তথ্যমন্ত্রী : টিআইয়ের রিপোর্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে

আগের সংবাদ

নীরব মহামারি অসংক্রামক রোগ

পরের সংবাদ

অবৈধ দখল উচ্ছেদে কঠোর অবস্থানে ডিএনসিসি মেয়র আতিক : বিদেশের আদলে সাজবে খাল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : নগরের খালগুলো দৃষ্টিনন্দন করে বিদেশের আদলে নতুন করে সাজাতে চায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ লক্ষ্যে খালের উপরে অবৈধ দখল উচ্ছেদে কঠোর অ্যাকশনে মাঠে নেমেছেন সংস্থাটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। এরই মধ্যে নগরীর লাউতলা খালের ওপর স্থাপিত ট্রাক টার্মিনালসহ অনেক বহুতল ভবন ভেঙে খাল খননের কাজ শুরু করে নজির স্থাপন করেছেন তিনি। উচ্ছেদ, উদ্ধারে মাঠে সরব রয়েছেন এ নগরপিতা।
দখল-দূষণে খালগুলো হারিয়ে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই নগরজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলজট। যে কারণে স্টর্ম ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বারবার। ওয়াসার কাছ থেকে বুঝে পাওয়া ডিএনসিসির ১৯টি খালের কোথাও গড়ে উঠেছে রিকশার গ্যারেজ, কোথাও দোকান বা মস্ত দালান। দূষণে বিষিয়ে ওঠা অনেক খালের পানির দুর্গন্ধে দম নেয়াই যেন দায়। তবে গত ২৩ জানুয়ারি থেকেই কঠোর উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে উত্তর সিটি করপোরেশন। খাল উদ্ধারে সরকারের কাছে ১০০ কোটি টাকা জরুরি বরাদ্দও চেয়েছেন সংস্থাটির মেয়র আতিকুল ইসলাম।
কাগজ-কলমে ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় খাল রয়েছে ২৬টি। এই খালগুলোর দুই পাড়ের সীমানা নির্ধারণ করা এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালের জায়গাগুলো উন্মুক্ত করতে প্রথমে কাজ করা হচ্ছে। অবৈধ দখল উচ্ছেদের অংশ হিসেবে গত বছরের শুরুতে আশকোনায় বিশাল খাল উদ্ধার করে পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনে ডিএনসিসি। এছাড়াও মিরপুরের সাংবাদিক খাল, ইব্রাহিমপুর, রামচন্দ্রপুর, গোদাগাড়ী, রূপনগর খাল, সাগুফতা খালসহ ১৪টি খাল থেকে ৯ হাজার ৩০০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ জানুয়ারি থেকে নতুন করে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। অভিযানে বসিলার লাউতলা খাল উদ্ধার করেন তিনি। এ সময় খালের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা বিশাল ট্রাক স্টেশন ও বেশ কয়েকটি অবৈধ বহুতল ভবন ভেঙে দেন। কিছু জায়গায় ভাঙচুরে সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দিলেও তা আমলে নেয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে খালের সীমানা নির্ধারণে কারো বৈধ জমি পাওনা থাকলে সেই অনুপাতে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেয়া হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে ডিএনসিসি।
খাল উদ্ধার করে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি খালের রূপ বদলে দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। সে অনুযায়ী কাজ করছে সংস্থাটি। চারটি নদীর সঙ্গে খালগুলোর সংযোগ স্থাপন, হাতিরঝিল থেকে কালাচাঁদপুর, বনানী কবরস্থান, কড়াইল বস্তিতে যাওয়ার নৌপথ তৈরি, সৌন্দর্যবর্ধনে জলাধার নির্মাণসহ কয়েকটি ব্রিজ উঁচু করার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সংস্থাটি।
পাশাপাশি খাল দখলমুক্ত করা, সীমানা নির্ধারণ করে সৌন্দর্যবর্ধনে তিন ধাপে কাজ করবে ডিএনসিসি। সেক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি এই তিনটি ধাপে কাজগুলো করা হবে। প্রথম ধাপে খাল দখলমুক্ত করে বর্জ্য অপসারণ করে পানির প্রবাহ ফেরানো হবে। এরপর খালের পাড়ে গাছ লাগানো, ওয়াকওয়ে ও সাইকেল লেনের কাজ করা হবে দুই ধাপে।
সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে কল্যাণপুরে হাতিরঝিলের অনুকরণে আরেকটি দৃষ্টিনন্দন জলাধার তৈরি করা হবে। সেখানে ডিএনসিসির ১৭৩ একর নিজস্ব জমি রয়েছে। এর মধ্যে ১৭০ একরই অবৈধ দখলে। এছাড়া অ্যাসফল প্ল্যান্টের ৫২ একর জমির বেশির ভাগই বেদখলে ছিল। তবে অভিযানে অ্যাসফল প্ল্যান্টের প্রায় ২০ বিঘা জায়গা উদ্ধার করেছে ডিএনসিসি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সীমানা প্রাচীর দেয়া হবে। এই জমিতে শিগগিরই জলাধারটির নির্মাণকাজ শুরু হবে। সেখানে যুক্ত করা হবে ওয়াকওয়ে ও সুইমিংপুল। এ ছাড়াও রামচন্দ্রপুর খালে ওয়াকওয়ে, সাইকেল লেন ও খেলার মাঠসহ নির্মাণ করা হবে দৃষ্টিনন্দন পার্ক।
ঢাকার ৫৩ খাল পর্যায়ক্রমে নতুন করে সংস্কার করা হবে জানিয়ে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল

ইসলাম বলেন, এ খালগুলো যদি উদ্ধার করা যায়, আর যদি সাজানো যায়, তাহলে বিদেশে না গিয়ে ঢাকায় আসবে সবাই। তাই খালের ওপর কোনো অবস্থাতেই অবৈধ স্থাপনা, অবৈধ দখলকে বরদাশত করা হবে না।
রাজধানীর সব খালের একটির সঙ্গে অন্যটির সংযোগ তৈরি করে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট চালু করার কথা জানিয়ে মন্ত্রী আরো বলেন, এ লক্ষ্যে বিদেশি বিনিয়োগ সংস্থার সঙ্গে একাধিক সভা করে প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। ঢাকা শহরের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতেই হবে।
জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা দেখছি ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হলো সারফেস ড্রেন থেকে পানি খালে অথবা লেকে যেখানেই যাচ্ছে ‘ডেডলক’ হয়ে আছে। অর্থাৎ খাল ঠিকই আছে কিন্তু হয়তো সেটা শুকিয়ে গেছে, নয়তো খালের মধ্যে ভবন করেছে, ট্রাক স্ট্যান্ড, শপিংমল করেছে। এগুলো যারা করল একবারও চিন্তা করেনি যে খালগুলোর উপরে এগুলো করেছে তারা। অথচ এটা বাস্তব সত্য যে যতদিন পর্যন্ত খালের সংযোগ নদীতে নিয়ে না ফেরাতে পারব, ততদিন ঢাকা থেকে জলাবদ্ধতা দূর করা যাবে না। খাল উদ্ধার এবং সীমানা নির্ধারণে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
মেয়র বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে ডিএনসিসি কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন খালের ৪২টি পয়েন্ট দখলমুক্ত করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা গেলেই নগরের চেহারা পাল্টে যাবে। সিএস ও আরএস মানচিত্র দেখে খালের সীমানা নির্ধারণ ও খাল উদ্ধার করা হবে। উত্তর সিটির আওতাধীন খালগুলোয় ৪২টি ‘ডেড স্পট’ চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ সেখানে আগে খাল ছিল এখন আর নেই। শহরের পানির প্রবাহ চলমান রাখতে এই খালগুলো উদ্ধার করা জরুরি।
মেয়র বলেন, আমরা ভেনিসে দেখেছি শহরের মধ্যে ‘রিভারওয়ার্ন’ রয়েছে, যা দেখতে অনেক পর্যটক আসেন। আমরাও সেই রকম কিছু করার চিন্তা করছি। ঢাকার খালের সংযোগগুলো যদি বুড়িগঙ্গা, তুরাগ কিংবা বালু নদে নিতে পারি তাহলে আমরাও এসব খালে নৌকায় করে ঘুরতে পারব।
এক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে মেয়র আতিক বলেন, খাল নিয়ে পরিকল্পনামাফিক কাজগুলো করতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে সামনে। প্রথমত, খালগুলো দখল হয়ে গেছে। শুধু দখল নয় সেখানে দশ তলা, বিশ তলা ভবন উঠে গেছে। তবে সেনাবাহিনী এবং উত্তর সিটি যৌথ জরিপ করেই উদ্ধারকাজ করছে। কোন দিক দিয়ে কে কী দখল করে নিচ্ছে, চারপাশ দিয়ে যে যা-ই দখল করুক না কেন, কেউ পার পাবে না। এমনকি নতুন ওয়ার্ড উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যানের মধ্যে এসব পরিকল্পনা রাখা হয়েছে। সেখানে খাল উদ্ধার, খালের পাড়ে ওয়াকওয়ে, সাইকেল লেন এবং সবুজায়ন প্রকল্প রাখা হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, ওয়াসার ক্যাচপিট এলাকা থেকে পানি সেচে ফেলার ২৩টি পাম্প থাকলেও সেগুলো ঠিকঠাক চলে না। ফলে সিটি করপোরেশনের জনবল দিয়ে খাল পরিষ্কার করা হয়। এর সুফল গত বর্ষায় কিছুটা মিলেছে।
ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর বদরুল আমিন বলেন, খাল উদ্ধারে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে আমাদের সম্পত্তি বিভাগ সীমানা নির্ধারণ করছে। ম্যাজিস্ট্রেটরা সেখানে যাচ্ছেন, সার্ভেয়াররা সিএস-আরএস-পর্চা দেখে মূল খালের সীমানা চিহ্নিত করছেন। এরপর আমরা অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করছি। শিগগিরই অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে খালগুলো মুক্ত করে নতুন করে সাজিয়ে নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়