নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে রড মিস্ত্রির মৃত্যু

আগের সংবাদ

ওমিক্রনে ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের : রোগী বেড়েছে ৫ থেকে ৬ গুণ, উপসর্গ নিয়েও হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা

পরের সংবাদ

আলোচনার কেন্দ্রে ইসি আইন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : বেশ কিছু দিন ধরেই নির্বাচন কমিশন আইন নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপেও প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল এই আইন প্রণয়ন। বিভিন্ন আলোচনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও সার্চ কমিটি গঠনের আগেই আইন করার তাগিদ দিয়ে আসছেন। সংলাপের শেষ দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চার প্রস্তাবের একটি আইন প্রণয়নের প্রস্তাবে আলোচনা আরো জোরাল হয়। সব ছাপিয়ে গতকাল রবিবার আইনটি সংসদে ওঠার পর সবার দৃষ্টি এখন সেদিকেই। যত দ্রুত সম্ভব আইনটি বিলে পরিণত করে সে অনুযায়ী সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠন করতে চায় সরকার। যদিও সাবেক বিরোধী দল বিএনপি উত্থাপিত আইনটিকে ‘তামাশা’ বলে অভিহিত করে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের পুরনো কাসুন্দিই ঘাটছে। তবে সরকারের পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। সেই সঙ্গে, নিরপেক্ষ, নির্দলীয়, যোগ্য, দক্ষ ব্যক্তিদের সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশনে রাখার বিধান যুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, গতকাল রবিবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনসংক্রান্ত আইন সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া ও যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সিইসি ও কমিশনার হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত আইনে ৩টি যোগ্যতা এবং ৬টি অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে। এর আগে সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠন করা সর্বশেষ দুটি কমিশন গঠনেরও বৈধতা দেয়া হয়েছে এ আইনে। বলা হয়েছে, এর আগে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি, তাদের কাজ এবং তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সিইসি ও কমিশনার নিয়োগ বৈধ ছিল বলে গণ্য হবে এবং এ বিষয়ে আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। আইনটি উত্থাপনের বিরোধিতা করে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, যে বিল আইনমন্ত্রী এনেছেন, তা জনগণের প্রত্যাশা, রাজনৈতিক দলগুলোর এবং সুশীল সমাজের যে প্রত্যাশা, তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য একটি আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে আসছিলাম। আইনমন্ত্রী যে বিল উত্থাপন করেছেন, তা নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকরা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন গঠন আইন নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন অবান্তর বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাদের দাবি বিএনপির কাজই হচ্ছে সরকারের বিরোধিতা করা। আন্দোলনে ব্যর্থ, রাজপথে ব্যর্থ হয়ে তারা আবোলতাবোল বকছে। এত অল্প সময়ে নির্বাচন কমিশন নিয়ে আইন তৈরি সম্ভব কিনা, সমস্যা আরো ঘনীভূত হবে কিনা- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আইন পাস হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় রয়েছে। আর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে। এক্ষেত্রে আইন হলে

সমস্যা হবে কেন?
এদিকে ২০ ডিসেম্বর থেকে রাষ্ট্রপতির ডাকে সাড়া দিয়ে বঙ্গভবনে গিয়ে ১৮টি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নিয়েছে। সংলাপে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে দলীয় প্রস্তাব তুলে ধরেছে। কোনো কোনো দল সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বললেও কেউ কেউ আবার আইন প্রণয়ন করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। আর বিএনপিসহ ৭টি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নেয়নি। এই ৭টি দলের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), এলডিপি, জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বিএনপি। আওয়ামী লীগ, জাসদ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, ন্যাপসহ ১৭টি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেছে।
আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের দাবি ছিল, প্রত্যাশা ছিল আইন করার। ইতিবাচক ঘটনা। এখনো আইন পাস করা সম্ভব। যে সময় রয়েছে এই সময়ের মধ্যেই আইন তৈরি সম্ভব এবং আইনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করাও সম্ভব। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আইনের যদি কোনো সংযোজন-বিয়োজন থাকে সেসব বিশ্লেষণ করে আমাদের দলের তরফ থেকে আমরা উত্থাপন করব। তবে আইনকে নাকচ করার প্রস্তাব যারা দিচ্ছে তারা নৈরাজ্যের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এদিকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ বর্জনকারী দল বিএনপি শুরু থেকেই সংলাপ, আইন প্রণয়ন, সার্চ কমিটির বিরোধিতা করে আসছে। দলটির মতে, সবই তামাশা মাত্র। এ আইন কোনো কাজে আসবে না। যে আইন যাই করুক না কেন অর্থহীন মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, যেহেতু এই সরকারের অধীনে অতীতে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য হয়নি, অতএব এই আইনের মাধ্যমে যা করবে তাও গ্রহণযোগ্য হবে না। বিকল্প হিসেবে আমাদের ঘোষিত নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন চাই। তারা ঠিক করবে ইসি কী হবে, নির্বাচন কীভাবে করবে। আমাদের আন্দোলন চলমান রয়েছে। ভবিষ্যতে আরো কর্মসূচি থাকবে।
ইসি গঠনে নতুন সার্চ কমিটির সব লোক আওয়ামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সার্চ কমিটি গঠনে যে আইন সেটি তো পরিচালনা করবে সরকার এবং তার নির্বাহী বিভাগ। যারা আইন প্রণয়ন করবেন তারা তো সরকারের কথায় করবেন। আওয়ামী চেতনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ না হলে আইন প্রণয়ন করা যায় না। আর যে সার্চ কমিটি হবে সেটি হবে আওয়ামী বাকশালী চেতনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ। মুজিবকোট পরা লোকরাই সরকারের সার্চ কমিটিতে থাকবেন। এই সার্চ কমিটি হারিকেন দিয়ে খুঁজে খুঁজে মুজিবকোট পরা লোকদের বের করে আনবে।
সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো আইন প্রণয়নের কথা বললেও নতুন আইন সংকট সমাধানে কাজে আসবে না বরং সংকট সৃষ্ট করবে বলে মনে করছেন সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। জানতে চাইলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। সরকার যে আইন চায় পাস করতে পারবে, এতে কোনো সমস্যা নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, আইন হওয়ার পরও সংকটের সমাধান হবে কিনা। আমাদের যে আস্থার সংকট রয়েছে, তা দূর হবে কিনা? আমার মনে হয়, যে প্রস্তাব হয়েছে, তাতে আস্থার সংকট দূর হবে না বরং সংকট আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। ২০১৭ সালে যে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল তারই একটা রূপ এই আইন। আমরা এক রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গিয়ে অন্য গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব না। সমস্যার সমাধান হবে না। আইনটা আর প্রজ্ঞাপনটার মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। বরং সংকট সমাধানে সব রাজনৈতিক দল এবং সব অংশীজনের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন।
অবশ্য এমন বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে খসড়া আইনে উত্থাপনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। পাশাপাশি নতুন আইনে কিছু বিধান যুক্ত করার পরামর্শ এই বিশেষজ্ঞের। জানতে চাইলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আইনটিকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে চাই। প্রত্যাশাপূরণের জন্য একটা পূর্বশর্ত পূরণ করা দরকার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যাদের নিয়োগ দেয়া হবে- তারা পেশাগত জীবনে উৎকর্ষতা সাধনে বিশেষ গুণাবলি অর্জন করেছেন, কোনো প্রকার দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকবে না, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, জনগণের কাছে আস্থাহীনতার সংকট হতে পারে এমন কোনো রেকর্ড থাকবে না- এসব বিষয় নিশ্চিত করার জন্য আইনের মধ্যে একটি ধারা সম্পৃক্ত করতে পারলে আমার মনে হয় আইনটি যথার্থ হবে। আরেকটি বিষয়, সার্চ কমিটি ও ইসিতে অন্তত দুজন করে নারী সদস্য থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়