নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে রড মিস্ত্রির মৃত্যু

আগের সংবাদ

ওমিক্রনে ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের : রোগী বেড়েছে ৫ থেকে ৬ গুণ, উপসর্গ নিয়েও হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা

পরের সংবাদ

কড়াকড়ি আসছে নতুন আমদানিনীতিতে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নতুন আমদানিনীতি আদেশ অনুযায়ী দেশে পুরনো মোটরসাইকেল ও ক্যাসিনো বা জুয়াখেলার পণ্যসামগ্রী আমদানি নিষিদ্ধ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের মর্যাদা রক্ষায় সংকুচিত করা হচ্ছে পুরাতন কাপড় আমদানির পথও। তিন বছর মেয়াদি নতুন আমদানিনীতি আদেশ চূড়ান্ত হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রস্তুতি গ্রহণ এবং সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে এই নতুন নীতি আদেশে ব্যবসায়ীদের জন্য থাকছে হরেক সুবিধা। এতে আমদানি সহজ করার মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ানোর কৌশল নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত এক যুগে দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। স্থানীয় শিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে। বড় হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের আকার। এসব কিছু বিবেচনায় রেখে নতুন আমদানিনীতি আদেশে স্থানীয় শিল্পের প্রসারে পদক্ষেপের পাশাপাশি আমদানির সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণে কিছু কড়াকড়িও আরোপ করা হয়েছে। এভাবেই বৈশ্বিক অঙ্গনের সঙ্গে আগামী তিন বছর দেশের আমদানি বাণিজ্য কোন মানদণ্ডে পরিচালিত হবে, তার রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর প্রস্তাবিত নাম রাখা হয়েছে আমদানিনীতি আদেশ ২০২১-২৪। আজ সোমবারই বসছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বৈঠক।
সূত্র আরো জানায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কার্যতালিকায় প্রস্তাবিত আমদানিনীতি আদেশ ২০২১-২৪ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থান পাচ্ছে। নতুন করে জটিলতা তৈরি না হলে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চলতি সপ্তাহ অথবা আগামী সপ্তাহের বৈঠকে নতুন আমদানিনীতি আদেশটি অনুমোদন পেতে পারে। নীতি আদেশটি প্রণয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে অংশীজনদের মতামত। গত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে এ কাজটি করে আসছে মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি আমদানিনীতির একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া তৈরি হয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয় এই নতুন নীতি আদেশটির ওপর আইনি পরীক্ষা কার্যক্রমও (ভেটিং) শেষ করেছে। প্রতি তিন বছর পরপর দেশে একটি নতুন আমদানিনীতি আদেশ জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ২০১৮-২০২১ সালে আমদানিনীতি জারি করা হয়নি। সবশেষ ‘আমদানিনীতি আদেশ ২০১৫-১৮’ এখন পর্যন্ত আমদানির ক্ষেত্রে বলবৎ আছে। নতুন আমদানিনীতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের উন্নয়নে আমদানিকে সহজ করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ রাখা হয়েছে এই আমদানিনীতি আদেশে। এতে ব্যবসায়ীরা উদ্বুদ্ধ হবেন এবং উপকৃত হবেন। স্থানীয় শিল্পেরও প্রসার ঘটবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নতুন আমদানিনীতি আদেশ অনুযায়ী দেশে পুরনো মোটরসাইকেল আমদানি নিষিদ্ধ হচ্ছে। এছাড়া কোনো আমদানিকারক ব্লæটুথ অ্যানাবেল টেকনোলজি সংবলিত মোটরসাইকেল আমদানি করতে চাইলে তাকে আগে থেকেই বিটিআরসির অনুমতি নিতে হবে। থাকতে হবে অনুমোদিত সার্টিফেকেটও। নিষিদ্ধ হচ্ছে ক্যাসিনো বা জুয়াখেলার পণ্যসামগ্রী আমদানিও। নতুন আমদানিনীতি অনুযায়ী কোনো আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক জাল, ঘষামাজা, মিথ্যা কাগজপত্র দাখিল করে জালিয়াতির মাধ্যমে নিবন্ধন সনদ গ্রহণ, গ্রহণের উদ্যোগ বা আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন করলে আমদানিনীতি আদেশের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আমদানি-রপ্তানিকারককে কালো তালিকাভুক্তি, তার সনদ স্থগিত বা বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য দিলে এক্সপোর্টস কন্ট্রোল অ্যাক্ট, ১৯৫০ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরো জানা গেছে, জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা রক্ষায় সংকুচিত করা হচ্ছে পুরাতন কাপড় আমদানির পথও। তাই নতুন আমদানিনীতিতে সংশ্লিষ্ট ধারায় সংশোধনী এনে পুরাতন কাপড় আমদানির পথ সংকুচিত করা হচ্ছে, যা ২০২৬ সালের পর শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থাৎ পরবর্তী আমদানিনীতি আদেশ ২০২৪-২৭ স্থায়ীভাবে বন্ধ হবে পুরাতন কাপড় আমদানি। এছাড়া বিদ্যমান আমদানিনীতি অনুযায়ী বর্তমানে দেশের তারকামানের হোটেলগুলোরই শুধু অ্যালকোহল ও অ্যালকোহলিক বেভারেজ আমদানির অনুমতি রয়েছে। বাকিদের ক্ষেত্রে রয়েছে অস্পষ্টতা। তবে এবার পর্যটনকে গুরুত্ব দিয়ে শুধু সরকার অনুমোদিত ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত রেস্তোরাঁ, বার, সামাজিক ক্লাব, প্রাইভেট ক্লাব, চিত্তবিনোদন ক্লাবগুলোকেও তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যালকোহল ও অ্যালকোহলিক বেভারেজ আমদানির অস্পষ্ট নির্দেশনাকে স্পষ্ট করার প্রস্তাব রয়েছে। এটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সবুজ সংকেত পেলে সংশ্লিষ্ট ধারায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
নতুন আমদানিনীতিতে বিদ্যমান নীতিমালার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংযোজন-বিয়োজন বা সংশোধন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে আমদানিকারক, রপ্তানিকারক এবং ইনডেন্টরদের নিবন্ধন ফি ও নবায়ন ফি হ্রাস করা হয়েছে। প্রচলিত আমদানি নীতিমালায় একজন আমদানিকারককে প্রতি বছর আমদানি নিবন্ধন সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হয়। তবে নতুন নীতিমালায় এখন থেকে প্রতি বছর নয়, বরং পাঁচ বছর পর একবার নবায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে নিবন্ধন ফি কমানো হয়েছে। এছাড়া এলসির পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতা চুক্তির মাধ্যমে আমদানিকারক পণ্য আমদানি করতে পারবেন। ফলে যে কেউ সহজেই বিদেশ থেকে পণ্যসামগ্রী আমদানির সুযোগ নিতে পারবেন। বিশেষ করে গার্মেন্টস খাতের ব্যবসায়ীদের নমুনা আমদানি সহজ করা হয়েছে।
বর্তমান আমদানিনীতিতে সংশ্লিষ্ট আমদানি-রপ্তানি দপ্তরাধীন এলাকার মধ্যেই শুধু ঋণপত্রের মনোনীত ব্যাংক পরিবর্তনের সুযোগ আছে। তবে নতুন আমদানিনীতিতে আমদানিকারকের জন্য তার ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো ব্যাংক পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হয়েছে। বর্তমান নিয়মে আমদানি ঋণপত্র খোলার পর ঋণপত্রের কপি ১৫ দিনের মধ্যে আমদানি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হয়। নতুন নিয়মে ডিজিটাল মাধ্যমে জমা দিলেই চলবে। এছাড়া বর্তমানে আমদানির জন্য প্রাথমিক সনদের সর্বনি¤œ নিবন্ধন ফি ৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা ধার্য রয়েছে। বার্ষিক নবায়ন ফি দিতে হয় ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা। নতুন আমদানিনীতিতে সর্বনি¤œ প্রাথমিক নিবন্ধন ফি কমিয়ে ৩ হাজার টাকা, বার্ষিক নবায়ন ফি ২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। এছাড়া বছর বছর নবায়নের ঝামেলা যাতে না পোহাতে হয় সেলক্ষ্যে পাঁচ বছরের জন্য নবায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে আমদানিনীতিতে। এজন্য সর্বনি¤œ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নিবন্ধন ফি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রচলিত নীতিতে আমদানিকারকদের বার্ষিক আমদানির পরিমাণ ৫ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে পর্যন্ত মোট ৬টি শ্রেণিতে নিবন্ধন সনদের সুযোগ ছিল। এটি সহজ করার জন্য নতুন নীতিতে ৫টি শ্রেণিতে নিবন্ধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বার্ষিক আমদানিসীমা ৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে সর্বনি¤œ ১০ লাখ থেকে তার ওপরে ৫০ লাখ, ১ কোটি, ৫ কোটি ও ৫ কোটির উপরে এ ৫টি ভাগে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়