বিজিবির অভিযান : কক্সবাজারে উদ্ধার ৩০ কোটি টাকার আইস

আগের সংবাদ

আলোচনার কেন্দ্রে ইসি আইন

পরের সংবাদ

৯ ছাত্রীসহ ১৬ অনশনকারী হাসপাতালে : প্রতীকী কাফনের কাপড় পরে শিক্ষার্থীদের মিছিল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফারুক আহমদ, সিলেট ব্যুরো ও নাজমুল হুদা, শাবি প্রতিনিধি : টানা তিন দিন পেরিয়ে গেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনশন। অনশনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯ ছাত্রীর ৯ জনই হাসপাতালে এবং ছেলেদের ১৪ জনের মধ্যে ৭ জনসহ ১৬ শিক্ষার্থী সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ও গুরুতর বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে কাঁধে প্রতীকী লাশ বহন করে কাফন পরিধান করে মৌন মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে ঢাকাতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় ও উপচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেনও তারা। অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন শাবির শিক্ষক প্রতিনিধিদল।
গতকাল শনিবার টানা তৃতীয় দিনের মতো অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। অনশনরত শিক্ষার্থীদের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্যালাইন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন শিক্ষার্থীর অবস্থা খুবই গুরুতর ও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন অনশনস্থলে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মো. মুস্তাকিম। তিনি জানান, ১৬ জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ শিক্ষার্থী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে অনশনে আবার ফিরেছেন।
তিনি বলেন, তিন দিন পেরিয়ে গেছে তাদের অনশন। ইতোমধ্যে

শিক্ষার্থীদের গøুকোজ লেভেল কমে গেছে। এজন্য স্যালাইন ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের প্রোটিন লেভেলও কমতে শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন মানুষের প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রোটিন ও ফ্যাটের প্র?য়োজন হয়। যা তাদের ঘাটতি হচ্ছে। শিগগিরই শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাসপাতালে অবস্থানরত ৩ শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ও গুরুতর বলেও জানান তিনি।
এদিকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল বিকালে কাফনের কাপড় পরিধান ও প্রতীকী লাশ কাঁধে নিয়ে প্রতিবাদী মৌন মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে শিক্ষার্থীরা জমায়েত হতে শুরু করে। পরে গোলচত্বর থেকে কাফনের কাপড় পরিধান করে একটি প্রতীকী লাশ নিয়ে প্রতিবাদী মৌন মিছিল বের করেন তারা। মৌন মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে একইস্থানে এসে শেষ হয়। পরে আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে মোমবাতি প্রজ¦ালন করেন।
মৌন মিছিলের উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষে হাসিবুর রহমান বলেন, আমাদের এ কাফন পরিধান একটা প্রতীকী চিত্র মাত্র। কিন্তু কিছুক্ষণ পর এ চিত্র বাস্তবে রূপও নিতে পারে। আমাদের যারা ভাইবোন অনশনে রয়েছে, তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন চিত্র সত্যও হতে পারে। অনশনে যারা আছে তারা উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন ভাঙবে না বলে জানিয়েছে।
এদিকে আপনজন নানার মৃত্যুতেও অনশন ভাঙেননি অনশনরত শিক্ষার্থী মরিয়ম রুবি। তবে নানার মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। মরিয়মের এক সহপাঠী জানান, মরিয়ম সিলেট এম এ জি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর। তার নানার মৃত্যুর সংবাদ শুনে মরিয়ম আরো ভেঙে পড়েছে। তারপরও অনশন ভাঙেনি সে। উপাচার্যের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত অনশন ভাঙবে না বলে জানিয়েছে।
এদিকে গত শুক্রবার বিকালে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের মুঠোফোনে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষার্থীরা। পরে অনশনরত শিক্ষার্থীদের রেখে কেউই ঢাকাতে আলোচনা করতে যাবে না বলে জানান। তবে অনলাইন বা ভার্চুয়ালি আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে অনশনস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের অবস্থা দেখতে শিক্ষামন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ঢাকায় যাওয়া প্রত্যাখ্যানের খবর জেনে রাত ৮টার দিকে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল শিক্ষামন্ত্রীর নতুন বার্তা নিয়ে পুনরায় ক্যাম্পাসে আসেন। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সরকার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসতে চাচ্ছেন। শিক্ষামন্ত্রী সিলেটে আসতে রাজি। তবে তার পরিবারের সদস্য অসুস্থ থাকায় একটু সময় লেগে যাবে।
এদিকে শিক্ষার্থীরা অনশনে অধিকমাত্রায় অসুস্থ। এজন্য স্বল্প সময়ে যে কোনো উপায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি বসতে চান শিক্ষামন্ত্রী। প্রয়োজনে আকাশপথে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের ঢাকাতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ৮টা) শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বসার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তবে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা ঢাকাতে না গেলেও শিক্ষকদের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ঢাকায় পৌঁছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকাতে আগত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিনিধিদলের এক সদস্য জানান, শিক্ষক প্রতিনিধিদল শনিবার সকাল থেকে ঢাকাতে অবস্থান করছেন। শিক্ষার্থীরা ঢাকাতে যাবেন এমন প্রত্যাশাই সারাদিনই বসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে দিন শেষে শিক্ষার্থীরা ঢাকাতে না গেলে শিক্ষক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে শনিবার সন্ধ্যায় আলোচনায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষক প্রতিনিধি ও শিক্ষামন্ত্রীর মধ্যে কি ধরনের আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি।
এদিকে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের পক্ষে এক শিক্ষার্থী বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন ও অনশন করছে। সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা চাই, এ ভিসি পদত্যাগ করে আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে সসম্মানে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান। এমনকি শিক্ষার্থীরা গণঅনশনের দিকে যেতে পারে বলেও জানান তিনি। এ সময় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বসতে চাই। তবে আমাদের ভাইবোনদের রেখে ঢাকা যেতে পারব না। ভার্চুয়ালি আলোচনা হলে ভালো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়