অনেকেই মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়ান ও সেলফি তোলেন : ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলায় উপচে পড়া ভিড়

আগের সংবাদ

ঘরে ঘরে সর্দি কাশি জ্বর : নমুনা পরীক্ষায় ৮০ শতাংশেরই করোনা > ‘পজেটিভ’ হওয়ার ভয়ে নমুনা পরীক্ষায় অনাগ্রহ

পরের সংবাদ

ভূমধ্যসাগর মানব পাচারের মৃত্যুফাঁদ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইউরোপে মানবপাচারের সবচেয়ে বড় রুট এখন ভূমধ্যসাগর তীরের দেশ লিবিয়া। যুদ্ধবিধ্বস্ত এ দেশটি ইউরোপে মানবপাচারকারীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ রুটটিই মানবপাচারকারীদের মৃত্যুফাঁদ হিসেবে সারা বিশ্বে ব্যাপক পরিচিত হয়ে উঠেছে। কিছুদিন পরপরই এ রুটে নৌকা ডুবে মৃত্যুর খবর দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমের সংবাদ শিরোনাম হয়। তারপরও থামছে না এ বিপজ্জনক মৃত্যুর মিছিল ও মানবপাচারের জঘন্য খেলা। অনেকেই মরিয়া হয়ে ইউরোপ যাওয়ার সোনালি স্বপ্ন দেখছে আর এ সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে একদল সুযোগসন্ধানী মানবপাচারকারী। গত ২৫ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে ঠাণ্ডায় জমে সাতজন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। এরা নৌকাযোগে লিবিয়া থেকে ইতালির ল্যাম্পাডুসা দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। ওই নৌকায় ২৮০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন, যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশ, মিসর, মালি ও সুদানের নাগরিক। এর আগে ২০২১ সালের জুলাই মাসে তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্টের এক তথ্য মতে, ভূমধ্যসাগরে ৮৪ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও ৪৩ জন ডুবে মারা যায়। উদ্ধার হওয়া ৮৪ জনের মধ্যে বাংলাদেশসহ আরো চারটি দেশের নাগরিক ছিল। এ ঘটনায় আহত হন আরো কমপক্ষে ১১ জন। তখন কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। এছাড়া ২০২০ সালের মে মাসে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে মানবপাচারকারীদের গুলিতে ২৬ জন বাংলাদেশি ও ৪ জন আফ্রিকান নাগরিকের মৃত্যু ঘটে। এ ধরনের সলিল সমাধির খবর প্রতিনিয়ত আসছে।
মানবপাচারকারী চক্র বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে যুবকদের লিবিয়ায় নিয়ে থাকে। এরপর তাদের পণবন্দি করে পরিবারের কাছ থেকে ৭-৮ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করার পর ইতালি বা ইউরোপের কোনো দেশে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে নৌকা বা ট্রলারে তুলে দেয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব অভিবাসীর সলিল সমাধি হয় সাগরে। আবার অনেকের জীবন যায় মানবপাচারকারীদের নির্যাতন-নির্মমতায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, দেশজুড়ে থাকা পাচারকারী চক্রের সদস্যরা ইউরোপে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে লোক সংগ্রহ করে। তারপর সেসব লোককে সড়ক-বিমানপথ মিলিয়ে তিনটি রুটে লিবিয়ায় পাঠায়। সর্বশেষ লিবিয়া থেকে নৌপথে তিউনিশিয়ার উপকূল হয়ে ইউরোপে পাঠায়। ৭-৮ লাখ টাকার অর্থের বিনিময়ে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগে ২ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত। ভিকটিমদের পাসপোর্ট তৈরি, ভিসা সংগ্রহ, টিকেট ক্রয়- সবই এই সিন্ডিকেটের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। ইউরোপে পাচারে চক্রটি তিনটি রুট ব্যবহার করে থাকে। এক্ষেত্রে তারা সড়ক ও বিমানপথ ব্যবহার করে লিবিয়া পৌঁছে দেয়। সর্বশেষ লিবিয়া থেকে নৌপথে তিউনিশিয়ার উপকূল হয়ে ইউরোপে পাচার করে থাকে চক্রটি।
ইউরোপ পাচারকারীদের প্রথম ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’ লিবিয়া। লিবিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মূলত দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। এটি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কিন্তু এই সুযোগ নিয়ে প্রায় এক দশক ধরে মানবপাচারকারী চক্র সেখানে সক্রিয়। লিবিয়ায় দালালরা তাদের একটি ঘরে বন্দি রাখে। এরপর শুরু হয় লোমহর্ষক ভয়ংকর সব ঘটনা। ইউরোপগামীদের ওপর দালাল চক্র চালায় নির্মম নির্যাতন। দফায় দফায় টাকা নেয়ার পর সাগর পথে ইতালির উদ্দেশে পাঠানো হয়। সেখানেও দালাল চক্রের আরেকটি অংশের হাতে আটক থাকতে হয়। যারা তীরে ভিড়তে পারেন তাদের কাছ থেকে আবারো টাকা আদায়ের নির্যাতন চলে। কয়েক দফা টাকা দেয়ার পর ভাগ্য সহায় হলে অবৈধভাবে কাজের সুযোগ পান অনেকে। আবার কেউ কেউ জেলহাজতে স্থান পান। অনেকে ইতালির উপকূলে পৌঁছাতে পারেন আবার অনেক সাগরে ডুবে চিরতরে হারিয়ে যান।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য মতে, বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় কর্মী পাঠানো গত পাঁচ বছর ধরেই বন্ধ। তারপরও কী করে এত লোক বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া যাচ্ছে সেই ঘটনার তদন্ত করা উচিত। গত কয়েক বছরে আইওএম ও ব্র্যাকের প্রত্যাশা প্রকল্প থেকে সাড়ে ৩০০ লিবিয়াফেরত বাংলাদেশিকে সহায়তা দেয়া হয়েছে। ফিরে আসা বাংলাদেশিরা পণবন্দি ও মুক্তিপণ আদায়সহ নিপীড়নের নানা লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিবেদন ও গণমাধ্যমেও এসব কথা উঠে এসেছে। এভাবে যেন আর কোনো অভিবাসী সেখানে প্রাণ না হারায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।
মো. জিল্লুর রহমান
গেণ্ডারিয়া, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়