নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে রড মিস্ত্রির মৃত্যু

আগের সংবাদ

ওমিক্রনে ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের : রোগী বেড়েছে ৫ থেকে ৬ গুণ, উপসর্গ নিয়েও হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা

পরের সংবাদ

লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি : আজ বিবৃতি দেবেন মোমেন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রে আসলেই লবিস্ট নিয়োগ করেছে কিনা, করে থাকলে এর পেছনে কোন দল কত টাকা খরচ করেছে, এ টাকা কোথা থেকে খরচ করা হয়েছে- এসব বিষয়ে জাতীয় সংসদে সুনির্দিষ্ট তথ্য উপস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দল জাপা ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা। তারা এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করেছেন।
গতকাল রবিবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ ও জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক এই দাবি জানান। তাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, আজ সোমবার জাতীয় সংসদে তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দেবেন। পরে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপির সংরক্ষিত আসনের এমপি রুমিন ফারহানা আওয়ামী লীগ সরকারের লবিস্ট নিয়োগের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন।
বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করেছে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, অনুমাননির্ভর বক্তব্য উপস্থাপন করা ঠিক নয়। তিনি বলেন, ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘকে নোটিস করেছে র‌্যাবকে শান্তিরক্ষা মিশনে না নিতে। যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেটার কী অবস্থা- এসব নিয়ে আগামী দিন সুস্পষ্ট তথ্যসহ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বিবৃতি দেবেন বলে তিনি আশা করেন। তিনি বলেন, বিএনপি আসলে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করেছে কিনা, আওয়ামী লীগ করেছে কিনা- এসব বিষয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করবেন বলেও তিনি আশা করেন।
এর আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব সাংসদ মুজিবুল হক বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, বিএনপি গত তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্টের পেছনে ৩২ কোটি টাকা খরচ করেছে। কী কারণে তারা এই লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছিল? এটা কী দেশের জনগণের স্বার্থে? রাষ্ট্রের স্বার্থে? নাকি জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে? এই বিষয়টি ক্লিয়ার হয়নি। মুজিবুল হক বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের পর বিএনপির একজন নেতা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ক্ষমতাসীন দল ২০১৪ সাল থেকে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। তিনি বলেছেন, ক্ষমতাসীন দল লবিস্টের পেছনে ৩ লাখ ২০ হাজার ডলার বা ৩০ কোটি টাকা প্রতি বছর খরচ করে আসছে। ক্ষমতাসীন দল কি আসলে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল? কী কারণে করেছিল? এই টাকা কি সরকারের কোষাগার থেকে গেছে? নাকি দলের নিজস্ব সোর্স থেকে গেছে? দেশের মানুষ এবং আমরাও জানতে চাই বিএনপি লবিস্ট নিয়োগের টাকা কোত্থেকে পেল? ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও লবিস্ট নিয়োগ করেছিল কিনা, করলে তার ফান্ড কোথা থেকে পেল? এ ব্যাপারে সার্বিক বিষয়ে নিরপেক্ষ সংস্থার তদন্ত বা সরকারের একটি বিবৃতি জানতে চাই। দেশের মানুষকে এটা জানানো হোক।পরে বক্তব্য দিতে উঠে বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেন, লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ নতুন কোনো বিষয় নয়। জনগণের করের কোটি কোটি টাকা খরচ করে দীর্ঘদিন ধরে লবিস্ট ফার্ম পুষছে এই সরকার। এমন একটি ফার্মে গত বছর সরকার ত্রৈমাসিক ৮০ হাজার ডলার করে দিয়েছে। বছরে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ২০ হাজার ডলার বা আনুমানিক ২ কোটির ওপরে। সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ফিডল্যান্ড গ্রুপের সঙ্গে ৪০ হাজার ডলারে এক মাসের জন্য একটি চুক্তি করেন ওয়াশিংটনে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম। এছাড়া কোনওয়াদো কনসালটিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার এক মাসের জন্য আরো একটি চুক্তি করে। অগ্রিম দেয়ার শর্তে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। তাতে স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে মার্কিন লবিস্ট নিয়োগ শিখিয়েছে আওয়ামী লীগ। এদেশের রাজনীতিতে লবিস্ট সংস্কৃতি শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের মাধ্যমে।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০০৫, ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ অ্যালগেস্ট অ্যাল পাই নামে লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ১২ লাখ ডলার দিয়েছে। কোনো সংকটে পড়লেই সরকার সেটাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য নতুন ইস্যু বানানোর চেষ্টা করে। এবার নিষেধাজ্ঞার পরেই বিএনপি লবিং করেছে, টাকা পাচার করেছে ইত্যাদি তথ্য দেয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের বীভৎস মানবাধিকার পরিস্থিতিকে নতুন করে দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক মহলের সামনে নিয়ে এসেছে। সম্প্রতি র‌্যাবের বর্তমান এবং সাবেক ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই দফায় বাংলাদেশের সঙ্গে চীন, উত্তর কোরিয়া এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। যদিও গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়গুলোতে সরকার বাংলাদেশকে উত্তর কোরিয়া কিংবা মিয়ানমারের কাতারে নিয়ে গেছে আরো আগে।
রুমিন ফারহানা বলেন, পরিস্থিতি দেখে এটা স্পষ্ট। নিষেধাজ্ঞা এখানেই শেষ হচ্ছে না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিশ্বের স্বনামধন্য ১২টি মানবাধিকার সংস্থা র‌্যাবের সদস্যদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে পদায়নের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘে জোর দাবি জানিয়েছে এবং জাতিসংঘ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে।
বিএনপি দলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, জনগণের করের টাকায় চলা একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দলীয় ক্যাডারের মতো ব্যবহার করে এবং তাতে কর্মরত বহু নিরাপরাধ মানুষ এবং তাদের পরিবারের জীবনে সংকট তৈরি করেছে এই সরকার। মানবাধিকার সংস্থাগুলো, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলগুলো বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, গায়েবি মামলা ইত্যাদি বারবার বলেছে। তাতে কিছু আসে যায়নি সরকারের। পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আর সব মন্ত্রীরা প্রথমে খুব কড়া ভাষায় আমেরিকাকে আক্রমণ করলেও তাদের গলার স্বর এখন যথেষ্ট নিচু। এখন নিজেদের দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা করছে। প্রয়োজনে লবিস্ট ল ফার্ম নিয়োগের কথা বলছে।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর এখন আর র‌্যাব গভীর রাতে সন্ত্রাসীদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে যাচ্ছে না। কিংবা গোপন সংবাদ পেয়ে কোনো সন্ত্রাসীকে ধরতে গিয়ে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পুলিশ বা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলিও ছুড়ছে না। তারপর পালানোর সময় মারা যাচ্ছে না কোনো নির্দিষ্ট মানুষ। ঠিক যেন সন্ত্রাসীরা সাধু হয়ে গেছে। র‌্যাবকে গুলি করা বন্ধ করেছিল মেজর সিনহা রাশেদ হত্যার পর পর।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়