প্রজ্ঞাপন জারি : সরকারি-বেসরকারি অফিস অর্ধেক জনবলে আজ থেকে

আগের সংবাদ

বৈধ লবিস্টের প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবহার : বিএনপি-আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ > ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের

পরের সংবাদ

অফিসে অর্ধেক জনবল নিয়ে কাজের নির্দেশনা মানা হয়নি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি সব অফিসে অর্ধেক জনবল নিয়ে কাজ করার সরকারি নির্দেশনা কার্যকর হয়নি। খোদ সচিবালয়ের সব দপ্তরেই গতকাল সোমবার পূর্ণ জনবল নিয়ে কার্যক্রম চলেছে। ডিউটি রোস্টার তৈরি না হওয়ায় দপ্তরগুলোর জনবল অর্ধেক হয়নি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) পূর্ণ জনবল নিয়েই অফিস পরিচালনা করেছে। তবে উত্তর সিটি করপোরেশন অর্ধেক জনবল দিয়েই কাজ চালাচ্ছে। এদিকে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা দিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও তাতে দেখা গেছে চরম অনিহা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গত রবিবার রাতে অর্ধেক জনবল নিয়ে সব সরকারি-বেসরকারি অফিস পরিচালনার নির্দেশনা জারি করা হয়। এরপর গতকাল সচিবালয়ে গিয়ে নির্দেশনার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। নির্দেশনা বাস্তবায়নের ছিঁটেফোঁটাও দেখা যায়নি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, অর্ধেক জনবল নিয়ে কাজ করতে হলে ডিউটি রোস্টার করতে হয়। কিন্তু রবিবার বিকালের দিকে নির্দেশনা আসে। ততক্ষণে সব অফিস ছুটি হয়ে যায়। তাই রোস্টার তৈরি করা হয়নি। আগামী দুএকদিনের মধ্যে রোস্টার তৈরি করে ডিউটি ভাগ করে দেয়া হবে। মঙ্গলবার থেকে অর্ধেক জনবল নিয়ে দপ্তরের কাজ চলবে, নির্দেশনা বাস্তবায়ন হবে।
বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা এই নির্দেশনার বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি। মন্ত্রণালয়, অন্যান্য অফিস এবং রাস্তায়ও মানুষের চলাচল গত দুদিন ধরে অনেক কম। রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যাও কমেছে। মানুষ সচেতন হয়েছে। সব প্রতিষ্ঠানই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রোস্টার তৈরি করেছে।
ফরহাদ হোসেন আরো বলেন, আমরা করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে আছি। গর্ভবতী নারী, যারা একটু অসুস্থ তারা ঘরে থেকে অফিস করেন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। বিশেষ করে জুম, ই-নথি, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তারা তাদের কাজগুলো চালিয়ে নেবেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও অর্ধেক জনবল নিয়ে কাজ করতে হবে। যারা স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করবেন তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট থেকে শুরু করে আগের মতই ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা বিধিনিষেধ মানতে চান না তাদের মানানোর জন্য কিছুটা আইন প্রয়োগ করতে হয়। যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আগেও সাড়া দিয়েছে তারা এবারো কর্মকর্কতা-কর্মচারীদের সুরক্ষার চেষ্টা করবে। এটা একটা দায়িত্ববোধের ব্যাপার।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) গতকালও তাদের পূর্ণ জনবল নিয়েই অফিস পরিচালনা

করেছে। দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাসের বলেন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্ধেক জনবল দিয়ে অফিস পরিচালনা করা হলে নাগরিক সেবায় চরম ব্যাঘাত ঘটবে।
তবে উত্তর সিটি করপোরেশন অর্ধেক জনবল দিয়েই কাজ চালাচ্ছে। গতকালই এখানে সরকারি নির্দেশনার বাস্তবায়ন করা হয়। উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, অর্ধেক জনবল নিয়েই অফিস পরিচালনা শুরু করেছি। সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে জরুরি সেবা প্রদানকারী দপ্তরগুলোতে যেন কাজের সমস্যা না হয় সেদিকেও আমরা নজর রাখছি।
অর্ধেক জনবল দিয়ে ব্যাংকের কার্যক্রম চালানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও তা গতকাল কার্যকর হয়নি। সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে পূর্ণ জনবল নিয়ে কাজ চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অফ সাইট সুপারভিশন বিভাগ ব্যাংকের করণীয় বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ নির্দেশনা পালন করতে বলা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে অফিসে রোস্টার করে ৫০ ভাগ জনবল নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলা হয়। যারা বাসায় থাকবে তারা ভার্চুয়ালি দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করবে, তবে তারা নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না। প্রজ্ঞাপনে আবশ্যকীয় ব্যাংকিংসেবা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন অনুযায়ী নিজ বিবেচনায় ব্যাংকগুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, রোস্টার করা হবে। এরপর আজ মঙ্গলবার থেকে রোস্টার অনুযায়ী অর্ধেক জনবল নিয়েই অফিস চলবে।
এদিকে গণপরিবহনে বিধিনিষেধ গত শনিবার থেকে কার্যকর হলেও তা পুরোপুরি উপেক্ষিত। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কারো আগ্রহ নেই। শতভাগের বেশি যাত্রী নিয়েই বাস চলছে। রাস্তায়, গণপরিবহনে, রেস্টুরেন্টে, মার্কেট ও শপিংমলে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক পরার ক্ষেত্রে সবার উদাসীনতা দেখা গেছে। বাসে হেলপার ও চালকের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক থাকলেও সেদিকে কারো খেয়াল নেই। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার স্টেুরেন্টগুলোতে বিভিন্ন বয়সি লোকজনকে মাস্ক ছাড়াই ঢুকতে দেখা যায়। রাজধানীর মৌচাক মার্কেটে মানুষের ছড়াছড়ি। কাগজে-কলমেই ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ সীমাবদ্ধ। নিউমার্কেট, চাঁদনীচকসহ ওই এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি না মানায় কেউ কাউকে বাধা দিচ্ছে না। নিরাপত্তাকর্মী হোসেন জানান, গেটের সামনে ক্রেতাদের মাস্ক পরে ঢুকতে বলা হলে অনেকেই খারাপ ব্যবহার করে।
বাণিজ্যমেলায় মাস্ক ছাড়া কাউকে চলাচলের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু ভেতরে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানছে না। অনেকের মুখেই মাস্ক থাকছে না। স্টলগুলোতে যারা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন তারাও মাস্ক ব্যবহার করছেন না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়