নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে রড মিস্ত্রির মৃত্যু

আগের সংবাদ

ওমিক্রনে ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের : রোগী বেড়েছে ৫ থেকে ৬ গুণ, উপসর্গ নিয়েও হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা

পরের সংবাদ

মালয়েশিয়ার দুই মন্ত্রী আসছেন কাল : সিন্ডিকেটের চাপে শ্রমবাজারে অনিশ্চয়তা, বিমান ভাড়া চড়া

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামরুজ্জামান খান : বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছেই না। একের পর এক তৈরি হচ্ছে জটিলতা। সরকার নতুন শ্রমবাজার খুঁজলেও পুরনো বাজার ধরে রাখতেই খাচ্ছে হিমশিম। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার হারানো বাজার উদ্ধার এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিমান ভাড়া নিয়ে হয়রানির কমতি নেই। মালয়েশিয়া ও লিবিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা দেখা দিলেও সিন্ডিকেটের মাধ্যম শত শত কোটি টাকা পাচারের পথ খোঁজা হচ্ছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের পকেট যেমন কাটা যাবে তেমনি সুবিধা নেবে দেশি-বিদেশি চক্র।
জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যগামী সব এয়ারলাইন্সের বিমানের টিকেটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দুবাই, কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব, বাহরাইনের টিকেট এখনো যেন সোনার হরিণ। যেখানে টিকেটের দাম ছিল মাত্র ২৩ হাজার টাকা, এখন তা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা! প্রায় ৬ মাস ধরে যাত্রী ও রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে এলেও সুফল মিলছে না। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে একাধিক চক্র একসঙ্গে মিলে টিকেটের দাম বাড়িয়ে ফায়দা লুটছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আগামী ২৫ জানুয়ারি রাতে তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো সেরি হামজা বিন জয়েনউদিন ও মানবসম্পদমন্ত্রী দাতোক সেরি এম সারাভানান। জনশক্তি রপ্তানির প্রক্রিয়া নিয়ে তারা বৈঠক করবেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে। ২৮ জানুয়ারি রাতে তাদের ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ সফরকালে তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক ও নৈশভোজে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। অবশ্য বাংলাদেশের জোর আপত্তির পরও জনশক্তি রপ্তানিতে ‘সিন্ডিকেশন’ চায় মালয়েশিয়া। এই নিয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মন্ত্রী পর্যায়ে সম্প্রতি চিঠি বিনিময় হয়েছে। গত ১৪ জানুয়ারি এক চিঠিতে

মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান ২৫টি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদকে লেখা এই চিঠিতে প্রকারান্তরে সিন্ডিকেশনের পক্ষে মত দেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী। তবে গত ১৮ জানুয়ারি এম সারাভানানকে লেখা অপর চিঠিতে বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি উন্মুক্ত রাখার আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ। চিঠিতে তিনি গত ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের কথা উল্লেখ করেন। জনশক্তি রপ্তানিকারকরা বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতার পরিপন্থি। এর ফলে সিন্ডিকেশনের উদ্ভব হবে, যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান ১৪ জানুয়ারির চিঠিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সমঝোতা স্মারকের কথা উল্লেখ করে লিখেন, ‘এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অত্যন্ত প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ, এটি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। সমঝোতা স্মারক ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর হয়েছে এবং ওই দিন থেকে কর্মী নিয়োগ স্থগিতের বিষয়টিও প্রত্যাহার করা হয়েছে।’ চিঠিতে এম সারাভানান আরো লিখেছেন, ‘মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগের বিষয়টি দ্রুত এবং স্বচ্ছ করা উভয়পক্ষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের আলোচনার সময় আপনি এই ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছিলেন যে বাংলাদেশের প্রধান ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির (বিআরএ) মাধ্যমে ১০টি সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশি কর্মী সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় কাজ করবে। বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট ২৫০টি রিক্রুটিং এজেন্সি অংশ নেবে। এছাড়া মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে যাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়।’ মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানানের চিঠির জবাবে ১৮ জানুয়ারি ফিরতি চিঠি পাঠান প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ। চিঠিতে বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি উন্মুক্ত রাখার আহ্বান জানান তিনি। চিঠিতে জনশক্তি রপ্তানি দ্রুত শুরু করার ইচ্ছা ব্যক্ত করায় এম সারাভানানকে ধন্যবাদ জানান ইমরান আহমেদ। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ সব সময় স্বচ্ছ ও নিরাপদ অভিবাসনের পক্ষে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার চার্টার অনুযায়ী ও বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা আইন ২০১২ অনুযায়ী বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য সুযোগ উন্মুক্ত রাখার পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান, যেটি দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা চুক্তিতেও উল্লেখ আছে।
মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগে বিশেষ কোটা ব্যবস্থা আর থাকবে না। গত শনিবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজাহ জয়নুদ্দিন বিদেশি কর্মী নিয়োগে কোটা বাতিলের এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে আসা প্রত্যেকটি আবেদন এখন থেকে মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়ন কমিটিতে পাঠানো হবে। সেখানে নির্ধারিত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে যোগ্য বিদেশি কর্মী নিয়োগের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। হামজাহ বলেছেন, লোকজন যাই বলুক না কেন, কোনো নিয়োগকর্তা বিদেশি কর্মী নিয়োগ করতে চাইলে তাকে আইন অনুযায়ী কমিটির অনুমোদন নিয়ে নিয়োগ দিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে দেশটির বৃক্ষরোপণ খাতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিয়োগকর্তাকে বিদেশি কর্মী কোটা এবং কতজন এই খাতের কাজের জন্য প্রয়োজন তা জানাতে হবে। ধরা যাক, কোনো বাগানে কাজের জন্য ১০০০ কর্মীর প্রয়োজন, কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থা নেই। এক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা মাত্র ৪০০ জন শ্রমিক নিয়োগ দিতে পারবেন। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যদি কোনো নিয়োগকর্তা অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ দিতে চান, তাহলে দ্বিতীয় দফায় মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন অথবা পুনর্বিবেচনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করতে হবে। শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া আগের চেয়ে কঠোর করা হয়েছে বলে জানান তিনি। হামজাহ বলেন, যদি অবাধ নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু থাকে, তাহলে বিদেশি কর্মীরা শর্ত এবং মানদণ্ড না মেনেই প্রবেশ করবেন। এর ফলে কর্মীদের কল্যাণের ব্যাপারে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেবে।
উল্লেখ্য, এর আগে বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করতে হতো নিয়োগকর্তাদের। তবে এখন বিদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থানের অভিন্ন নীতি এবং পদ্ধতি নিশ্চিত করার জন্য দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে।
এদিকে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট, বায়রার পক্ষ থেকে ১৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া তিন পৃষ্ঠার এক চিঠিতে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিকে সিন্ডিকেট যাতে না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে। তারা বলেছেন, ১৭৬ দেশে ১ কোটি ২৫ লাখ বাংলাদেশি রয়েছে। মালয়েশিয়ায় ছিল ১০ লাখ। এখন আছে প্রায় ৪ লাখ। বাংলাদেশের চতুর্থ এই শ্রমবাজার নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে তারা প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক মহাসচিব মোস্তফা মাহমুদ ও সিনিয়র সহসভাপতি রিয়াজ-উল-ইসলাম এতে স্বাক্ষর করেছেন।
রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদ ও বায়রার সাবেক নেতারা মনে করেন, রাষ্ট্রের স্বার্থেই সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে বৈধ রিক্রুটিং এজেন্টদের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত রাখতে হবে। নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য যেসব দেশ রয়েছে তারা রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠায়। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি পাঠানোর জন্য ইন্দোনেশিয়ার ১ হাজারেরও বেশি রিক্রুটিং এজেন্সি এবং নেপালে রয়েছে ৮৮৪টি। উভয় দেশের জন্য নিয়োগকারী সংস্থাগুলোর কোনো অগ্রাধিকার তালিকা নেই।
অন্যদিকে লিবিয়ার শ্রমবাজার নতুন করে চালুর সম্ভাবনা দেখা দিলেও একজন সংসদ সদস্য সেখানে সিন্ডিকেট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি নির্দিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চান বলে জানা গেছে। এতে পাচার হবে শত শত কোটি টাকা। মাথায় হাত পড়বে সাধারণ মানুষের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়