প্রজ্ঞাপন জারি : সরকারি-বেসরকারি অফিস অর্ধেক জনবলে আজ থেকে

আগের সংবাদ

বৈধ লবিস্টের প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবহার : বিএনপি-আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ > ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের

পরের সংবাদ

ঢাকার জয়ের দিনে সাকিবের অনন্য কীর্তি : খুলনাকে হারের স্বাদ দিল মিরাজের চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : তামিম-মাহমুদউল্লাহ-আন্দ্রে রাসেলদের নিয়ে তারকাসমৃদ্ধ দল গড়েও টানা দুই ম্যাচ হারের পর মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা গতকাল জয়ের দেখা পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) অষ্টম আসরে গতকাল ফরচুন বরিশালকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে দলটি। এ জয়ে মাহমুদউল্লাহ ব্যাটে-বলে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করায় ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন তিনি। দল হারলেও অনন্য কীর্তি গড়েছেন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এবার বিপিএলে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি ঢাকার। নিজেদের খেলা প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করে তারা। ওই দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে জোড়া ফিফটি করেও দলকে বাঁচাতে পারেননি ঢাকার ওপেনার তামিম ইকবাল। গতকাল ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে তামিম ফিরেছেন শূন্য হাতে। আর এ ম্যাচেই হারের বৃত্ত ভাঙে ঢাকা। আগে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে ১২৯ রান জমা করে সাকিব আল হাসানের বরিশাল। ১৩০ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ঢাকা। তবে দলকে হ্যাটট্রিক হারের স্বাদ পেতে দেননি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আন্দ্রে রাসেল। তাদের ব্যাটে ভর করে ৪ উইকেট এবং ১৫ বল হাতে রেখে এবারের বিপিএলে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নেয় ঢাকা।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গতকাল তামিম-মাহমুদউল্লাহরা জয়ের জন্য ১৩০ রানের টার্গেটে খেলতে নামলে বরিশালের দুই পেসার শফিকুল ইসলাম ও আলজারি জোসেফ তছনছ করে ছাড়েন ঢাকার টপ অর্ডার। ১০ রানে তামিম-শাহজাদ-নাঈম-জহুরুলদের হারিয়ে আরেকটি হার চোখ রাঙাছিল তখন। কঠিন এই সময়ে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় মাহমুদউল্লাহ-শুভাগত জুটি। দুজন মিলে পঞ্চম উইকেটে ৬৯ রান যোগ করেন। শুভাগত ২৫ বলে ২ চারে ২৯ রান করে আউট হলে ক্রিজে নামেন আন্দ্রে রাসেল। গত দুটি ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া ক্যারিবীয় ব্যাটার এদিন ঝড় তোলেন। তার ১৫ বলে অপরাজিত ৩১ রানের মাধ্যমে ৪ উইকেটের জয় পায় ঢাকা। ৩ চার ও ২ ছক্কায় রাসেল নিজের ইনিংসটি সাজিয়েছেন।
অন্যদিকে জয় থেকে এক রান দূরে থাকতে সাকিবের বলে আউট হন দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলা মাহমুদউল্লাহ। ৪৭ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪৭ রানের ইনিংস খেলেছেন ঢাকার অধিনায়ক।
বরিশালের বোলারদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম ও আলজারি জোসেফ দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। সাকিব আল হাসান ও ডোয়াইন ব্রাভো নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
এর আগে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে সাকিবের ফরচুন বরিশালও। টস হেরে ২৩ রানে তিন উইকেট হারানো বরিশালকে খাদের কিনার থেকে টেনে তোলে সাকিব আল হাসান ও ক্রিস গেইল জুটি। সাকিব ১৯ বলে ২৩ রান করে আউট হলে গেইল দলের হয়ে করেন সর্বোচ্চ রান। শুরুতে ধীরস্থিরভাবে খেললেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ বাড়াতে থাকেন এ ব্যাটিং দানব। শেষ পর্যন্ত ৩০ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৬ রান করে ইসুরু উদানার শিকার হন। এরপর ডোয়াইন ব্রাভোর ২৬ বলে ৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে ৮ উইকেট হারিয়ে ১২৯ রান সংগ্রহ করে বরিশাল।
ঢাকার বোলারদের মধ্যে আন্দ্রে রাসেল ও ইসুরু উদানা দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া রুবেল, শুভাগত, হাসান মুরাদ, মাহমুদউল্লাহ নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
ইতিহাসে পঞ্চম বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে গতকাল ৪০০ উইকেট পান সাকিব আল হাসান। গতকাল মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার বিপক্ষে এ কীর্তি গড়েন তিনি। ফরচুন বরিশালের হার তখন নিশ্চিত। শেষের ১৭ বল থেকে করতে হতো মাত্র ১ রান। তখনই মিনিস্টার ঢাকার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উইকেট তুলে নেন সাকিব। এরই সঙ্গে প্রবেশ করেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এক অনন্য ক্লাবে।
সাকিবের বলে মাহমুদউল্লাহ আউট হন ডোয়াইন ব্রাভোর হাতে ক্যাচ দিয়ে। বিষয়টা যেন এমন দাঁড়াল ক্যাচটি তালুবন্দি করে সাকিবকে নিজের ক্লাবে স্বাগত জানালেন ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার ব্রাভো। যে ক্লাবে এখন ব্রাভোর পর দ্বিতীয় সদস্য বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে হারে শুরু হয়েছিল মেহেদি হাসান মিরাজের নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। তবে পরের ম্যাচেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মিনিস্টার ঢাকাকে ৩০ রানের ব্যবধানে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় তারুণ্যনির্ভর দলটি। গতকাল নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে মুশফিকুর রহিমের খুলনা টাইগার্সকেও হারিয়েছে মিরাজের চট্টগ্রাম। এবারে তাদের জয়ের ব্যবধান ২৫ রানের। আগে ব্যাট করা চট্টগ্রামের সংগ্রহ ছিল এবারের আসরের সর্বোচ্চ ১৯০ রান। জবাবে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৫ রানে থেমেছে খুলনার ইনিংস।
খুলনা রান তাড়া করতে নেমে চার ওভার না যেতেই তানজীদ হাসান তামিম ও রনি তালুকদারের উইকেট হারায় খুলনা। আন্দ্রে ফ্লেচার ও মেহেদি হাসানের ব্যাটে সেই ধাক্কা সামলেও ওঠার চেষ্টা করছিল দলটি। কিন্তু সপ্তম ওভারে রেজাউর রহমানের বাউন্সে কাঁধে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন ফ্লেচার। ১২ বলে ১৬ রান করেন তিনি। ফ্লেচারকে হাসপাতালে নেয়া হলেও তিনি স্বাভাবিক আছেন।
মেহেদির ব্যাটে সম্ভাবনা দেখালেও তিনি ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ২৪ বলে ৩০ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। অধিনায়ক মুশফিক দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হন। ফ্লেচারের কনকাশন সাব হিসেবে সিকান্দার রাজা নামেন। তিনি ইয়াসির আলীকে সঙ্গে নিয়ে জুটিও গড়েছিলেন। ১২ বলে ২২ রান করে রাজা আউট হলে ভেঙে যায় ২৪ বলে ৪৩ রানের এই জুটি।
ইয়াসির থাকলেও সঙ্গী হিসেবে কাউকে পাননি। একে একে ফেরেন থিসারা পেরেরা, ফরহাদ রেজা ও সোহরাওয়ার্দী শুভ । নবম ও শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ইয়াসির আউট হন ১৯তম ওভারে। তার ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৪০ রান।
চট্টগ্রামের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম, মেহেদি হাসান মিরাজ ও রেজাউর। ১টি করে উইকেট নেন নাসুম আহমেদ ও বিনি হাওয়েল।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামে চট্টগ্রাম। সোহরাওয়ার্দী শুভর প্রথম ওভারে ২৩ রান সংগ্রহ করে ম্যাচ শুরু করেন কেনার লুইস ও উইল জ্যাকস। মাত্র ৭ বলের ঝড়েই থেমে যান জ্যাকস। কামরুল ইসলাম রাব্বির শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১৭ রানের ইনিংসটি সাজান ১ চার ও ২ ছয়ের মারে। দ্বিতীয় উইকেটে আফিফ হোসেনের সঙ্গে ২৩ রান যোগ করেন লুইস। রাব্বির দ্বিতীয় শিকার হন ১৪ বলে ২৫ রান করে।
এরপর দলের হাল ধরেন আফিফ ও সাব্বির রহমান। তবে সুবিধা করতে পারেনি তাদের জুটি। রান আউটের ফাঁদে পড়ে আফিফ আউট হন ১৩ বলে ১৫ রান করে। চতুর্থ উইকেটে জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যান সাব্বির ও অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। যদিও ফরহাদ রেজার এক ওভারে সাব্বির-মিরাজ দুজনই জীবন পান। পরে নাভিন উল হককে স্কুপ করতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন মিরাজ। তিনি ২৩ বলে ৩০ রান করেন।
সাব্বির উইকেটে থিতু হয়েও ফেরেন ৩৩ বলে ৩২ রানের ধীরগতির ইনিংস খেলে। তার ইনিংসে ছিল একটি ছক্কা। শেষ দিকে বেনি হাওয়েল এবং নাঈম ইসলাম ব্যাটিং ঝড় তোলেন। যেখানে শেষ ৫ ওভারে চট্টগ্রাম সংগ্রহ করে ৬২ রান। হাওয়েল ২০ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন। তার ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ১টি ছক্কা। নাঈম ২ ছক্কায় ৫ বলে করেন ১৫ রান। এতে নির্ধারিত ২০ ওভারে চট্টগ্রাম সংগ্রহ করে ৭ উইকেটে ১৯০ রান। খুলনার পক্ষে কামরুল ২টি এবং নাভীন ও রেজা ১টি করে উইকেট পান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়