লাইসেন্স ছাড়াই ৭ বছর ট্রাক চালায় জসিম

আগের সংবাদ

ফাইভ-জিতে অনাগ্রহ কেন : তরঙ্গ নিলামের শর্ত ও নীতিমালা চূড়ান্ত হয়নি > ‘বুঝে-শুনে আগে বাড়তে চায় বেসরকারি অপারেটররা

পরের সংবাদ

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : মেগা প্রকল্প নিয়ে সংকট-শঙ্কা বাড়ছে নির্মাণ ব্যয়, জনদুর্ভোগ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রীতম দাশ, চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রাম নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বাস্তবায়নাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মেগাপ্রকল্পটি নিয়ে নানা সংকট-শঙ্কা দেখা দিয়েছে। টেকসই সম্ভাব্যতা যাচাই করা ছাড়া প্রকল্পটির কাজ শুরুর পর কয়েক দফায় নকশা পরিবর্তন করাসহ নানা রকম সংকট তৈরি হয়। প্রকল্পের ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও এই পর্যায়ে এসে প্রকল্পটির মেয়াদ এবং ব্যয় দুটোই বাড়ছে। তাতে আরো দীর্ঘায়িত হচ্ছে সীমাহীন জনদুর্ভোগ। চট্টগ্রাম বন্দর, ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে নকশা প্রণয়ন এবং বারবার নকশা বদল ও সমন্বয়ের অভাবেই মূলত এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শহরের যানজট নিরসন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বন্দরকেন্দ্রিক যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত চার লেইনের সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ। পতেঙ্গা এলাকাটি বঙ্গবন্ধু টানেল, আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দর সড়কসহ একাধিক মেগাপ্রকল্পের সংযোগস্থল। কিন্তু এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে সেখানে কোনো ইউ-লুপ, ইউ-টার্ন বা সার্ভিস রোড না থাকায় সুষ্ঠু যানবাহন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম ট্রাফিক বিভাগ। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প প্রণয়ন এবং

কাজ শুরু করে দেয় সিডিএ। বন্দর এলাকায় এই প্রকল্পের কাজ শুরু হলে তাতে আপত্তি জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে দফায় দফায় বন্দরের সঙ্গে বৈঠক এবং প্রকল্পের নকশা বদল করা হয়। এছাড়া কাজ শুরুর সময় ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গেও কোনো সমন্বয় করা হয়নি। সিডিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আউটার রিং রোড নির্মাণ কাজ শেষ করে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু করা হবে। কিন্তু রিং রোড শেষ না করে এ প্রকল্প শুরু হওয়ায় নগরীর বন্দর এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট কমানোর জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন করা হলেও বর্তমান নকশায় এই প্রকল্প যাত্রীদের দুর্ভোগ আরো বাড়াবে বলে শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। এ নিয়ে সংকটে পড়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ। নতুন করে নকশাও প্রণয়ন করতে হচ্ছে। এতে নির্মাণ ব্যয়ের পাশাপাশি সময়ও বাড়ছে।
চট্টগ্রাম শহরের জন্য বিশেষায়িত এ মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের মাঝপথে এসে এক্সপ্রেসওয়ের জন্য নকশা পরিবর্তন, নতুন কম্পোনেন্ট যুক্ত করার বিষয়টি অপরিকল্পিত উদ্যোগের ফল বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তারা বলছেন, টানেল নির্মাণ কিংবা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প শুরুর আগেই এসব বিষয়ে সিডিএর উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল। সিডিএর এ ভুলের কারণে প্রকল্পের সুফল পেতে দেরি হওয়ার পাশাপাশি অর্থের অপচয় হবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের আহ্বায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে আউটার রিং রোড ও নগরীর সঙ্গে সংযোগের বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনায় বড় ধরনের গলদ আছে। এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা অংশের সঙ্গে গাড়ি চলাচল নিয়ে সামনে সংকট তৈরি হবে। কিন্তু সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। এ কারণে সিএমপির পর্যবেক্ষণের পরে এখন নতুন করে নকশা প্রণয়ন করছে। এভাবে সমস্যার সমাধান হবে না। টানেলে গাড়ি চলাচল আরো সহজ করতে হলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ইউলুপ নির্মাণ জরুরি।
ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই এই প্রকল্পের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে বলে জানায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপি। গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর সিএমপির এক সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে সেখান দিয়ে গাড়ি চলাচলে ভবিষ্যৎ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়। সে অনুযায়ী প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে যানজট নিরসনের পরিবর্তে নতুন সংকট সৃষ্টি হতে পারে। সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে সিএমপির কারিগরি টিমের পক্ষ থেকে এক্সপ্রেসওয়ে-সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়। ফলে, অর্ধেক নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং সিডিএ সিদ্ধান্ত নেয়, এক্সপ্রেসওয়ের জন্য ইউ-লুপ এবং ইউ-টার্ন প্রয়োজন। অবশেষে প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পাঁচ বছর পর একটি নতুন নকশা তৈরি করা হচ্ছে।
সিডিএ সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে আরো দুই বছর সময় চেয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ। পাশাপাশি প্রকল্প ব্যয় ১২শ’ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছে। আবেদন মঞ্জুর হলে প্রকল্পের ব্যয় ৩৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াবে চার হাজার ৪৫০ কোটি ৫৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। এ নিয়ে এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রকল্প ব্যয় দ্বিতীয় দফা এবং সময় তৃতীয় দফা বাড়ানো হচ্ছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, কয়েক দফায় নকশা বদল করতে হয়েছে। কিছু জমিও অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে। এছাড়া টোল প্লাজাসহ আরো কিছু আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণের কারণে ব্যয় বাড়ছে। প্রকল্প ব্যয় ৩৬ শতাংশ এবং সময় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়াতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি সিএমপি এক্সপ্রেসওয়ের যানজট নিয়ে যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, সে বিষয়টি আমরা অবগত আছি। যেহেতু ট্রাফিক সিস্টেম ব্যবস্থাপনা সিএমপি নিয়ন্ত্রণ করে, সেজন্য তারা আমাদের কিছু নকশা সংস্কারের কথা বলেছে। আমরা তাদের দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের কারিগরি দল নতুনভাবে ৩টি সড়কের সমন্বয় করার জন্য নকশা প্রণয়ন কাজ করছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি যুক্ত হবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সঙ্গে। একইসঙ্গে এটি সিটি আউটার রিং রোড হয়ে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এ প্রকল্প ব্যয়ে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়।
২০১৯ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে এসে এক্সপ্রেসওয়ের পিলার পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন। প্রায় সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ প্রকল্পের কাজের মেয়াদ ধরা হয় তিন বছর। পরবর্তীতে এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তৃতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সিডিএ। এছাড়া নতুন করে এক হাজার ১৯৯ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সিডিএর প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র‌্যাঙ্কিন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়