প্রজ্ঞাপন জারি : সরকারি-বেসরকারি অফিস অর্ধেক জনবলে আজ থেকে

আগের সংবাদ

বৈধ লবিস্টের প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবহার : বিএনপি-আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ > ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের

পরের সংবাদ

ফিরিয়ে দেয়া হলো শিক্ষক ও কাউন্সিলরের আনা খাবার : অনশনরত ২৮ শিক্ষার্থীর অধিকাংশই অসুস্থ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফারুক আহমদ, সিলেট ব্যুরো ও নাজমুল হুদা, শাবি প্রতিনিধি : শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে টানা ৬ দিনের অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে ২৩ শিক্ষার্থীর ১২৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ও অনশনস্থলে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তারপরও কোনো শিক্ষার্থীই এখনো অনশন ভাঙেনি। নতুন করে শিক্ষার্থীদের গণঅনশনের ডাকে সাড়া দিয়েছেন নতুন ৫ শিক্ষার্থী। তারাও অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে অনশনস্থলেই। দিনের বিভিন্ন সময়ে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফের অনশনে যোগ দিয়েছেন ৭ শিক্ষার্থী।
টানা ১২৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনশনরত ২৩ শিক্ষার্থীর। ইতোমধ্যে অনশনরত সব শিক্ষার্থীই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এছাড়া নতুন করে যুক্ত হওয়া পাঁচ শিক্ষার্থীও অসুস্থ হতে শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশনস্থলে দায়িত্বরত মেডিকেল টিমের তথ্যমতে, গতকাল সোমবার বিকাল পর্যন্ত ২০ জন শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। তবে বর্তমানে ১১ জন অনশনকারী শিক্ষার্থী ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন। বাকি ১৭ জন অনশনরত অবস্থায় মেডিকেল ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বক্তব্যকে অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে মুহাইমিনুল বাসার রাজ বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে বহিরাগতদের ইন্ধন বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তবে আমাদের আন্দোলনে কোনো

বহিরাগতদের ইন্ধন নেই। এটা শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ যৌক্তিক আন্দোলন। এতে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে কেউ ঢুকলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র দেখিয়ে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
‘ভিসি পদের চেয়ারের মূল্য বেশি নাকি আন্দোলনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের প্রাণ? এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে রাজ বলেন, উপাচার্য পদত্যাগ না করলে আমরা এবার গণঅনশনে যোগ দেব। শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা জানিয়ে তিনি বলেন, অনশনরত শিক্ষার্থীরা এখন পর্যন্ত চিকিৎসা চলাকালে হাসপাতালে কোনো খাবার গ্রহণ করেনি। শিক্ষার্থীদের দেখতে যারা খাবার নিয়ে গেছেন সেগুলো পথশিশুদের বিলিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা মারা গিয়ে এটি প্রমাণ করব যে, ভিসির চেয়ারটার দাম আমাদের প্রাণের চেয়ে বেশি ছিল!
এদিকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অনশনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা একটু সুস্থতাবোধ করছেন তারা ডাক্তারের ছাড়পত্র নিয়ে আবারো ক্যাম্পাসে ফিরে এসে অনশনে যোগ দিচ্ছেন। একে একে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ৭ শিক্ষার্থী অনশনস্থলে এসে যোগ দিয়েছেন। হাসপাতালে অনশনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা একটু সুস্থতাবোধ করায় মেডিকেলে থাকতে চাচ্ছেন না। তাই সুস্থ হলেই তারা ক্যাম্পাসে ফিরে আসছেন। তবে তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো না।
এদিকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে অনশনে থাকা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহিন শাহিরিয়ার রাতুলের অ্যাপেন্ডিসাইটিসের জন্য অস্ত্রোপাচার করা হয়েছে। তবুও তিনি অনশন ভাঙেননি। রাতুলের বন্ধু মিজানুর রহমান বলেন, অনশনের দ্বিতীয় দিন থেকে শুরু হয় থেমে থেমে ব্যথা। তবুও ভাঙেননি অনশন। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অ্যাপেন্ডিসাইটিস লাস্ট স্টেজে ধরা পড়ে। গত রবিবার বিকালে অ্যাপেন্ডিসাইটিস শনাক্ত হলে রাত পৌনে ১১টার দিকে রাগিব রাবেয়া হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয়। এ সময় তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা বহন করেন। তার পরিবারের সদস্যরাও তার চিকিৎসাস্থলে এসেছেন।
এদিকে গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সিলেট সিটি করপোরেশনের দুই কাউন্সিলর খাবার নিয়ে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের জন্য। ওই খাবার ফিরিয়ে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং ভিসির জন্য খাবার নিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আলমগীর কবীরসহ অন্যান্য শিক্ষক আর সিলেট সিটি করপোরেশনের ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান ও ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুখলিছুর রহমান কামরান। তারা অনশনস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং খাবার গ্রহণের অনুরোধ জানান। এ সময় শিক্ষার্থীরা খাবার গ্রহণ না করে দুই কাউন্সিলর এবং শিক্ষককে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তারা বলেন, ‘শাবিপ্রবি বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থী ছাড়া আমরা কারো খাবার গ্রহণ করবো না। তবে আপনাদের আগমনে আমরা খুশি হয়েছি। তাছাড়া ভিসির কোনো খাবার প্রয়োজন হলে তা আমরা দেখব।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। গতকাল জাবির জনসংযোগ অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, জাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের কাছে মোবাইল ফোনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন শাবি উপাচার্য। তার বক্তব্য সম্পাদনা (এডিট) করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। এতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এ বিষয়টি অনুধাবন করছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, জাবির উদার ও প্রগতিশীল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা তাকে ক্ষমা করে দেবেন।
উল্লেখ্য, গত বুধবার বিকাল থেকে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন ২৪ জন শিক্ষার্থীরা। পরে পারিবারিক কারণে একজন বাড়িতে চলে যান। এরপর গণঅনশনে আরো ৫ শিক্ষার্থী অংশ নেন। তবে অনশনের ১২৪ ঘণ্টা পার হলেও আসেনি কোনো ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত। এর আগে রবিবার সন্ধ্যায় উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিকে উপাচার্যের পদত্যাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাস ভবনের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করেন তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়