নাসির-তামিমার বিয়েকাণ্ডে মামলা : অভিযোগ গঠনের আদেশ ৯ ফেব্রুয়ারি

আগের সংবাদ

ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন চূড়ান্ত : যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন তথ্য, আইসোলেশনের সময়সীমা ৫ দিনের বেশি চান বিশেষজ্ঞরা

পরের সংবাদ

পেপারলেস কাস্টমস কতদূর : এখনো অটোমেশনের বাইরে স্থলবন্দরগুলো > ম্যানুয়ালিই চলছে পণ্য খালাস কার্যক্রম > পদে পদে ভোগান্তির অভিযোগ ব্যবসায়ীদের

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আলী ইব্রাহিম : বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেছে। এই পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকতে পেপারলেস কাস্টমসের বিকল্প নেই। কিন্তু কাস্টমসে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হচ্ছে। নব্বই দশক থেকে বাংলাদেশ কাস্টমসকে অটোমেটেড করার দাবি উঠলে আজও পুরোটা অটোমেশনের আওতায় আসেনি। আগে যেসব কাজ রেজিস্টার মেইনটেইন করে হতো এখন কাস্টম হাউসগুলোতে তা কম্পিউটারে হয় বলেও দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। আদতে অটোমেটেড হয়নি বাংলাদেশ কাস্টমস। এখনো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র থেকে শুরু করে আমদানির ডকুমেন্ট চেক করতে গেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হতে হয়। প্রশ্ন উঠেছে, আরো কতটা সময় পেরোনোর পর বাংলাদেশ কাস্টমস পেপারলেস হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, আমদানি-রপ্তানি সহজ করতে নব্বই দশকে বাংলাদেশ কাস্টমসকে অটোমেশনের আওতায় আনার দাবি ওঠে। গত ত্রিশ বছরেও পুরোপুরি ডিজিটালাইজড হয়নি কাস্টমসের কার্যক্রম। সর্বশেষ ২০১৩ সালে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে যুক্ত হয় বৈশ্বিক অনলাইন সিস্টেম অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যার। বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশ এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে কাস্টমসের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন করে। পরবর্তী সময়ে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া অনলাইনের আওতায় আনতে বিশ্বব্যাংকের অধীনে বাংলাদেশে রিজিওনাল কানেকটিভিটি প্রকল্প-১ চালু করার উদ্যোগ নেয় সরকার। এতে কাস্টমস আধুনিকীকরণ ও এনএসডব্লিউ বাস্তবায়নে ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তায় দেশে চালু হয় ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (এনএসডব্লিউ)। ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত পারমিট, লাইসেন্স, সার্টিফিকেট ও শুল্ক ঘোষণা পদ্ধতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেয়া হবে এবং এটি ব্যবহারও খুব সহজ হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে একটি ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো ব্যবস্থা চালু করা হবে। এতে কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনের মাধ্যমে শুল্ক ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য প্রয়োজনীয় আমদানি-রপ্তানিসহ যাবতীয় তথ্য এক স্থানে জমা দেয়া যাবে। এতে সময় ও খরচ কমে আসবে। কিন্তু গত চার বছর ধরে এই প্রকল্প নানা প্রক্রিয়ার মধ্যে গেলেও এখনো বাস্তবায়ন করতে পারেনি এনবিআর। এর আগে ২০১৮ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী

আবুল মাল আব্দুল মুহিত ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো বাস্তবায়ন করতে আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ৩৬ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিও সই করেন।
কাস্টমসের কার্যক্রম অনলাইনের আওতায় আনতে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (এনএসডব্লিউ) বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠানের অনলাইন অবকাঠামো নেই। আবার কারো থাকলেও অনলাইন প্রক্রিয়া কার্যকর নয়। এই পরিস্থিতিতে আমরা ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো বাস্তবায়নে কাজ করছি। আশা করছি, শিগগিরই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কাস্টমসের বর্তমান অটোমেশন পদ্ধতি হচ্ছে আদতে রেজিস্টার খাতা ছেড়ে কম্পিউটারে এন্ট্রি করার মতো। এখনো দেশের দুয়েকটি বড় শুল্ক স্টেশন ছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে চলছে। এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ফাইল টানাটানির যুগের অবসান হয়নি এখনো। বাংলাদেশ কাস্টমসকে পুরোপুরি অটোমেশনের আওতায় আনতে মানসিকতার পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি জরুরি। কারণ কাস্টমস অটোমেশনের আওতায় এলে হয়রানি বন্ধ হবে। সেই সঙ্গে অসাধু কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের অনৈতিক আয়ের উৎসও বন্ধ হয়ে যাবে। তবে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলাতে হলে বাংলাদেশ কাস্টমসকে অটোমেশনের আওতায় আনা জরুরি।
এ বিষয়ে কথা হয় বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, কাস্টমসের অটোমেশন আদতে ম্যানুয়াল পদ্ধতির কম্পিউটার ভার্সনের মতো। অর্থাৎ আগে যেখানে রেজিস্টারে এন্ট্রি করা হতো এখন কম্পিউটারে এন্ট্রি করা হয়। বাংলাদেশ কাস্টমসকে পুরোপুরি অটোমেশনের আওতায় আনতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (এনএসডব্লিউ) নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এই প্রকল্প নেয়ার পর দেখা দেয় আইনি জটিলতা। আইন না করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো- কাস্টমসকে অটোমেটেড করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। যার কারণে এখনো বাস্তবায়িত হয়নি এই প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ পেপারলেস কাস্টমস প্রতিষ্ঠা আরো সহজ হতো বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
এনএসডব্লিউ সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৫টি মডিউল বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কারিগরি কাজের জন্য সফটওয়্যার কোম্পানির কাছে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া যাচাই-বাছাই শেষ করে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করা হবে। তবে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে আরো ৮-৯ মাস সময় লাগতে পারে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট এক কাস্টমস কর্মকর্তা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- কাস্টমসের কার্যক্রম পুরোপুরি অনলাইন ভিত্তিক না হওয়ার কারণে ভোগান্তি আর হয়রানি কমছে না। এতে অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। দিনের পর দিন কাস্টম হাউসে পণ্য আটকে আছে। অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এতে পণ্য পরিবহনের খরচও বাড়ছে। সব মিলিয়ে এর প্রভাব পড়ছে আমদানি-রপ্তানিতে। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থার প্রত্যয়নপত্র পেতেও দিনের পর দিন সময় ব্যয় হয়। সব মিলে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কাস্টমসের পুরো অটোমেশনের আওতায় আনতে না পারলে ব্যবসায়িক সমৃদ্ধি দূর হবে বলেও মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণ করছে। এই পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আর আমদানি-রপ্তানি সহজ করতে কাস্টমসের কার্যক্রম পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক হতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো- পেপারলেস কাস্টমস ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ করা সম্ভব হবে না বলেও মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়