘরে সর্দি কাশি জ্বর : নমুনা পরীক্ষায় ৮০ শতাংশেরই করোনা > ‘পজেটিভ’ হওয়ার ভয়ে নমুনা পরীক্ষায় অনাগ্রহ

পরের সংবাদ

মান্দার প্রসাদপুর খেয়াঘাটে বাঁশের সাঁকো : ৪০ গ্রামের মানুষের পারাপারে ভোগান্তি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু বকর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর বাজারের কাছে আত্রাই নদে সেতুর অভাবে ৩০ বছর ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন লাখো মানুষ। বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা।
প্রসাদপুর ইউনিয়নের গাড়ীক্ষেত্র গ্রামের মোজাম্মেল হক (৪৮) বলেন, বাল্যকাল থেকেই প্রতিবার নির্বাচন এলে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে এই ঘাটে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রæতি শুনে আসছি। কিন্তু পাস করার পর তাদের আর মনে থাকে না।
এলাকাবাসী জানান, অনেক বছর আগে আত্রাই নদে সারা বছর পানির প্রবাহ থাকত। তখন নৌকায় করে নদ পার হতে হতো। তবে ৩০ বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে নদে পানির প্রবাহ কমে গেলে এলাকাবাসীর চাঁদায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হয় উভয়পাড়ের মানুষকে। প্রতিদিন এ পথে নদের পূর্বপাড়ের প্রসাদপুর, গণেশপুর, মৈনম, কাঁশোপাড়া ইউনিয়ন এবং পশ্চিমপাড়ের প্রসাদপুর ও কুসুম্বা ইউনিয়নের অন্তত ৪০ গ্রামের মানুষ চলাচল করছেন। সাঁকোটির পাশেই প্রসাদপুর বাজার। এই বাজারেই মান্দা উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক অবস্থিত। একটি সেতুর অভাবে বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদ পারাপারে ভোগান্তির শিকার হতে হয় রোগী, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণির মানুষকে। স্থানীয়দের দাবি, প্রসাদপুর খেয়াঘাটে মাত্র ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি সেতু নির্মিত হলে ভোগান্তি আর থাকবে না। নদী পারাপারে নৌকা ও বাঁশের সাঁকোর ঝুঁকি এড়াতে অনেকে বাড়তি তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে মান্দা ফেরিঘাট সদর পার হয়ে প্রসাদপুরে বাজারে যাতায়াত করেন। দীর্ঘদিনের কাক্সিক্ষত এই সেতুটি নির্মিত হলে রোগীদের সহজেই নেয়া যাবে হাসপাতালে। শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হবে না। নিরাপদে দ্রুত সময়ে নদী পার হতে পারবেন উভয়পাড়ের লাখো মানুষ।
সম্প্রতি সরজমিন দেখা যায়, প্রায় ৮০ ফুট দৈর্ঘ্যরে সাঁকোটির দুই পাশে রেলিং নেই। সেটি উঁচু-নিচু অবস্থানে আছে। পায়ে হেঁটে মানুষ চলাচল ছাড়াও অনেকে মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলে সাঁকো পার হন। হেঁটে চললেই সাঁকোটি দোল খায়। মোটরসাইকেল কিংবা বাইসাইকেল চালিয়ে গেলে সেটি আরো বেশি দোলে।
প্রসাদপুর ইউনিয়নের গোটগাড়ী গ্রামের বাসিন্দা মান্দা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুন আরা বলেন, বাড়ি থেকে ভ্যানে করে নদীর পূর্বপাড় প্রসাদপুর খেয়াঘাটে এসে নামি। পরে পায়ে হেঁটে সাঁকো পার হয়ে কলেজে যেতে হয়। নড়বড়ে সাঁকো পার হতে অনেক ভয় লাগে। কিছু দিন আগে আমাদের কলেজের এক ছাত্রী সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় পানিতে পড়ে গিয়েছিল।
স্থানীয় একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও প্রসাদপুর এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, নদী নেই, নালা নেই, মাঠের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে পাকা সেতু। এই বাংলাদেশে এমন সেতুর কথা আমরা অনেক শুনেছি। অথচ যেখানে জরুরি সেখানে সেতু নেই। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও উপজেলা সদর সংলগ্ন এই খেয়াঘাটে সেতু না হওয়া সত্যিই বেদনাদায়ক।
প্রসাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, প্রসাদপুর খেয়াঘাটে একটি সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এখানে একটি সেতু খুবই জরুরি। এখানে সেতু নির্মাণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব।
মান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক মোল্লা বলেন, ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) আবেদন করা হয়েছে। শুনেছি, সেখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। উপজেলা ও জেলার উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সেখানে দ্রুত একটি সেতু নির্মাণের বিষয়ে দাবি তোলা হয়েছে।
এলজিইডির মান্দা উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান মিঞা বলেন, প্রসাদপুর খেয়াঘাটে একটি সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গত বছর প্রসাদপুর খেয়াঘাট এলাকায় এলজিইডির সেতু নির্মাণকাজের সমীক্ষা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সেতুটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পরিদর্শন করে গেছেন। আশা করছি, শিগগিরই প্রকল্পটি একনেকে পাস হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়