চট্টগ্রামে রিকশা-বাসের সংঘর্ষে যাত্রী নিহত

আগের সংবাদ

ইসি গঠন বিল ‘তড়িঘড়ি’ পাস : বিএনপি ও জাপার তীব্র বিরোধিতা > সার্চ কমিটিতে থাকবেন একজন নারী সদস্য

পরের সংবাদ

জাফর ইকবালের আশ্বাসে অনশন ভাঙলেন শাবি শিক্ষার্থীরা : প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফারুক আহমদ ও জাহিদুল ইসলাম, সিলেট ব্যুরো : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে টানা এক সপ্তাহ অনশন করার পর অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের আশ্বাসে অবশেষে অনশন ভেঙেছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা থেকে ছুটে যাওয়া শাবির সাবেক এই শিক্ষক দম্পতির অনুরোধে গতকাল বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে অনশন ভাঙেন তারা। এ সময় ক্যাম্পাসে থাকা শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে এসে অনশন ভেঙেছেন অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীরাও। তবে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার সময় জাফর ইকবাল জানান, উচ্চপর্যায়ে তার আলোচনা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে দাবি পূরণের প্রতিশ্রæতি পেয়েছেন। এ কারণেই তিনি ক্যাম্পাসে ছুটে এসেছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর পর ড. জাফর ইকবাল বলেছেন, দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছে সরকারের উচ্চমহল। এই আশ্বাস বাস্তবায়ন করা না হলে সেটি হবে বিশ্বাসঘাতকতা।
এরপর জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, এখানে আসার আগে আমার সঙ্গে সরকারের অনেক উচ্চমহল থেকে কথা বলেছে। আমি তাদের অনুরোধ করব, তারা আমাকে যে কথা দিয়েছেন সে কথাগুলো যেন রক্ষা করেন। আমি আর এই ছাত্রদের ভেতর কোনো পার্থক্য নেই।
আমাকে যে কথাটা দিয়েছেন তা যদি রক্ষা করা না হয়, তাহলে বুঝে নেব তারা শুধু ছাত্রদের সঙ্গে নয়, আমার সঙ্গে এবং এই দেশের যত প্রগতিশীল মানুষ আছে সবার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। কাজেই আমি আশা করব তারা যেন আমাকে যে কথা দিয়েছেন সে কথাগুলো রাখেন।
এর আগে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে সস্ত্রীক রওনা হন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ভোর ৪টার দিকে তারা ক্যাম্পাসে পৌঁছান। এরপর প্রায় দুই ঘণ্টা তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে

কথা বলেন এবং তাদের কথা শোনেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে জাফর ইকবাল জানান, তাকে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিয়ে পাঠানো হয়েছে। অনশন না ভাঙিয়ে তিনি ফিরে যাবেন না।
প্রিয় শিক্ষককে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লæত হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরাও। তার কাছে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও করেন তারা। জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের বলেন, তোমরা কেন তোমাদের জীবন অপচয় করবা? তোমাদের বাঁচতে হবে। তোমরা ইতোমধ্যেই বিজয়ী হয়ে গেছ। সারাদেশের মানুষ তোমাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের ঘুম হারাম করে দিয়েছ। জীবন অনেক মূল্যবান। তুচ্ছ বিষয়ে জীবন অপচয় করা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, গতকাল উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আমার বাসায় আলোচনা হয়েছে। তারা বাসায় এসেছিল। তারা প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। তোমরা যা চাইছ, যে দাবি তোমাদের, সেটা পূরণ হবে। সেটা নিশ্চিত হয়েই আমি এসেছি। তোমাদের উসিলায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঠিক হবে।
একপর্যায়ে জাফর ইকবালের কথায় আশ্বস্ত হয়ে অনশন ভাঙতে রাজি হন শিক্ষার্থীরা। এরপর পানি পান করিয়ে তাদের অনশন ভাঙান শিক্ষক দম্পতি। এ সময় জাফর ইকবাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ইঙ্গিত করে বলেন, শিক্ষার্থীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মানবিক সহায়তা দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। মানবিক সহায়তা দেয়া যদি অপরাধ হয় তাহলে আমি বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি আর্টিকেল লিখে ১০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। সেই টাকাটা আমি তোমাদের দিলাম। আমাকে অ্যারেস্ট করুক।
উপাচার্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের এ রকম মেরুদণ্ডহীন হওয়ার কোনো কারণ নেই। শিক্ষার্থীদের এমন অবস্থা দেখেও যার মন গলে না, নিজের জায়গায় অনড় থাকেন; আমি তাকে অন্তত মানুষ বলতে পারি না, তিনি দানব। উপাচার্য ফরিদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অনশন করার দরকার নেই জানিয়ে জনপ্রিয় এই লেখক বলেন, দানব ভিসির কাছে তোমাদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। দানবের জন্য তোমাদের জীবন বিসর্জন দেয়ার কোনো মানে নেই। দানব শুধু নিজের স্বার্থকে প্রধান্য দিয়েছেন।
অধ্যাপক ইয়াসমিন বলেন, স্টুডেন্টদের গায়ে পুলিশ হাত দেবে, কিন্তু টিচার কিছু বলবে না, টিচার হিসেবে আমার কাছে এর কোনো মাফ নেই। টিচার হওয়ার জন্য আমার যে ক্ষমতা এতে পুলিশ এলে কিন্তু কিচ্ছু করবে না। আমি একজন শিক্ষক। আমি পুলিশ আর স্টুডেন্টদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছি। আমি একদম শকড। এই শক কবে কাটায়ে উঠব, জানি না।
অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত : অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মীর রানা ভোরের কাগজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অনশনরত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে এবং জাফর ইকবাল স্যারের আশ্বাসে আমরা অনশন কর্মসূচি বিরত দিয়েছি। তবে উপাচার্যের পদত্যাগের প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ কয়েকটি অভিযোগ এনে গত ১৩ জানুয়ারি দিবাগত রাতে হলটির ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করেন। এরপর গত ১৫ জানুয়ারি আন্দোলনকারী ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে নতুন মাত্রা পায় আন্দোলন। হলের পুরো প্রভোস্ট কমিটির অপসারণ, অব্যবস্থপনা দূর, ছাত্রলীগের হামলার বিচার চেয়ে ১৬ জানুয়ারি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো শিক্ষার্থী আন্দোলনে শামিল হন। সেদিন উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। তাকে মুক্ত করতে গেলে পুলিশকে বাধা দেয়া হয়। এতে উভয়পক্ষের সংঘর্ষ হয় এবং এতে পুলিশ ও শিক্ষকসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। সে ঘটনায় পুলিশ ‘গুলি বর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগ’ এনে অজ্ঞাত পরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ১৯ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় তারা অনশনে যান; ঘোষণা দেন উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়