নাসির-তামিমার বিয়েকাণ্ডে মামলা : অভিযোগ গঠনের আদেশ ৯ ফেব্রুয়ারি

আগের সংবাদ

ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন চূড়ান্ত : যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন তথ্য, আইসোলেশনের সময়সীমা ৫ দিনের বেশি চান বিশেষজ্ঞরা

পরের সংবাদ

প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা : শ্রীমঙ্গলে বধ্যভূমি দখল করে ঘর নির্মাণের চেষ্টা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিকুল চক্রবর্তী, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সিন্দুরখান বাজারসংলগ্ন জয়বাংলা বধ্যভূমি এবার দখল করে নিচ্ছে উপজেলার সিন্দুরখান চা বাগানের কিছু চা শ্রমিক।
গত সোমবার সকালে রাজঘাট ইউনিয়নের সিন্দুরখান বাজারসংলগ্ন জয়বাংলা বধ্যভূমিতে শতাধিক চা শ্রমিক দখল নিতে আসে। এ সময় তারা সিন্দুরখান ও রাজঘাট চা বাগানের ভূমিহীন চা শ্রমিকের নামে বধ্যভূমিতে একটি ব্যানার টাঙায়।
এদিকে বধ্যভূমির জমি দখলের সংবাদ পেয়ে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশসহ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নেছার উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে আপত্তি দিলে কিছুক্ষণের জন্য তারা কাজ বন্ধ করে দেয়। প্রশাসনের লোকজন চলে আসার পর দুপুরে তারা আবারো তা দখলে যায়।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, জয়বাংলা বধ্যভূমিতে ঘর নির্মাণ করার জন্য তারা মাটির নিচ থেকে বাঁশের মোড়া বা শিকড় উত্তোলন করছে। অনেকে অন্যপাশ থেকে মাটি এনে ভিটা তৈরির কাজ করছে। কেউ ঘর তৈরি করার জন্য বাঁশ কাটছে।
এ সময় সিন্দুরখান চা বাগানের লিটন নায়েক জানায়, এটি চা বাগানের জমি। এখানে বাঁশঝাড় ছিল। আমাদের বাসস্থানের সংকট। তাই আমরা এই জায়গা দখল করে আমাদের বাসস্থান তৈরি করছি। সিন্দুরখান চা বাগানের সরদার পরিতোষ বুনার্জি জানান, বাগান কর্তৃপক্ষকে বারবার বলার পরও তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে না। এক ঘরে বাবা-মা, নিজে, নিজের স্ত্রী ভাই-ভাইয়ের স্ত্রী, ছেলে-ছেলের স্ত্রীসহ বসবাস করছে। নিরুপায় হয়ে তারা এই জায়গা দখল করে বাড়ি তৈরি করছে। এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কুমুদ রঞ্জন দেব বলেন, খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। আপত্তি দেয়ার পরও তারা বধ্যভূমিতে কাজ করছে। প্রশাসনের বাধাও তারা মানেনি। তিনি জানান, বধ্যভূমিতে সরকারি অর্থায়নে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কোনো একটি চক্র এর পেছনে রয়েছে। সাধারণ শ্রমিকদের দিয়ে এ চক্র বধ্যভূমির জমি দখল করাচ্ছে। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিময় জায়গাটি রক্ষার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
সিন্ধুরখানের প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা ডা. রতিকান্ত রায় জানান, ১৯৭১ সালে এই জায়গাটি ছিল বিশাল বাঁশঝাড়। নির্জন ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ায় এই জায়গাটিকে মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করার জন্য বেছে নেয় হানাদার পাকিস্তান বাহিনী। তিনি জানান, হানাদার বাহিনী ও দেশীয় রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষকে ধরে নিয়ে মুক্তিবাহিনীর তথ্য চাইত। তথ্য না হলে বড় অফিসার বলত ‘এদের জয় বাংলামে বেচে দেও’।
অর্থাৎ জয়বাংলায় বিক্রি করে দাও। তখন এই বাঁশঝাড়ে নিয়ে তাদের হত্যার পর ছোট ছোট গর্ত করে লাশ পুঁতে রাখত। স্বাধীনতার পর এই বধ্যভূমির নামকরণ করা হয় জয়বাংলা বধ্যভূমি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রিপন রায় জানান, এই জায়গাটি আগেও ফিনলে টি কোম্পানি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এখানে প্লান্টেশন করতে চেয়েছিল। বুলডোজার চালিয়ে তখনই বাঁশঝাড় উপড়ে ফেলেছিল। স্থানীয় বাসিন্দা, মুক্তিযোদ্ধা ও গণমাধ্যমকর্মীদের চাপে তারা সেবার সরে যায়।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, বাসস্থান সংকট হলে সেটা বাগান কর্তৃপক্ষ দেখবে। বধ্যভূমির জায়গা কারো দখল করার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়