অনেকেই মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়ান ও সেলফি তোলেন : ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলায় উপচে পড়া ভিড়

আগের সংবাদ

ঘরে ঘরে সর্দি কাশি জ্বর : নমুনা পরীক্ষায় ৮০ শতাংশেরই করোনা > ‘পজেটিভ’ হওয়ার ভয়ে নমুনা পরীক্ষায় অনাগ্রহ

পরের সংবাদ

কারা থাকছে বিএনপির নতুন জোটে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : সরকারবিরোধী আন্দোলনের হাঁকডাক, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিশাল কর্মযজ্ঞ সফল করতে ছোট এবং বড় দলের নেতাদের নিয়ে ‘ঐক্যজোট’ বাঁধতে চলছে বিএনপি। কিন্তু কাদের নিয়ে এই ঐক্য? কে হবেন প্রধান নেতা? এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা। দলটির নেতারা বলছেন, ডান-বাম ঘরানার দলগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হবে এই জোটে। রাখা হবে ইসলামপন্থি কিছু দলও। আর ঐক্যের প্রধান নেতা নির্বাচনের ব্যাপারটি স্পর্শকাতর হলেও বিএনপির হাতেই থাকছে ঐক্যজোটের নেতৃত্ব। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। এই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে কঠোর আন্দোলন ছাড়া কিছু ভাবছে না দলটি। এই আন্দোলন গ্রহণযোগ্য এবং পোক্ত করতে এক সময়ে আওয়ামী লীগের তকমা গায়ে লাগানো কিছু দলকে টার্গেট করে জোট গড়তে চায় দলটি। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে- ছোট দলের জনপ্রিয় নেতাদের জোটে টানতে পারলে রাজপথের আন্দোলন জোরদার হবে। পাশাপাশি নিজেদের সামর্থ্য সম্পর্কে ক্ষমতাসীনদের জানান দেয়া যাবে। এ লক্ষ্যে দলের সঙ্গী ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ভেঙেচুড়ে দাঁড় করানো হবে এক ছাতার তলায়। এ নিয়ে আয়োজন চলছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক মতবিনিময় শুরু করবে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, ভোটের হিসাব পরে। আমাদের লক্ষ্য একটাই, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা। বৃহত্তর জোট গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দলমত নির্বিশেষে জনগণকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করব। এটি একটি প্রক্রিয়া; জোট গঠনের লক্ষ্যে আলোচনা চলছে। মতবিনিময় আমরা প্রকাশ্যেই করব। এ নিয়ে নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি।
ঐক্যজোটে যেসব দল থাকছে : নির্বাচন এবং আন্দোলনের কৌশল ও সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রশ্নে পরস্পরকে দায়ী করে আসছে -ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের নেতারা। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা চাপ এবং সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল দলটিকে। ফলে প্রায় বছর ধরেই এই দুই জোটকে নিষ্ক্রিয় রেখে নতুন ঐক্যজোট গঠনের আয়োজন করেছে বিএনপির। সভা সমাবেশেও বিভিন্ন দলের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন দলটির নেতারা। গোপনে অলোচনা সেরেছেন বেশ কিছু দলের সঙ্গে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জন করা দলগুলোকে রাখা হয়েছে সামনের কাতারে। দলগুলো হলো–বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীকে কৌশলে জোটের বাইরে রাখলেও ভিন্ন কৌশলে তাদেরও হাতে রাখবে বিএনপি।
যেভাবে তৈরি হচ্ছে আলোচনার ক্ষেত্র : বিএনপির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, ঐক্যের আলোচনা চলছে ২ বছর ধরে। ধীরে ধীরে এ প্রক্রিয়া জোরদার হচ্ছে। গত ৩ জানুয়ারি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। দৃষ্টি ছিল রাষ্ট্রপতির সংলাপের দিকে। কারা যোগ দেন এবং কারা বর্জন করেন। ১৭ জানুয়ারি সংলাপ শেষ হলে শুরু হয় নতুন হিসাব। যারা সংলাপে অংশ নেননি তাদের সঙ্গে ফের যোগাযোগ করেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এরপরে লেখা শুরু হয় আমন্ত্রণপত্র। আর ঐক্যের প্রস্তাবের খসড়া চূড়ান্ত রাখা হয় আগেই। গত শুক্রবার

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত হয়।
সূত্র জানায়, মতবিনিময়ের শুরুতে যেসব দল নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেয়নি; তাদের ধন্যবাদ জানাবে বিএনপি। পরে ভবিষ্যতের প্রশ্নে পরিবর্তনের প্রতিশ্রæতি নিয়ে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দলীয় অবস্থান তুলে ধরতে এবং সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ইস্যুতে তাদের মনোভাব জানার চেষ্টা করা হবে। সমীকরণ মিলে গেলে দাবি আদায়ে প্রাথমিকভাবে স্ব-স্ব দলীয় ব্যানারে যুগপৎ আন্দোলনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হবে।
অন্যদিকে, রাজনৈতিকভাবে গুণগত পরিবর্তনের বিষয়টিকে বিএনপিকে কীভাবে দেখছে সেই বিষয়ে নজর থাকবে মতবিনিময়ে সম্মত দলগুলোর। অতীতের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রক্ষমতার ভারসাম্য, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীকরণসহ মৌলিক কিছু বিষয়ে বিএনপির ‘প্রতিশ্রæতি’ জানতে চাইতে পারেন অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা।
ঐক্যের রোডম্যাপ কী : ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ প্রশ্নে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০-তে স্পষ্ট করেই বিএনপির অবস্থান বর্ণিত হয়েছে। তাই ভিশন-২০৩০ সামনে রেখেই দুইটি লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে ঐক্যের ‘রোডম্যাপ’। প্রথমত, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও সুচিকিৎসা এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলা।
এক্ষেত্রে অধিকাংশ দলই জামায়াতে ইসলামীকে ছাড়ার শর্তে ঐক্যে যেতে রাজি বলে জানিয়েছে। সূত্র জানায়, ‘জাতীয় ঐক্যের দাবি ও লক্ষ্য’ শিরোনামে একটি খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিরোধী মতের দলগুলোর কাছেও আলাদা প্রস্তাব চাওয়া হবে। বিপরীত পক্ষ থেকে আসা প্রস্তাবগুলো থেকে বাছাই করে মূল প্রস্তাবনা তৈরি করে তা তুলে ধরা হবে দেশবাসীর সামনে।
প্রস্তাবনায় যা থাকছে : কমপক্ষে ১০টি বিষয়কে সামনে রেখে ঐক্যের প্রস্তাবনায় থাকছে -বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, নিরপেক্ষ সরকার গঠন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শাস্তি প্রত্যাহার এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলা প্রত্যাহার, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ইভিএম বাতিল, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল করা। এ ছাড়া জনসম্পৃক্ত প্রতিটি সেক্টর ধরে পয়েন্ট আকারে আলাদা প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিএনপির তিনজন সিনিয়র নেতাকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে অন্তত ১২ জন সাবেক ছাত্রনেতাও কাজ করছেন। দলের শুভাকাক্ষী বুদ্ধিজীবীদের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে।
কী ভাবছেন ছোট দলের বড় নেতারা : ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত জামায়াতের সঙ্গে জোটগত সম্পর্ক থাকলে বিএনপির নেতৃত্বে কোনো ঐক্য হবে না বলে মত দিয়েছিল কিছু দল। অন্যদিকে, দৃশ্যত অস্বস্তি দেখালেও জোট ও ফ্রন্টের কিছু নেতার সঙ্গে দলটির সুসম্পর্কের বিষয়টি এখন ‘ওপেন সিক্রেট’ মনে করেন অনেকেই। এ নিয়ে সিপিবি বাসদের স্পষ্ট বক্তব্য ছিল- জামায়াত থাকলে তারা আসবে না। তবে সম্প্রতি জামায়াতের নিষ্ক্রিয়তায় তারা ঐক্যের ব্যাপারে ইতিবাচক।
কে হবেন ঐক্যের প্রধান নেতা : বিগত নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ড. কামাল হোসেনকে প্রধান নেতা নির্বাচন করে তার নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেশি-বিদেশি নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বিএনপিকে। ক্ষমতায় গেলে কে হবেন সরকারপ্রধান – ভোটের আগে তা স্পষ্ট করতে না পারা ভুল ছিল বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা। তাই এবারের বৃহৎ ঐক্যের প্রধান নেতা নির্বাচনের বিষয়ে বেশ সতর্ক আলোচনা শুরু হয়েছে দলটির ভেতরে। বিষয়টি স্পর্শকাতর হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা স্পষ্ট করার ব্যাপারে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, বৃহত্তর ঐক্যজোটের নেতৃত্ব বিএনপির হাতেই থাকবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়