তথ্যমন্ত্রী : টিআইয়ের রিপোর্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে

আগের সংবাদ

নীরব মহামারি অসংক্রামক রোগ

পরের সংবাদ

১১ দিন পর খুলেছে শাবির মূল ফটক ও ভবনগুলো : অনশন ভাঙলেও চলছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফারুক আহমদ, সিলেট ব্যুরো, নাজমুল হুদা, শাবি প্রতিনিধি : উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় টানা ১১দিন অবরুদ্ধ থাকার পর বেশ স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গত বুধবার সকালে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক অনশন ভাঙান শিক্ষার্থীদের। এরপর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। একজন শিক্ষার্থী ছাড়া হাসপাতাল থেকে সবাই নিজ আবাসস্থলে ফিরেছেন। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টি মূল ফটকের ব্যারিকেড সরিয়ে ভবনগুলোর তালা খুলে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে রংতুলির আঁচড়ে আঁকা হয়েছে বিভিন্ন আলপনা ও রোড পেইন্টিং। ’কেমন শাবিপ্রবি চাই’ ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে মুক্ত আলোচনার আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা।
খুলে দেয়া হয়েছে মূল ফটক ও ভবনগুলোর তালা : অনশন ভাঙার পর শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলনের

অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষা ভবন, আবাসিক হলের তালা খুলে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এমনকি, গত বুধবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে সরিয়ে নিয়েছে ব্যারিকেড। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে রড দিতে বন্ধ করে বালুভর্তি বস্তা দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে রাখা হয়েছিল, যা স্বাভাবিক হয়েছে। মূল ফটকে কর্মরত এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, রাতে সবকিছু সরিয়ে নেয়া হয়েছে মূল ফটক থেকে। এমনকি, রড কেটে মূল ফটক উন্মুক্ত করা হয়েছে। প্রশাসনিক ও শিক্ষাভবনে প্রশাসনিক কার্যক্রমও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
গতকাল সকালে গেইটের তালা খুলে দেয়া হলে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। গতকাল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনের তালা খুলে দেয়া হলেও কর্মকর্তারা অফিস করেননি। এ বিষয়ে কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম উজ্জ্বল বলেন, স্বল্পসংখ্যক কর্মকর্তা গতকাল ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। কিন্তু ওইভাবে অফিস করা হয়নি।
নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাসে রয়েছে পুলিশ মোতায়েন : ভিসির বাসভবনের সামনে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে আগের মতোই। এ ছাড়া প্রধান ফটকের সামনেও পুলিশ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানরত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি ও সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থেই পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। প্রশাসন থেকে যখন বলা হবে তখন ক্যাম্পাস ছেড়ে যাবে পুলিশ।
অনশন ভাঙার পরও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে অনশনকারীরা : উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে ১৬৩ ঘণ্টা অনশনে থাকায় অসুস্থ রয়েছেন সিলেটের বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ শিক্ষার্থী। যাদের গত বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক অনশন ভাঙান। সর্বশেষ ১৯ জন শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাদের অনশন ভাঙাতে গত বুধবার সকালে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়। অনশন ভাঙানোর পর শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় ৭ শিক্ষার্থীকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গত বুধবার সন্ধ্যায় ৫ শিক্ষার্থী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে রিলিজ নিয়ে চলে আসে। তবে মাহিন শাহরিয়ার রাতুল এপেন্ডিসাইটিস অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা খুব বেশি উন্নতি হয়নি। এ ছাড়া আরো এক শিক্ষার্থীর অবস্থা খারাপ থাকায় রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। পরে তাকেও হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও বেশি বেশি প্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তার। এছাড়া নিয়মিত চেকাপ ও কোনো সমস্যা দেখা দিলেও দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।
উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আঁকা হয়েছে ‘মৃত্যু অথবা মুক্তি’ শীর্ষক আলপনা : অহিংস আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে কিলো রোডে আলপনা আঁকেন শিক্ষার্থীরা। আলপনার জন্য শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার আগেই রংতুলিসহ প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে একত্রিত হতে থাকেন। সন্ধ্যার পরে শিক্ষার্থীরা সেখানে আঁকার জন্য রাস্তা পরিষ্কার করেন। আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র উমর ফারুক বলেন, এখানে যেটা আঁকা হবে তাতে লেখা থাকবে ‘মৃত্যু অথবা মুক্তি’। ওই চিত্রে দেখা যায়, এই লেখার উপরে একটি স্যালাইনের স্ট্যান্ড, তাতে ঝুলানো একটি স্যালাইন। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা যখন অহিংস আন্দোলন করি আমাদের তখনকার অবস্থা, আমাদের মনোবল এবং দৃঢ় প্রত্যয় বুঝানো হয়েছে।
এদিকে, চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরের রাস্তায় প্রতিবাদী স্লোগান লিখেন। গোলচত্বরের অর্ধেক অংশজুড়ে ‘পতন পতন পতন চাই, স্বৈরাচারের পতন চাই’, ‘যেই ভিসি মিথ্যা বলে, সেই ভিসি চাই না’, ‘যেই ভিসি বোমা মারে, সেই ভিসি চাই না’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, শাবিপ্রবি মুক্তি পাক’ ইত্যাদি স্লোগান লেখা হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদী কথা লিখেন শিক্ষার্থীরা।
‘কেমন শাবিপ্রবি চাই’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনা : গতকাল সন্ধ্যায় ‘কেমন শাবিপ্রবি চাই’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, টং পুনঃস্থাপন, ক্যাম্পাসে স্বাধীনভাবে চলাফেরা এবং ভিসির পদত্যাগের আগ পর্যন্ত কিভাবে আন্দোলন চলবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের মতামত দেন। রিপোর্ট লেখার পূর্ব পর্যন্ত (রাত ৮টা) শিক্ষার্থীদের মুক্ত আলোচনা চলছিল।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি রাত থেকে প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে আন্দোলনে পুলিশি হামলা হলে তার প্রতিবাদ জানিয়ে ১৬ জানুয়ারি থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচি, গণস্বাক্ষর কর্মসূচি, আমরণ অনশন, মশাল মিছিল, উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহ, কাফন পরিধান করে প্রতীকী লাশ নিয়ে মিছিল, গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন তারা। শিক্ষকরা, শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মহল ক্যাম্পাসে এসে ও অনলাইনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তবুও কোনো সুরাহা হয়নি। একদফা দাবিতে অনড় থেকে ৭ দিন অনশন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক অনশন ভাঙান শিক্ষার্থীদের। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়