নাসির-তামিমার বিয়েকাণ্ডে মামলা : অভিযোগ গঠনের আদেশ ৯ ফেব্রুয়ারি

আগের সংবাদ

ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন চূড়ান্ত : যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন তথ্য, আইসোলেশনের সময়সীমা ৫ দিনের বেশি চান বিশেষজ্ঞরা

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক : মারামারি করে ও সংক্রামক রোগে ৯ জেব্রার মৃত্যু

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২২ , ৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি : গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে মারামারি করে চারটি এবং অন্যান্য পাঁচটি জেব্রা ইনফেকশাস ডিজিজে (সংক্রামক রোগ) মারা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে পার্কের ঐরাবতী বিশ্রামাগার মিলনায়তনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ বিশেষ মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও সাবেক চিফ ভেটেরিনারি অফিসার ডা. এ বি এম শহীদুল্লাহ।
ডা. এ বি এম শহীদুল্লাহ জানান, হঠাৎ করে গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে জেব্রাগুলো মারা গেছে। এ মুহূর্তে আটটি প্রেগন্যান্ট জেব্রা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে। মারা যাওয়া জেব্রাগুলোর মধ্যে মাদি ৭টি ও ২টি পুরুষ। পার্কে বর্তমানে জেব্রা রয়েছে মোট ২২টি। এর মধ্যে সাতটি মাদি ও ১৪টি পুরুষ জেব্রা রয়েছে।
জেব্রার নিরাপদ আবাসনের জন্য মোট ১০ দফা সুপারিশ হলো- এ জেব্রাগুলোকে আলাদা করে রাখতে হবে। যেখান থেকে ঘাস দেয়া হতো সেখান থেকে ঘাস সরবরাহ বন্ধ আপাতত রাখতে হবে। যেসব ব্যাকটেরিয়ার ভ্যাকসিন নেই সেসব ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচাতে খাবারের সঙ্গে

এন্টিবায়োটিক পাউডার ব্যবহার করতে হবে। খাবারগুলো টুকরো করে কেটে ট্রে-র মধ্যে পানিতে করে দিতে হবে।
আগে কেন মারামারি করেনি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পুরুষ জেব্রাগুলোর মধ্যে কোন প্রাণিটি আগে প্রজনন করবে সেজন্য নিজেদের মধ্যে মারামারি লেগে যায়। চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্কেও এ রকম ঘটনা ঘটে থাকে; এটি নতুন নয়।
৫ সদস্যের এ বোর্ডের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের প্রফেসর ডা. রফিকুল আলম, গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উকিল উদ্দিন এবং ভার্চুয়াল প্রক্রিয়ায় অংশ নেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি অনুষদের প্রফেসর ডা. আবু হাদী নূর আলী খান, ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রফেসর ডা. কাজী রফিকুল ইসলাম, সাফারি পার্কের চিকিৎসক জুলকার নাইন।
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল কবির। তিনি বলেন, সাফারি পার্কে চিকিৎসক জনবল কম। প্রাণী চিকিৎসায় পাঁচজনের একটি সেটআপের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি নমুনা পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। বেশির ভাগ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তা থেকেই মেডিকেল বোর্ড উল্লিখিত কারণগুলো চিহ্নিত করেছেন।
নতুন বছরের শুরুর মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ৯টি জেব্রা মারা গেছে। পার্কের হিসাব অনুযায়ী এত অল্পসময়ে প্রায় এক তৃতীয়াংশ জেব্রার মৃত্যু হয়েছে। সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান জানান, পরীক্ষাগারগুলো থেকে কোনোটা ব্যকটেরিয়া, কোনোটা করোনার কারণ, কোনোটা খাদ্যে কীটনাশকের উপস্থিতিসহ নানা বিষয় চিহ্নিত করেছেন। তবে আইসিডিডিআরবি ল্যাব থেকে করোনা নেগেটিভ এসেছে। আগে জেব্রার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, জেব্রার গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এবং এসব উপসর্গ দেখা যাওয়ার ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে জেব্রা মারা যাচ্ছে। ২ জানুয়ারি থেকে জেব্রা মারা যায়। কয়েকটি অসুস্থ জেব্রা চিকিৎসা দেয়ার পর সুস্থও হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাণিগুলোর জন্য ময়মনসিংহ এলাকা থেকে ঘাস আনা হয়। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ঘাস ধুয়ে বাকি জেব্রাগুলোকে খাওয়ানো হচ্ছে। তারপরও কয়েকটি জেব্রা মারা গেছে। আটটি জেব্রা গর্ভবতী রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কোনো ধরনের সংক্রমণ হয় কিনা তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
পার্কসূত্র জানায়, পার্কের যাত্রা শুরুর প্রথম থেকেই জেব্রা পালে নতুন অতিথির সংখ্যা যুক্ত হচ্ছিল। গত কয়েক বছর যাবত বিশেষ করে করোনার সময়ে জেব্রার অধিকতর প্রজনন ঘটে। যেভাবে জেব্রার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল তাতে কর্তৃপক্ষ অনেক আশাবাদী ছিলেন। দেশের চাহিদা মিটিয়ে জেব্রা বিদেশেও রপ্তানির একটা সম্ভাবনা ছিল। পার্কের অন্যসব প্রাণির মধ্যে জেব্রার প্রজনন ছিল আশাব্যঞ্জক। বিভিন্ন সময় জেব্রার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে এবং অল্পসময়ের ব্যবধানে মৃত্যুর কারণগুলো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সবশেষ পার্কে ৩১টির বেশি জেব্রা ছিল। গতকাল মঙ্গলবারের বৈঠকের পর পরীক্ষাগারের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সতর্কতামূলক বাড়তি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়