লাইসেন্স ছাড়াই ৭ বছর ট্রাক চালায় জসিম

আগের সংবাদ

ফাইভ-জিতে অনাগ্রহ কেন : তরঙ্গ নিলামের শর্ত ও নীতিমালা চূড়ান্ত হয়নি > ‘বুঝে-শুনে আগে বাড়তে চায় বেসরকারি অপারেটররা

পরের সংবাদ

শিশুশিল্পী থেকে নায়িকা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুপালি পর্দায় এমন অনেকেই রয়েছেন যাদের আমরা শুধু নায়িকা হিসেবেই চিনি। কিন্তু নায়িকা হয়েই যে তাদের পথচলা শুরু হয়েছে এমনটা নয়; এর আগেও শিশুশিল্পী হিসেবে জয় করে নিয়েছেন দর্শকের মন। আজ এমনই কয়েকজন নায়িকার কথা বলব যাদের মিডিয়াতে পথচলা শুরু হয়েছে শিশুশিল্পী হয়ে আর নায়িকা হিসেবে জয় করে নিয়েছেন ভক্তদের মন। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রোমান রায়
শাবানা
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা। ১৯৫২ সালে চট্টগ্রামের রাউজান ডাবুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। চলচ্চিত্রে সবাই তাকে শাবানা নামে চিনলেও তার প্রকৃত নাম আফরোজা আক্তার রতœা। চলচ্চিত্রে তার শুরুটা হয়েছিল একজন শিশুশিল্পী হিসেবে। ১৯৬২ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ ছবি দিয়ে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। শিশুশিল্পী হিসেবে তিনি ১৯৬৬ সালে ইবনে মিজান পরিচালিত ‘বনবাসে রূপবান’ ও একই সঙ্গে পার্শ্বচরিত্রে মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘ডাকবাবু’তে অভিনয় করেন। প্রথমবার নায়িকা হয়ে চলচ্চিত্রে তার আগমন ঘটে ১৯৬৭ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘চকোরী’ সিনেমা দিয়ে। এই সিনেমায় তিনি পাকিস্তানি অভিনেতা নাদিমের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন। তারপর তো বাকী ইতিহাস সবারই জানা। অভিনেত্রী শাবানা হয়ে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম একজন জনপ্রিয় জাঁদরেল অভিনেত্রী। ৩৬ বছর চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারে তিনি প্রায় ৩০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। অভিনয় জীবনে বহু ব্যবসাসফল সিনেমা তিনি উপহার দিয়ে ইতিহাস রচনা করেছেন। চলচ্চিত্রে অভিনয়স্বরূপ নয় বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। ১৯৯৭ সালে তার সর্বশেষ সিনেমা আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ মুক্তি পেয়েছিল। এরপর তাকে আর কোনো সিনেমায় দেখা যায়নি। বর্তমানে তিনি স্বামী-সন্তান নিয়ে সুদূর আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

সুচরিতা
১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন ঢাকার সিনেমার গুণী অভিনেত্রী সুচরিতা। তার প্রকৃত নাম বেবী হেলেন। সিনেমায় এসে তার নাম সুচরিতা প্রচার পায়। অসংখ্য জনপ্রিয় ব্যবসাসফল ছবির এই সুঅভিনেত্রীর শুরুটা হয়েছিল একজন শিশুশিল্পী হিসেবে। ১৯৬৯ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে ‘বাবুল’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয়। এরপর তিনি একে একে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন- ‘নিমাই সন্ন্যাসী’, ‘অবাঞ্ছিত’, ‘রং বেরং’, ‘টাকা আনা পাই’, ‘কত যে মিনতি’, ‘রাজ মুকুট’ ছবিতে। ১৯৭২ সালে আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘স্বীকৃতি’ ছবি দিয়ে প্রথমবার নায়িকা হিসেবে অভিষেক ঘটে। অভিনয় জীবনে তিনি প্রায় ১৫০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৭ সালে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘হাঙ্গর নদীর গ্রেনেড’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
অন্তরা
নব্বই দশকের জনপ্রিয় ও ব্যস্ত নায়িকা ছিলেন অন্তরা। সিনেমায় সবাই তাকে অন্তরা নামে চিনলেও তার প্রকৃত নাম হচ্ছে পারভীন আক্তার লাকী। চলচ্চিত্রে তার আগমন ঘটে একজন শিশুশিল্পী হিসেবে। শিশুশিল্পী হিসেবে তিনি ‘নবাব সিরাজউদ্দোলা’, ‘দারাশিকো’, ‘বোনের মতো বোন’ ছবিতে অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে তার অভিষেক ঘটে ১৯৯৩ সালে তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত ‘পাগল মন’ ছবি দিয়ে। নায়িকা হিসেবে প্রথম ছবি দিয়ে সবার মন জয় করে নেন অন্তরা। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। টিভি অভিনেতা মাহফুজ আহমেদের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে নায়িকা অন্তরার বিপরীতে ‘প্রেমের কসম’ ছবি দিয়ে। প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ’র সঙ্গে তার ‘প্রেম সন্ধি’ নামক একটি সিনেমায় অভিনয় করার কথা ছিল। কিন্তু সালমান শাহর মৃত্যুর জন্য পরে সেটা হয়নি। তার অভিনয় জীবনে ছবির সংখ্যা ১৩টি। তার অভিনীত সিনেমাগুলো হচ্ছে- বোনের মতো বোন, পাগল মন, প্রেমের কসম, লেডি র‌্যাম্বো, আমার মা, দোলন চাঁপা, শয়তান মানুষ, ফজর আলী আসছে, বালিকা হলো বধূ, লাঠি, গরিবের অহংকার, নাগ নাগিনীর প্রেম, হাঙর নদী গ্রেনেড। ২০১৪ সালে ৮ জানুয়ারি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হয়ে আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন নায়িকা অন্তরা।

নাহিদা আশরাফ আন্না
বিনোদন বিচিত্রা ফটোসুন্দরী নাহিদা আশরাফ আন্না অভিনয় জীবনে একজন শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেছিলেন। নায়িকা আন্না শিশুশিল্পী হিসেবে ‘মালা তুমি কার’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ‘বিদ্রোহী পদ্মা’ ছবিতে কাজ করেছেন। এরপর তিনি চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয় ২০০৯ সালে ২১ সেপ্টেম্বর এফ আই মানিক পরিচালিত ‘মায়ের হাতে বেহেস্তের চাবি’ ছবি দিয়ে। এই ছবিতে তিনি অভিনেতা ডিপজলের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন। প্রথম ছবির পর নায়িকা হিসেবে আন্নার ব্যস্ততা বেড়ে যায়। একে একে তার অনেক সিনেমা মুক্তি পায়। ‘পিতামাতার আমানত’, ‘মা-বাবার স্বপ্ন’, ‘সন্তান আমার অহংকার’, ‘জীবন নিয়ে যুদ্ধ’, ‘এক পায়ে নূপুর’, ‘বাজাও বিয়ে বাজনা’, ‘হৃদয় জুড়ে’সহ অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বর্তমানে অভিনেত্রী আন্না অভিনয়কে বিদায় জানিয়ে ধর্মীয় কাজে ও সংসার দায়িত্ব পালন করার সঙ্গে নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আন্নাস মেকওভারে সময় দিচ্ছেন।
পূজা চেরি
২০১২ সালে একজন শিশুশিল্পী হিসেবেই চলচ্চিত্রে প্রথম অভিষেক ঘটে হালের ক্রেজ নায়িকা পূজা চেরির। জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত শাহীন সুমন পরিচালিত ‘ভালোবাসার রঙ’ সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন পূজা চেরি। এরপর শিশুশিল্পী হিসেবে তিনি আরো কাজ করেন- ‘তবুও ভালোবাসি’, ‘অগ্নি’, ‘ভালোবাসতে মন লাগে’, ‘ব্ল্যাকমেইল’, ‘কৃষ্ণপক্ষ’, ‘বাদশা দ্য ডন’ ছবিতে। পূজা চেরির নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০১৮ সালে যৌথ প্রযোজনায় অভিমন্যু মুখার্জি পরিচালিত ‘নূর জাহান’ দিয়ে। একই বছর নায়িকা হিসেবে তার আরো দুটো ছবি মুক্তি পায় রায়হান রাফি পরিচালিত ‘পোড়ামন’ ও ‘দহন’। দুটো ছবিতেই নায়ক হিসেবে পেয়েছিলেন সিয়াম আহমেদকে। দর্শকরা তাদের জুটিকে বেশ পছন্দ করেন। ২০১৯ দর্শক জরিপে মেরিল-প্রথম আলোর সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জয় করেন। বর্তমান সময়ে যে কয়জন নির্ভরশীল নায়িকা আছেন পূজা চেরি তাদের মধ্যে অন্যতম একজন।

প্রার্থনা ফারদিন দীঘি
গত বছর দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর পরিচালনায় ‘তুমি আছো তুমি নেই’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় দীঘির। কিন্তু নায়িকা দীঘি হওয়ার পূর্বেই দর্শকরা তাকে শিশুশিল্পী দীঘি হিসেবে চিনে নিয়েছেন। একজন শিশুশিল্পী হিসেবে দীঘি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয় ও তুখোড় অভিনয় শিল্পী।
শিশুশিল্পী হিসেবেই অর্জন করে নিয়েছেন তিনবার রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। তাই বলা যায় ছোটবেলায় তারকার তকমা নিয়ে ফেলেছেন তিনি। যদিও তার নায়িকা হিসেবে অভিষেক মোটেও আশাব্যঞ্জক হয়নি। তবুও বর্তমানে তার হাতে বেশকিছু ভালো ভালো প্রজেক্ট রয়েছে।
শিশুশিল্পী হিসেবে দীঘি ২০০৬ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘কাবুলিওয়ালা’ ছবিতে অভিনয় করেন। প্রথম ছবি দিয়েই বাজিমাত করেন শিশু দীঘি। একের পর এক সিনেমায় অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। দর্শকদের বহু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দেন। ‘চাচ্চু’, ‘দাদীমা’, ‘সাজঘর’, ‘অবুজ শিশু’, ‘কপাল’, ‘১ টাকার বউ’, ‘পিরিতের আগুন জ্বলে দ্বিগুণ’, ‘পাঁচ টাকার প্রেম’, ‘রিকশাওয়ালার ছেলে’, ‘চাচ্চু আমার চাচ্চু’, ‘জীবন মরণের সাথী’, ‘টপ হিরো’, ‘ছোট্ট সংসার’, ‘তোর কারণে বেঁচে আছি’, ‘দ্য স্পিড’, ‘লীলামন্থন’সহ আরো অনেক ছবি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়