চট্টগ্রামে রিকশা-বাসের সংঘর্ষে যাত্রী নিহত

আগের সংবাদ

ইসি গঠন বিল ‘তড়িঘড়ি’ পাস : বিএনপি ও জাপার তীব্র বিরোধিতা > সার্চ কমিটিতে থাকবেন একজন নারী সদস্য

পরের সংবাদ

ফেনীতে ড্যান্ডির নেশায় আসক্ত হচ্ছে পথশিশুরা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দ মনির আহমদ, ফেনী থেকে : নেশা জাতীয় দ্রব্য ড্যান্ডিতে আসক্ত হচ্ছে ফেনীর পথশিশুরা। অসাধু বিক্রেতারা অধিক মুনাফার লোভে পথশিশুদের কাছে এসব নেশা জাতীয় দ্রব্য বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া নেশার টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে শিশুরা চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকের তালিকায় এ নেশার নাম না থাকায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জানা যায়, ‘ড্যান্ডি’ নামক এই নেশা জাতীয় দ্রব্যটি রাবার, চামড়াজাত দ্রব্য বা জুতা ও ফার্নিচার তৈরিতে ব্যবহৃত এক ধরনের আঠা ড্যানড্রাইট অ্যাডহেসিভ বা ড্যান্ড্রাইট (গাম)। শহরের বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের দোকানে সলিউশন নামে এসব আঠা জাতীয় দ্রব্য ৮০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করা হয়। ফেনী শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা ট্রাঙ্ক রোড দোয়েল চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যেই নেশা করছে পথশিশুরা।
ফেনী রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকা এসব পথশিশু ঘাড়ে চটের বস্তা নিয়ে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ঘুরে বেড়ায়, কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিক, লোহা কিংবা পুরনো জিনিস বিক্রি করে ও মানুষের কাছে হাত পেতে যে আয় হয়, তা দিয়ে খাবার কিনে খায় এবং বাকি টাকা দিয়ে নেশা করে। নেশায় আশক্ত এই শিশুদের বয়স ৮ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। পলিথিনের ব্যাগ হাতে আরিফ নামে এক পথশিশু জানায়, যেখানে লোকজন কম সেখানে বসে ড্যান্ডি খাইতাম, এখন মাঝেমধ্যে খাই। ড্যান্ডি খাইলে মাথা ঘুরে, ক্ষুধা লাগে না। নেশায় আসক্ত আরেক কিশোর সৌরভ জানায়, আগে আমরা ভিক্ষা করতাম, এখন মানুষ আমাদের ভিক্ষা দেয় না। তাই লেবু-আনারসের গাড়ি থেকে লেবু-আনারস চুরি করি। এসব বিক্রি করে আমরা প্রতিদিন ৬০০-৭০০ টাকা পাই। আমাদের বড় ভাই এলে

তাকে আমাদের চুরির ভাগ দিতে হয়। ভাগ না দিলে সে আমাদের মারে।
শহরের রেলস্টেশন এলাকার এক পথশিশু জানায়, সে তার আরেক বন্ধুর কাছ থেকে দেখে এখন নিয়মিত এ নেশা করে। এ গামের মধ্যে একটা ঘ্রাণ আছে সে ঘ্রাণ নিলে তার অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে। পলিথিনের ভেতরে গাম রেখে, পলিথিনের মুখে নাক দিয়ে এই নেশা করা হয়। এর ভেতরে একটা মিষ্টি ঘ্রাণ থাকে। এটা মাথায় গিয়ে এক ধরনের অনুভূতি তৈরি করে।
ফেনী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ রানা জানান, এ নেশার ফলে এসব শিশু নানা রোগে আক্রান্তসহ দ্রুত কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। তাদের এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনসহ সবাইকে কাজ করতে হবে।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এই গামের ঘ্রাণ শরীরের যেসব জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়, সেসব জায়গার কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আর কোষ নষ্ট হওয়ার কারণে মস্তিষ্কের কাজে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন না থাকায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবুও এমন ঘটনায় পুলিশ বসে নেই। এমন দেখলেই শিশুদের উদ্ধার করে তাদের মা-বাবার হাতে তুলে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ফেনীর সহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ বলেন, এ গামটি মাদকের তালিকায় নেই। সে কারণে এটা নিয়ে আমাদের কোনো ধরনের অভিযান চলমান নেই। এ বিষয়ে খবর পেলে অভিযান পরিচালনা করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়