নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে রড মিস্ত্রির মৃত্যু

আগের সংবাদ

ওমিক্রনে ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের : রোগী বেড়েছে ৫ থেকে ৬ গুণ, উপসর্গ নিয়েও হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা

পরের সংবাদ

ইসি গঠন বিলে যা আছে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বহুল প্রতীক্ষিত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। গতকাল রবিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের ১৬তম অধিবেশনে আইনটি উত্থাপন করেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক।
উত্থাপিত আইনে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি এর আগে যে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছিলেন এবং তার সুপারিশের ভিত্তিতে যে নিয়োগ হয়েছিল তা বৈধ ছিল বলে গণ্য হবে। একই সঙ্গে সে বিষয়ে আদালতে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। পরে বিলটি সাত দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
বিগত ২০১২ এবং ২০১৭ সালে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতি ইসি নিয়োগ করেছিলেন, সে প্রক্রিয়াকেই আইনের অধীনে

আনা হচ্ছে এ বিলের মাধ্যমে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রস্তাবিত এ আইনে।
আইনমন্ত্রী বিলটির উত্থাপনের জন্য স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর অনুমতি চাইলে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ খসড়া আইনটিকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, এই আইনে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। বিলটি সংসদে তোলার আগে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজসহ জনমত নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। যদিও হারুনের আপত্তি সংসদের ভোটে টেকেনি। হারুনের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, আজিজ মার্কা ইসি দিয়ে বিএনপি ১ কোটি ৩০ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করেছিল। সে কথা ভুলে গেলে চলবে না। এখন আইনটি হলে বিএনপি আর ভুয়া ভোটে বিজয়ী হতে পারবে না বলে এর বিরোধিতা করছে। বিএনপি এখন জনগণের সমর্থনহীন, অন্যকিছু না পেয়ে তারা এটা নেই, ওটা নেই বলে নাচ-গান শুরু করেছে।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নিয়োগ আইন-২০২২-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। গত ১৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইনের খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়।
উত্থাপিত আইনে অনুসন্ধান কমিটি গঠন সম্পর্কে বলা হয়েছে: (১) রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের শূন্য পদে নিয়োগদানের জন্য এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার উদ্দেশ্যে নিম্নবর্ণিত ৬ সদস্য সমন্বয়ে কমিটি গঠন করবেন। (ক) প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক, যিনি অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি হবেন। (খ) প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক। (গ) বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরক্ষক ও নিয়ন্ত্রক। (ঘ) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন এবং (ঙ) রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত দুইজন বিশিষ্ট নাগরিক। তিনজন সদস্যের উপস্থিতিতে অনুসন্ধান কমিটির সভার কোরাম গঠিত হবে। অনুসন্ধান কমিটির সভায় উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যা গরিষ্ঠের ভোটের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে এবং ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী সদস্যের দ্বিতীয় বা নির্ণয়ক ভোট দেয়ার ক্ষমতা থাকবে। অনুসন্ধান কমিটি গঠনের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবেন।
অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি : (১) অনুসন্ধান কমিটির স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে এবং এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, সততা ও সুনাম বিবেচনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগদানের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। (২) অনুসন্ধান কমিটি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দেয়ার উদ্দেশ্যে এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করবে এবং এতদুদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে। (৩) অনুসন্ধান কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে রাষ্ট্রপতির কাছে ২ (দুই) জন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে।
বিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের যোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে : প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগদানের জন্য কোনো ব্যক্তিকে সুপারিশ করার ক্ষেত্রে তাহার নিম্নরূপ যোগ্যতা থাকতে হবে, যথা : (ক) তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। (খ) তার বয়স ন্যূনতম ৫০ (পঞ্চাশ) বছর হতে হবে। (গ) কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা-সরকারি বা বেসরকারি পদে তাহার অন্যূন ২০ (বিশ) বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের অযোগ্যতা : প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য কোনো ব্যক্তিকে সুপারিশ করা যাবে না, যদি (ক) তিনি কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষিত হন। (খ) তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় হতে অব্যাহতি লাভ না করে থাকেন; (গ) তিনি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন। (ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন ২ (দুই) বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। (চ) আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট-১৯৭৩ বা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার-১৯৭২ এর অধীনে কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়ে থাকেন। আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ছাড়া প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। আইনে আরো বলা হয়েছে- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কার্য-সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায় দেবে।
আইনের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে : বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে বিধান রয়েছে যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং ওই বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ করবেন। সংবিধানের উক্তরূপ বিধান বাস্তবায়নের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরার উদ্দেশ্যে একটি আইন প্রণয়ন করা আবশ্যক। সেলক্ষ্যে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ শীর্ষক বিলের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করার জন্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন, অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের জন্য যোগ্যতা-অযোগ্যতা সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া, প্রস্তাবিত বিলে অনুসন্ধান কমিটি কর্তৃক রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের নাম সুপারিশ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করার বিধান রাখা হয়েছে। বিলটিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইতঃপূর্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি ও তৎকর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলি এবং ওই অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগের হেফাজত সংক্রান্ত বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদান স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, গণতন্ত্র সুসংহত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে এবং জনস্বার্থ সমুন্নত হবে মর্মে আশা করা যায় বলে বিলে বলা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়