কাগজ প্রতিবেদক : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে এখনো ডেল্টার ধরন দিয়ে সংক্রমিতের হার বেশি। তবে ওমিক্রনে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই সংক্রমণের উল্ফন দেখা যাচ্ছে। এদিকে ঢাকা শহরে ওমিক্রনের অন্তত ৩টি উপধরন (সাব টাইপ) পাওয়া গেছে বলে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। যে তিনটি উপধরন মিলেছে সেগুলোর সঙ্গে আফ্রিকান, ইউরো-আমেরিকান এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ওমিক্রন ধরনের সঙ্গে মিল রয়েছে। সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণায় এমন তথ্যই মিলেছে বলে গতকাল সোমবার প্রতিষ্ঠানের ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আইসিডিডিআর,বি বলছে, জানুয়ারির প্রথম দুই সপ্তাহে তাদের ল্যাবরেটরিতে ১ হাজার ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ শতাংশই ছিল করোনায় আক্রান্ত। আর আক্রান্তদের মধ্যে ওমিক্রন ছিল ৬৯ শতাংশের নমুনায়। বাংলাদেশে ৬ ডিসেম্বর ওমিক্রন প্রথম শনাক্ত হয়। ওই মাসেই আইসিডিডিআর,বির ল্যাবে পরীক্ষা করা ঢাকা শহরের ৭৭ জন করোনা রোগীর মধ্যে ৫ জনের ওমিক্রন শনাক্ত করা হয়েছিল। অন্যগুলো ছিল ডেল্টা ধরন। গবেষণায় আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ওমিক্রনে আক্রান্ত ২৯ জনের মধ্যে ২৭ জনের মৃদু উপসর্গ কিংবা কোনো উপসর্গও ছিল না। ২৪ জন টিকার দুই ডোজ নিয়েছিলেন, বুস্টার ডোজ নিয়েছেন একজন। একজন শুধু একদিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
এদিকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৬০টি পরীক্ষাগারে ৪৫ হাজার ৮০৭টি নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের উপস্থিতি মিলেছে ১৪ হাজার ৮২৮টিতে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গত বছরের ২৪ জুলাই শনাক্তের হার এর চেয়ে বেশি ছিল। ওই দিন ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ ছিল শনাক্তের হার। আর একদিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের ৩ আগস্ট। ওই দিন ১৫ হাজার ৭৭৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৯৯৮ জন। এই সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে ১০ হাজার ১৬৫ জনই ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ৭৮৫ জন, সিলেটে ৫৪৮ জন, রাজশাহীতে ৭৯৮ জন, খুলনায় ৬৮৮ জন, ময়মনসিংহে ৩৩৩ জন, বরিশালে ২৫৭ জন আর রংপুরে ২৫৪ জন।
এর আগে গত রবিবার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৪ হাজার ৮৫৪টি। রোগী শনাক্ত হয় ১০ হাজার ৯০৬ জন। শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর মৃত্যু হয় ১৪ জনের। শনিবার ৩৪ হাজার ৩১১টি নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের উপস্থিতি মিলেছে ৯ হাজার ৬১৪টিতে। মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। শনাক্তের হার ২৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। শুক্রবার ৪০ হাজার ১৩৪টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয় ১১ হাজার ৪৩৪ জন। মৃত্যু হয় ১২ জনের। শনাক্তের হার ছিল ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বৃহস্পতিবার ৪১ হাজার ২৯২টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৮৮৮ জন। শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর মৃত্যু হয় ৪ জনের।
সংক্রমণের সাপ্তাহিক তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সংক্রমণের ২য় সপ্তাহের (১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি) তুলনায় ৩য় সপ্তাহে (১৭ থেকে ২৩ জানুয়ারি) করোনার চার সূচকই বেড়েছে। ২য় সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৩০টি। রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৪ হাজার ১১ জন। সুস্থ হয়েছে ১ হাজার ৯৮৮ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের। ৩য় সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫৫টি। রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬৭ হাজার ৪২৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৯৬৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ৭৯ জনের। সেই হিসাবে নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ। রোগী বেড়েছে ১৮০ দশমিক ৮ শতাংশ। সুস্থতা বেড়েছে ৯৯ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ৮৮ দশমিক ১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ ৬২ হাজার ৬৮৭টি। এর মধ্যে রোগী শনাক্ত হয় ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৯ জন। আর মোট প্রাণহানির সংখ্যা ২৮ হাজার ২৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ৫০ জন এবং নারী ১০ হাজার ১৮৮ জন। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের ৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী। বয়স বিবেচনায় বিশোর্ধ্ব ২ জন, ত্রিশোর্ধ্ব ১ জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ৩ জন, ষাটোর্ধ্ব ৩ জন, সত্তরোর্ধ্ব ৫ জন আর নব্বই উর্ধ্ব ১ জন। বিভাগ বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন, খুলনা বিভাগের ১ জন, বরিশাল বিভাগের ১ জন, সিলেট বিভাগে ২ জন আর ময়মনসিংহ বিভাগের ৩ জন। ১২ জন সরকারি হাসপাতালে ও ৩ জন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।