লাইসেন্স ছাড়াই ৭ বছর ট্রাক চালায় জসিম

আগের সংবাদ

ফাইভ-জিতে অনাগ্রহ কেন : তরঙ্গ নিলামের শর্ত ও নীতিমালা চূড়ান্ত হয়নি > ‘বুঝে-শুনে আগে বাড়তে চায় বেসরকারি অপারেটররা

পরের সংবাদ

ইএফটিতে প্রতারণার চেষ্টা : গ্রুপ অব কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট টার্গেট ছিল চক্রটির

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ব্যাংকের সার্ভার থেকে তথ্য নিয়ে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিল একটি চক্র। এজন্য দেশের বড় বড় গ্রুপ অব কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট টার্গেট করা হয়। পরে সার্ভারে সংরক্ষিত স্বাক্ষর নকল করে ভুয়া আরটিজিএস ফর্ম তৈরি করা হয়। ব্যাংকের যে শাখায় ফান্ড ট্রান্সফারের আবেদন করা হবে, সেখানকার ম্যানেজারকে প্রলোভনের মাধ্যমে ম্যানেজ করা হয়। এভাবে ওয়ালটন গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা ট্রান্সফার করার চেষ্টা করে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে চক্রের মূলহোতাসহ ১০ সদস্য। তারা ইউনাইটেড গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকেও ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ডিএমপির বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোহাম্মদ তয়াছির জাহান বাবুর নেতৃত্বে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন মূলহোতা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখায় এসএমই সেলস টিম ম্যানেজার

জাকির হোসেন, তার সহযোগী ইয়াসিন আলী, মাহবুব ইশতিয়াক ভূইয়া, আনিছুর রহমান ওরফে সোহান, দুলাল হোসাইন, মো. আসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, জাকির হোসেন, আনোয়ার হোসেন ভুইয়া ও নজরুল ইসলাম। এ সময় তাদের কাছ থেকে আরটিজিএস ফর্ম, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৫ জানুয়ারি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডে (ডিবিবিএল) থাকা ওয়ালটন গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা আরটিজিএস ফর্মে ট্রান্সফারের একটি আবেদন আসে। টাকাটি ‘এন আই করপোরেশন বিডি লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানির এবি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে মতিঝিল শাখায় ট্রান্সফারের আবেদন করা হয়। ডিবিবিএলের বসুন্ধরা শাখার ম্যানেজারের কাছে ট্রান্সফারের আবেদনটি অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওয়ালটন গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে ওয়ালটন থেকে ব্যাংক ম্যানেজারকে বলা হয় তারা টাকা ট্রান্সফারের আবেদন করেননি। পরে ট্রান্সকারের আবেদনটি স্থগিত করায়। এ বিষয়ে ওয়ালটন গ্রুপের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার ডিএমপির ভাটারা থানায় একটি অভিযোগ করা হয়। এই অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রটির ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ আরো জানায়, চক্রের মূলহোতা জাকির হোসেন ডিবিবিএলে চাকরি করার সুবাদে ব্যাংকের সার্ভার থেকে বিভিন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করেন। যেসব অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ বেশি, তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে স্বাক্ষর জাল করে আরটিজিএসের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার পর জাকির গ্রেপ্তারকৃত ইয়াসিন আলীকে স্বাক্ষর জালিয়াতির কাজ দেন। ইয়াসিন আলী স্বাক্ষর জাল করে মাহবুব ইশতিয়াক ভূইয়ার পরিচালিত অ্যাকাউন্ট ‘এন আই করপোরেশন বিডি লিমিটেড’ নামের কোম্পানির অ্যাকাউন্টে, এবি ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা করে জাল ব্যাংক দলিল তৈরি করে। পরে তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অন্য আসামিদের ঠিক করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে ডিবিবিএলের সার্ভার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করছিল।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এ চক্রের কার্যক্রম ব্যাংকের ভেতর থেকে শুরু হয়। এর বাইরে চক্রটির সঙ্গে আরো অনেকে জড়িত থাকতে পারে। আমরা যখন তাদের গ্রেপ্তার করতে যাই, তখন তারা ইউনাইটেড গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল। তিনি বলেন, চক্রটির এক অংশ যে গ্রুপ বা ব্যক্তির টাকা তারা ট্রান্সফার করবে, সেই নির্দিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে। অন্যদিকে চক্রটির আরেকটি অংশ যে শাখায় টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি জমা দেবে সেই শাখার ব্যবস্থাপককে তাদের পক্ষে আনার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ম্যানেজ করে।
চক্রটি এ রকম জালিয়াতি আরো করেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে গ্রেপ্তারকৃতরা এ রকম ট্রান্সফার করেছে কিনা, তা আমরা জানি না। তাদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। এরা কী ধরনের অ্যাকাউন্টকে টার্গেট করে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরা মূলত বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক বা গ্রুপের অ্যাকাউন্টকে টার্গেট করে। এমন প্রতিষ্ঠানকে তারা টার্গেট করে যেখান থেকে অ্যামাউন্ট ট্রান্সফার হলে যেন তাড়াতাড়ি বুঝতে না পারে। কেননা বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিশাল অঙ্কের টাকা থাকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়