প্রজ্ঞাপন জারি : সরকারি-বেসরকারি অফিস অর্ধেক জনবলে আজ থেকে

আগের সংবাদ

বৈধ লবিস্টের প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবহার : বিএনপি-আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ > ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের

পরের সংবাদ

সুনামগঞ্জে টিককেন্দ্রে ভিড় : তৃতীয় ডোজ গ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তায় অনেকে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইদুর রহমান আসাদ, সুনামগঞ্জ থেকে : সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে মানুষের ভিড় বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে ভ্যাকসিন নিতে আসা মানুষের ভোগান্তি। গণটিকা নেয়ার সময় ডাটা এন্ট্রি না করা, কেন্দ্রে এসে শিক্ষার্থীদের টিকা না পাওয়া, অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন, কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীরা ডাটা অনলাইনে এন্ট্রি না করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকে।
গত শনিবার বেলা ১১টায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে স্কুল পড়–য়া ছেলেকে নিয়ে আসেন জালাল উদ্দিন। ছেলে সালাউদ্দিন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার আব্দুল আহাদ সাহিদা চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। বিদ্যালয় থেকে ছেলের টিকা কার্ড পূরণ করে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এখান থেকে সদর হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে পাঠানো হয় এই শিক্ষার্থীকে। সদর হাসপাতালে এসেও ছেলেকে ভ্যাকসিন দেয়াতে পারেননি জালাল উদ্দিন।
কেবল জালাল উদ্দিন নয়, সুফিয়া বেগম নামে আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকও এ রকম ভোগান্তির কথা জানালেন। আলহাজ জমির নুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে তার ছেলে নাজমুন হোসেন। টিকা নিতে এসে ঘুরতে ঘুরতে হয়রান তিনি। বললেন বিপদে পড়েছি, আমার সঙ্গে প্রতিবেশীর মেয়ে অপিও (অপি রানী শীল), দুজনকে নিয়ে ঘুরছি, কেউ সহায়তা করছেন না।
জালাল উদ্দিন বললেন, স্কুল থেকে বলেছে- উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে টিকা কার্ড নিয়ে গেলেই হবে। সকালে সেখানে যাওয়ার পর বলা হলো, তারা ভ্যাকসিন দেয় না, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে যেতে হবে। হাসপাতালে আসার পর তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে না। সকাল থেকে শুধু ঘুরলাম, ভ্যাকসিন পাওয়া গেল না।
সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বললেন, শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট কেন্দ্রে ভ্যাকসিন নিতে বলেছি, এ রকম হওয়ার তো কথা নয়। রবিবার শিক্ষার্থীদের টিকাকেন্দ্র ছিল সুনামগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে। সেখানে সবাই এসে ভ্যাকসিন পেয়েছে।
অন্যদিকে দ্বিতীয় দফায় টিকা নিয়েও অনেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন। ভোগান্তির শিকার হওয়া ব্যক্তিরা বলছেন, অনেকে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নিলেও অনলাইনে এন্ট্রি নেই তাদের টিকা নেয়ার তথ্য। এতে তৃতীয় ডোজ পাওয়ার অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে তাদের।
অনেকে দুই ডোজ নেয়ার এক বছর পর নতুন করে অনলাইনে নিবন্ধন করছেন। এই নিবন্ধনের পর প্রথম ডোজ নেয়ার জন্য ম্যাসেজ পেয়েছেন। ম্যাসেজ পেয়ে টিকাকেন্দ্রে গিয়ে নতুন করে টিকা নিয়েছেন মর্মে শুধু এন্ট্রি করেছেন। নির্ধারিত তারিখে হাসপাতালে শুধু হাজিরা দিচ্ছেন তারা। তবে এই প্রসেসে তৃতীয় ডোজ পেতে বিলম্বের মধ্যে পড়েছেন তারা।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী একজন স্বাস্থ্যকর্মী বললেন, শুরুর দিকে ও গণটিকা নেয়ার সময় ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে এলে আমরা তথ্য এন্ট্রি করে ভ্যাকসিন দিয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী তাদের এসব তথ্য অনলাইনে এন্ট্রি করার কথা। কিন্তু এগুলো অনলাইনে এন্ট্রি করা হয়নি। অনলাইনে এন্ট্রি না হওয়া পর্যন্ত তৃতীয় ডোজ নেয়ার তারিখ গণনা শুরু হবে না, নির্ধারিত সময়কালের আগে কেউ তৃতীয় ডোজ নিতেও পারবেন না।
শহরের ষোলঘরের বাসিন্দা লেখক সুখেন্দু সেন বললেন, গত বছরের শুরুর দিকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে গিয়ে ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেই। এর দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে বলা হয়। নির্ধারিত তারিখে গিয়ে দ্বিতীয় ডোজও গ্রহণ করেছি। এ বছর তৃতীয় ডোজ নেয়ার জন্য যোগাযোগ করে জানতে পারি, তথ্য অনলাইনে এন্ট্রি করা হয়নি। এভাবে তার স্ত্রীরও টিকা নেয়ার তথ্য এন্ট্রি করা হয়নি। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। তিনি ক্ষোভ জানিয়ে

বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমি জানুয়ারির শুরুতে ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ পাওয়ার কথা। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের ভুলের কারণে আমাকে প্রায় আরো এক বছর অপেক্ষা করতে হবে টিকা নিতে।
উকিলপাড়ার বাসিন্দা মনোতোষ সাহা বললেন, আমার মেয়ে গত বছর সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেয়। দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার সময় কর্তৃপক্ষ তার সেটা এন্ট্রি দেয়নি। তৃতীয় ডোজ নিতে গেলে ডাটা এন্ট্রিতে দ্বিতীয় ডোজ নেয়া হয়নি দেখাচ্ছে। হাসপাতালে গেলে তারা বলছে, সিটি করপোরেশন থেকে এটা ঠিক করে আনতে হবে। এ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।
রায়পাড়ার বাসিন্দা শিল্পী রায় বললেন, আমার ভাই ও ভাইয়ের বউ গণটিকা নেয়ার সময় ভ্যাকসিন নিয়েছেন। তারা তো নিজেরা অনলাইনে নিবন্ধন করেননি। তারা কীভাবে তৃতীয় ডোজ নেবেন জানতে চেয়েছিলাম, টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বশীলরা কিছইু বলতে পারেননি।
সুনামগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আশরাফুল হক বললেন, এ রকম ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে পুরো জেলায় দুই হাজার ৬০০ জনকে ভ্যাকসিন দিয়েছি। অনলাইনে নিবন্ধনের বিষয়টি আইসিটি মন্ত্রণালয় দেখে। আমরা এই দুই হাজার ৬০০ জনের ডাটা তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তারা এখনো আমাদের কিছুই জানায়নি। আবারো যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করা হবে। আশা করি সংশ্লিষ্টরা তৃতীয় ডোজ ভ্যাকসিন দ্রুতই নিতে পারবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়