নাসির-তামিমার বিয়েকাণ্ডে মামলা : অভিযোগ গঠনের আদেশ ৯ ফেব্রুয়ারি

আগের সংবাদ

ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন চূড়ান্ত : যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন তথ্য, আইসোলেশনের সময়সীমা ৫ দিনের বেশি চান বিশেষজ্ঞরা

পরের সংবাদ

সংসদে রিপোর্ট পেশ আজ : দুয়েক দিনের মধ্যে পাস ইসি গঠনের আইন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বহুল আলোচিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন আইনের রিপোর্ট চূড়ান্ত করেছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত সোমবার জরুরি বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের যোগ্যতা-অযোগ্যতার অংশে দুটি পরিবর্তন এনে বিলটি চূড়ান্ত করা হয়। বিলটির রিপোর্ট আজ বুধবার সংসদে পেশ করা হবে। আর বিলটি দুয়েক দিনের মধ্যে পাস হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে গত রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে সেটি ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হলেও মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গত সোমবার দুপুরে বৈঠকে বসে কমিটি ইসি গঠনের বিলটি চূড়ান্ত করেছে। এ বিষয়ে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার জানিয়েছেন, আজ বুধবার সংসদ অধিবেশনে কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। আইনমন্ত্রী চাইলে বুধবারই বিলটি পাস হতে পারে।
তবে এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ভোরের কাগজকে জানান, কাল (আজ) বুধবার বিলটির রিপোর্ট কমিটির সভাপতি সংসদে উপস্থাপন করবেন। তবে বুধবারই এটি পাস হবে না। কেননা এটি নিয়ে সংসদ সদস্যদের জ্ঞাত করতে বা মতামত আছে কিনা, তার জন্য আমরা কিছুটা সময় দেব। সেজন্য পরবর্তী দুয়েক দিনের মধ্যে বিলটি পাসের জন্য আমরা প্রস্তাব করব।
যদিও বিলটি নিয়ে ব্যাপক বিরোধিতা করেন বিএনপিদলীয় সাংসদ হারুনুর রশীদ ও রুমিন ফারহানা। বিলটিতে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না মন্তব্য করে এটি প্রত্যাহারেরও সুপারিশ করেন তারা। এ বিলের মাধ্যমে আগের সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশনকে ‘বৈধতা’ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তারা বিলটি পাসের আগে সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও জনগণের মতামত নেয়ার দাবি জানান।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির রাজনীতি করে না। আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির শিকার। আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটি দেয় না, এটা জানা উচিত। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ইনডেমনিটি কারা দিয়েছিল?

ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স কারা করেছিল? বরং আওয়ামী লীগই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেছিল। তিনি বলেন, আইনে দুটো জিনিস আছে। একটা হচ্ছে ইনডেমনিটি আর একটা হচ্ছে লিগ্যাল কাভারেজ। দুটো কিন্তু এক জিনিস না। ইনডেমনিটি হচ্ছে মাফ করে দেয়া, তাদের আইনের আওতা থেকে বের করে দেয়া। লিগ্যাল কাভারেজ হচ্ছে আইনের ভেতরে আনা। দফা-৯ এ পরিষ্কারভাবে বলা আছে, কারো কৃতকর্মকে ইনডেমনিটি দেয়া হয়নি।
গতকাল শহীদুজ্জামান সরকার ভোরের কাগজকে বলেন, গত সোমবার কমিটি বিস্তারিত আলোচনা করে যোগ্যতা ও অযোগ্যতার জায়গায় কিছু পরিবর্তন এনেছে। উত্থাপিত বিলে সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা সংক্রান্ত ৫(গ) ধারায় বলা আছে, সিইসি ও কমিশনার হতে গেলে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই ধারায় সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধাসরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য পেশা’ যুক্ত করা হয়েছে। আর অযোগ্যতার ক্ষেত্রে ৬ (ঘ) ধারায় বলা আছে, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সিইসি ও কমিশনার হওয়া যাবে না। এখানে দুই বছরের কারাদণ্ড উঠিয়ে দিয়ে শুধু যেকোনো মেয়াদে কারাদণ্ডের বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ নৈতিক স্খলন ফৌজদারি অপরাধে যে কোনো মেয়াদের সাজা হলেই সিইসি বা কমিশনার হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
বিলটির বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইনে সিইসি ও কমিশনার হিসেবে যাদের নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে, কর্মজীবনে তাদের সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করার দক্ষতা রয়েছে তা বিবেচ্য বিষয় হিসেবে নিতে হবে। এছাড়া কর্মজীবনে তারা কোনো ধরনের দুর্নীতিতে জড়িয়ে না পড়ে শুদ্ধাচার মেনে কাজ করেছেন, তা-ও দেখতে হবে। মূল কথা, এমন ৫ জনকে সিইসি ও ইসি হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে, যারা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও শুদ্ধাচার মেনে কাজ করতে সমর্থ হবেন।
এদিকে বিলটি নিয়ে এত তাড়াহুড়ো করে পাস করার বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন বলেছে, নির্বাচন কমিশন আইন নিয়ে সরকারের এত তাড়াহুড়ো কেন, এতে মনে হচ্ছে ইসি আইন করা নিয়ে সরকারের উদ্দেশ্য ভালো নয়। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) আইন করার মতো সময় এখন নেই। এটি তাড়াহুড়া করে করা যাবে না। এখন সরকার কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করে হঠাৎ আইনটি চূড়ান্ত করেছে। এতে মনে হচ্ছে, ইসি আইন নিয়ে সরকারের উদ্দেশ্য ভালো নয়। আগামী সংসদ নির্বাচনে জয়ের জন্য পছন্দের ইসি নিয়োগ করতে চায় সরকার। ইসির জন্য সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নাম প্রকাশ ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি খসড়ায় নেই। এর মানে নিয়োগ নিয়ে জনগণ অন্ধকারেই থেকে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশেই নিয়োগের সম্ভাবনা বেশি থাকে এতে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের পরের দিন ১৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটির অনুমোদন দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। তার আগেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই আইনটি পাস করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের দিকে হাঁটছে সরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়