নাসির-তামিমার বিয়েকাণ্ডে মামলা : অভিযোগ গঠনের আদেশ ৯ ফেব্রুয়ারি

আগের সংবাদ

ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন চূড়ান্ত : যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন তথ্য, আইসোলেশনের সময়সীমা ৫ দিনের বেশি চান বিশেষজ্ঞরা

পরের সংবাদ

পদদলিত হয়ে ৮ ফুটবল অনুরাগীর মৃত্যু

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : আফ্রিকান কাপ অব নেশনসে ক্যামেরুন-কমোরোসের ম্যাচ দেখতে গিয়ে পদদলিত হয়ে শিশুসহ আট দর্শক মারা গেছেন এবং ৪০ জন আহত হয়েছেন। শেষ ষোলোতে যাওয়ার লড়াইয়ে স্বাগতিক ক্যামেরুনের এক মাঠে নেমেছিল এই দুই দল। স্থানীয় সময় সোমবার ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াউন্ডার একটি রাজধানীতে এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে ৩০ বছর বয়সী দুজন মহিলা, চারজন পুরুষ ও এক শিশু রয়েছে এবং একজনের দেহ তার পরিবার নিয়ে গেছে।
দর্শকরা এসেছিলেন মাঠে ফুটবল খেলা দেখতে। কিন্তু এর মধ্যে ঘটল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ফুটবল বিশ্বব্যাপী ব্যাপক পরিচিত ও জনপ্রিয় খেলা। এটি আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃক পরিচালিত ক্রীড়ার আনুষ্ঠানিক নাম। এই খেলার আরো একটি নাম রয়েছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এটি সকার নামে পরিচিত। সারা বিশ্ব মুখিয়ে থাকে ফুটবল বিশ্বকাপের দিকে। চার বছর পর পর ফিফা বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হলেও মাঝের সময়ে দেশ মহাদেশে আলাদাভাবে নানা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। কতিপয় দেশের সর্বোচ্চ বিভাগে বিপুল পারিশ্রমিকে তারকা খেলোয়াড়রা খেলে থাকেন। বিশ্বের ফুটবল তারকা মেসি, রোনালদো, নেইমার, এমবাপ্পেরা কোন ক্লাব থেকে কোন ক্লাবে যান, তা নিয়েও থাকে দর্শকদের আনন্দ উত্তেজনা। তেমনি কিছু দেশে এবং নিচু বিভাগের খেলোয়াড়রা অপেশাদার এবং মৌসুমভিত্তিক হয়ে থাকেন। বিশেষ করে ফুটবলের অধিক জনপ্রিয়তা হলো ইউরোপে। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচটি লিগ যথা প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগা, সিরি এ, বুন্দেসলিগা, লিগ-১ এই জনপ্রিয়তাকে সবসময় সচল রাখার মুখ্য ভূমিকা পালন করে। একইভাবে অন্য মহাদেশগুলোয়ও এ রকম লিগের আয়োজন করা হয়। তেমনই একটি আয়োজন ছিল আফ্রিকান কাপ অব নেশনস। টুর্নামেন্ট প্রায় শেষের পর্যায়ে। শেষ ষোলোর লড়াইয়ের চারটি ম্যাচও হয়ে গিয়েছিল। শেষ ষোলোতে যাওয়ার লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল ক্যামেরুন এবং প্রথম নেশনস কাপ খেলতে যাওয়া কমোরোস। ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াউন্দের কাছে পল বিয়া স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ম্যাচটি। বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারির জন্য এই স্টেডিয়ামেও ছিল দর্শকদের জন্য নানা বিধিনিষেধ। ধারণক্ষমতার ৮০ শতাংশ দর্শক প্রবেশ করানোর অনুমতি পেয়েছিল ভেন্যুটি। কিন্তু স্বাগতিক দল ক্যামেরুনের খেলা। তাই ৬০ হাজার আসনের স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে হাজির হয়েছিলেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। এ কারণে স্টেডিয়ামে ঢোকার সময় সমর্থকদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তিতে আট জনের মৃত্যুসহ ৪০ জন দর্শক আহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারের এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ফুটবলপ্রেমীরা পল বিয়া স্টেডিয়ামের গেটে হুড়োহুড়ি করে প্রবেশ করছেন। নিহতদের মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকজন শিশু দুর্ঘটনার সময় অচেতন হয়ে পড়ে। এ সম্পর্কে ক্যামেরুনের রাষ্ট্রীয় স¤প্রচার প্রতিষ্ঠান সিআরটিভি জানিয়েছে, ‘স্টেডিয়ামে পদপিষ্ট হয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকেই আহত হয়েছেন।’ তবে পরবর্তীতে আরো দুজনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে জিজ্ঞাসা করা হলে এপি নিউজকে ক্যামেরনের মধ্যাঞ্চলের গভর্নর নাসেরি পল বিয়া জানিয়েছেন, ‘নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। আমরা মোট নিহতের সংখ্যা এখন জানাতে পারছি না।’
স্থানীয় হাসপাতালের নার্স অলিঙ্গা প্রুডেন্স অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানিয়েছেন, কয়েকজন আহত ব্যক্তি খুবই বাজে অবস্থায় আছে। বিবিসি আফ্রিকার কর্মকর্তা নিক কাভেল জানান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সবার টনক নড়েছে। আফ্রিকান ফুটবল কনফেডারেশন (সিএএফ) জানিয়েছে, তারা বর্তমানে ঘটনাটি তদন্ত করছে এবং কী হয়েছিল সেটা বোঝার চেষ্টা করছে। ক্যামেরুনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানাউদা মালাচি টুইট করে জানিয়েছেন, ‘আহতদের জন্য চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাবতীয় খরচ সরকার বহন করবে।’ ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটলেও ম্যাচ চলেছে বাধাহীনভাবে। ২০০৫ সালে ফিফার স্বীকৃতি পাওয়া কমোরোস এবার সবাইকে চমকে দিয়েছে।
প্রথমবারের মতো খেলতে যাওয়া দলটি ঘানার মতো প্রতিষ্ঠিত শক্তিকে হারিয়ে উঠে গিয়েছিল নকআউট পর্বে। ক্যামেরুনের বিপক্ষেও লড়াই করেছে সমানে সমানে। স্বাগতিকদের ১৯ শটের বিপরীতে সফরকারীদের শট ছিল ১৩টি। তার মধ্যে ৭টি শটই ছিল লক্ষ্য বরাবর। যেখানে স্বাগতিকরা রেখেছে ৬টি। স্বাগতিক দলের বিরুদ্ধে ৭ মিনিটেই ১০ জনের দল হয়ে পড়ে কমোরোস। নাজিম আবফুর লাল কার্ডের পরও হাল ছাড়েনি কমোরোস। ক্যামেরুনকে ২৭ মিনিটের মাথায় লিড এনে দেয় একামবি। দ্বিতীয়ার্ধ্বে ৭০তম মিনিটে আবুবকর এই ব্যবধানকে দ্বিগুণ করে দেন। ৭০ মিনিটে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়া কমোরোস ৮১ মিনিটে ব্যবধান কমিয়ে এনেছিল। কমোরোসের হয়ে একমাত্র গোলটি এসেছিল ইউসুফের পায়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি। নির্ধারিত সময় শেষে কমোরোসকে ২-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছেন স্বাগতিক ক্যামেরুন। অন্যদিকে ক্যামেরুনের ইয়াউন্ডের একটি জনপ্রিয় নাইট ক্লাবে আগুন লেগে অন্তত ১৬ জন নিহত ও আটজন আহত হন। স্থানীয় সময় ২৩ জানুয়ারি রোববার এ ঘটনা ঘটে। দেশটিতে চলমান আফ্রিকা কাপ অব নেশনস ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য হাজার হাজার ফুটবল অনুরাগী রাজধানী ইয়াউন্ডেতে অবস্থান করছেন। করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের ২৪টি দেশের এ আয়োজন স্থগিত করা হয়েছিল ২০২১ সালে। পরবর্তীতে চলতি বছর ৯ জানুয়ারি এই টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছিল এবং এটি শেষ হবে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি। ২০১৯ সালে ক্যামেরুনে আফ্রিকা কাপ অব নেশনস হওয়ার কথা ছিল। ক্যামেরুনের মাঠ ঠিকমতো তৈরি নয় বলে পরে তা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মিসরে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়