নাসির-তামিমার বিয়েকাণ্ডে মামলা : অভিযোগ গঠনের আদেশ ৯ ফেব্রুয়ারি

আগের সংবাদ

ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন চূড়ান্ত : যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন তথ্য, আইসোলেশনের সময়সীমা ৫ দিনের বেশি চান বিশেষজ্ঞরা

পরের সংবাদ

মমির দেশে পল্টু মামা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পল্টু মামা বছরে একবার করে বিদেশ ভ্রমণে যান। এবার তিনি বিদেশ ভ্রমণ শেষে সরাসরি চলে এলেন আমাদের বাসায়। এবার মামা গিয়েছিলেন মিসরে। মিসর আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত। দেশটি নাকি একটি নদীর তীরে অবস্থিত। নদীটির নাম নীল নদ। পাঠ্য বইয়ে পড়েছি মিসর নাকি নীল নদেরই দান। মামা মিসর যাওয়ার আগেই তার মুখে মিসর সম্পর্কে নানান ধরনের রহস্যময় গল্প শুনেছি। মামার মুখে সে সব গল্প শোনার পর থেকে মিসর দেশটির প্রতি আমার জানার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। তাই মামা বলেছিলেন, এবার মিসর যাচ্ছি। মিসর থেকে ফিরেই তোকে আরো অনেক ইন্টারেস্টিং রোমাঞ্চকর গল্প শোনাব। এখন মামা ফিরে এসেছেন।
রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে যখনই ঘুমাতে যাব, ঠিক তখনই পল্টু মামা এলেন আমার শোবার ঘরে। আমি তখনো বিছানা করিনি। আমি মামাকে দেখে বললাম- মামা, ঘুমাওনি?
মামা একগাল হেসে বললেন- না, আজ আর ঘুমাব না, তোকে গল্প শোনাব।
– গল্প!
– হ্যাঁ, গল্প। অনেক দিন হলো তোকে কোনো গল্প শোনাই না।
– আজকে মামা কিসের গল্প শোনাবে?
– মিসরের গল্প! আজকে সারারাত মিসরের গল্প হবে।
খুশিতে আমার মনটা নেচে উঠল। পল্টু মামা নিজে আজ গল্প বলতে চেয়েছেন। এমনিতে তাকে মাঝেমধ্যে জোর করেও গল্প বলানো যায় না; অথচ আজ তিনি স্বেচ্ছায় রাজি হয়েছেন। আমি জানি, মিসর পিরামিডের দেশ। তবে পিরামিড জিনিসটা কী এটা আমার জানা নেই। তাই পল্টু মামাকে প্রথমেই প্রশ্ন করে বসলাম- মামা, পিরামিড জিনিসটা কী? ঐ যে জ্যামিতির ত্রিভুজের মতন আকৃতি। মামা বললেন- পিরামিড হলো প্রাচীন মিসরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য। এটা এক আশ্চর্য আবিষ্কার। আসলে ঐ বিশালাকার পিরামিডের ভেতর প্রাচীনকালে মিসরীয়রা মমি সংরক্ষণ করো রাখত।
– মমি আবার কী?
– মানুষের মৃতদেহকে শুকিয়ে সংরক্ষণ করাকেই মমি বলে।
– মানুষের মৃতদেহ! মামা, এটা কোন নিয়ম? আমরা তো মৃতদেহকে কবর দিই। তারা কেন শুকিয়ে সংরক্ষণ করত?
– শোন, প্রাচীনকালে মিসরীয়রা পরজন্মে বিশ্বাস করত। তারা বিশ্বাস করত মৃত্যুতেই জীবনের শেষ হয় না। একটি মানুষের মৃত্যু হলে কেবল সেটা তার দেহের মৃত্যু হয়; আত্মার নয়। মানুষের আত্মা অবিনশ্বর। তাই, মৃত্যুর পরও যেন আত্মাটি ফিরে আসতে পারে এ বিশ্বাস থেকেই প্রাচীনকালে মিসরীয়রা মৃত ব্যক্তির দেহ যেন পচেগলে না যায়- সে কারণেই মৃতদেহকে মমি প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করে রাখত তারা। আর এ প্রক্রিয়ার ফলে মৃতদেহগুলো শত শত বছর সংরক্ষিত থাকত। কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল, আত্মা ফিরে এলে দেহের মধ্যেই ফিরে আসবে। তাই দেহটা সংরক্ষণ করে রাখা অতি জরুরি।
এ কথা শুনে আমার খানিকটা ভয় হতে লাগল। তার মানে এতদিন যে সব পিরামিডের ছবি বইয়ে বা টেলিভিশনে দেখেছি আসলে ওগুলোতে মানুষের মৃতদেহ থাকে! কিন্তু এতদিন ধরে মৃতদেহগুলো কীভাবে সংরক্ষিত থাকে? পচে-গলে তো যাওয়ার কথা।
আমি মামাকে প্রশ্ন করলাম- মামা, মৃতদেহ তো পচে-গলে যাওয়ার কথা। সেগুলো কী পচে-গলে যায় না?
মামা বললেন- না, মমি হচ্ছে প্রাচীন মিসরের এক আশ্চর্যময় আবিষ্কার। পুরো মমি করার প্রক্রিয়াটিই বিজ্ঞানভিত্তিক। মমি করার ক্ষেত্রে মিসরীয়রা বিভিন্ন প্রকারের মসলা, মোম, ব্যান্ডেজ, কাপড় এবং রেজিনের ব্যবহার করতো। মমি প্রক্রিয়ার উপকরণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল রেজিনের।
– মামা, রেজিন কী?
– রেজিনের রয়েছে আশ্চর্য রকমের গুণাগুণ। প্রাচীনকালে মিসরীয়রা মমি করতে রেজিন ব্যবহার করত। মমি করার ক্ষেত্রে রেজিনই ছিল প্রধান উপকরণ। কারণ, এই রেজিনের গুণেই মৃতদেহের চামড়া শুকাতে পারত না। এতে চামড়ার পচনরোধ হতো। আর সে কারণেই মমিটি বছরের পর বছর অক্ষত থাকত। এমনকি এই রেজিন ব্যবহারের ফলেই মমিগুলোতে দুর্গন্ধও ছড়াত না। তাই প্রাচীনকালে মিসরীয়রা মমি করার ক্ষেত্রে পুরো মমিটিকে কয়েক দফায় সম্পূর্ণ রেজিন তরলে ভিজিয়ে নিত। আর এই রেজিন পাওয়া যেত পাইন গাছের আঠা থেকে।
মিসরের এসব অদ্ভুত ও রোমাঞ্চকর গল্প শুনে মিসর দেশটি সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহ যেন আরো বেড়েই যাচ্ছে। যদিও মমির কথা শুনে আমার সামান্য ভয় হচ্ছে, তবুও কেন যেন আমার মিসর দেশে গিয়ে মমি দেখার একটা গোপন ইচ্ছে হতে লাগল মুহূর্তের মধ্যেই। আমি একপর্যায়ে পল্টু মামাকে বললাম- মামা, মমি কি দেখা যায়? মামা বললেন- হ্যাঁ, অবশ্যই দেখা যায়।
– সত্যি! তুমি দেখেছ?
– হ্যাঁ, দেখছি।
– কীভাবে দেখলে? পিরামিডের ভেতর প্রবেশ করেছিলে বুঝি?
– না। জাদুঘরে দেখেছি।
– জাদুঘরে মমি থাকে নাকি? এটা আবার কোন জাদুঘর?
– কায়রোর ন্যাশনাল মিউজিয়ামে।
– এটা আবার কোথায়?
মামা সামান্য হাসলেন। তারপর বললেন- ওরে বোকা, কায়রো হচ্ছে মিসরের রাজধানী। আর ওখানেই মিসরের জাতীয় জাদুঘর রয়েছে। সে জাদুঘরে গেলেই মমি দেখতে পাওয়া যায়।
মমি দেখার ইচ্ছেটা যেন আরো প্রবল হয়ে উঠল আমার ভেতরে। আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে পল্টু মামাকে বললাম- মামা, আমাকে কায়রোর জাদুঘরে নিয়ে মমি দেখাবে?
মামা আমার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন- মমি দেখতে চাও তো? অবশ্যই দেখাব। তুমি আর একটু বড় হও, তারপরই তোমাকে নিয়ে যাব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়