বিজিবির অভিযান : কক্সবাজারে উদ্ধার ৩০ কোটি টাকার আইস

আগের সংবাদ

আলোচনার কেন্দ্রে ইসি আইন

পরের সংবাদ

রোমাঞ্চ ছড়িয়ে জিতল কুমিল্লা : চট্টগ্রামে হোঁচট খেল রিয়াদরা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : শীতের আমেজে উত্তাপ ছড়াচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) অষ্টম আসর। গতকাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও সিলেট সানরাইজার্সের মধ্যকার ম্যাচটি ছিল টান টান উত্তেজনায় ঠাসা। অল্পপুঁজি নিয়েও শক্তিশালী ইমরুল কায়েসের কুমিল্লাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল মোসাদ্দেক হোসেনের সিলেট। তবে লো স্কোরিং এই নাটকীয় ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে ইমরুল বাহিনী। এদিন ব্যাটারদের ব্যর্থতায় মাত্র ৯৬ রানে অলআউট হলেও স্পিনারদের কল্যাণে ম্যাচটি প্রায় জিতেই গিয়েছিল মোসাদ্দেক বাহিনী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বোলিংয়ে ২ উইকেটের পর ব্যাটিংয়ে ১৬ রান করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন অফ স্পিনার নাহিদুল। এছাড়া দ্বিতীয় ম্যাচে মিনিস্টার ঢাকার মুখোমুখি হয় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে বেশ দাপটে খেলে চট্টগ্রাম। এদিন ৮ উইকেট হারিয়ে উইল জ্যাকস, মিরাজ ও সাব্বিরের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ১৬১ রান করে চট্টগ্রাম। জবাবে ১৩১ রানে গুটিয়ে যায় ঢাকা। ফলে ৩০ রানে জিতল চট্টগ্রাম।
এদিকে বিপিএলের গত কয়েক আসর ধরেই মুশফিক ও তামিমের মধ্যে রানের লড়াই চলছে। এই লড়াইয়ে কখনো এগিয়ে থাকছেন তামিম আবার মুশফিক। এবার অষ্টম আসরের দ্বিতীয় ম্যাচে মুশফিককে টপকে গেছেন দেশসেরা ওপেনার। গতকাল ১০ রান দূরে থাকতে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন তামিম। শুরুতে কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে খেললেও কয়েক ওভার পরেই দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে মুশিকে ছাড়িয়ে যান তিনি।
বঙ্গবন্ধু বিপিএলের অষ্টম আসর শুরুর আগে ২ হাজার ২৭৪ রান নিয়ে শীর্ষে ছিলেন মুশফিক। মিনিস্টার ঢাকার হয়ে খেলতে নামা তামিম পিছিয়ে ছিলেন ৬০ রানে। প্রথম ম্যাচে ৫০ রানে আউট হলে অপেক্ষা বাড়ে তার। তবে খুব বেশি সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়নি দেশসেরা ওপেনারকে। গতকাল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচেই এই মাইলফলকে পৌঁছান তিনি। মেহেদী হাসান মিরাজকে লং অনে বিশাল এক ছক্কায় ছুঁয়ে ফেলেন মুশফিককে। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে বিপিএলের শীর্ষ রান সংগ্রাহক হয়ে যান তামিম। আর মুশফিক ৮৬ ম্যাচর ৮২ ইনিংসে ব্যাট করে ২ হাজার ২৮০ রান করেছেন। এই উইকেটকিপার ব্যাটারের চেয়ে ১১ ইনিংস কম খেলে পেছনে ফেলেছেন তামিম। বিপিএলে স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসও তামিমের। ২০১৯ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ১৪২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
এদিকে গতকাল নিজেদের প্রথম ম্যাচে কুমিল্লাকে কিছুটা হলেও চমকে দিয়েছে সিলেট। ব্যাটিংয়ে নিজেরা ব্যর্থ হলেও বোলিংয়ে কুমিল্লার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে ভয় ধরিয়ে দেয় তারা। যদিও অল্পপুঁজি নিয়ে শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি সিলেট, কিন্তু ঘাম ঝরিয়েছে কুমিল্লার। সিলেটের দেয়া মামুলি রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে কুমিল্লাকে চেপে ধরেন সিলেটের বোলাররা। কুমিল্লার বড় তারকা ফাফ ডু প্লেসি কিছুই করতে পারেননি। তাসকিন আহমেদের বেশ কিছু বল ব্যাটে সংযোগই করতে পারেননি প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান। ৭ বলে ২ রান করে সোহাগ গাজীর শিকার হন তিনি। মুমিনুল হক ও ইমরুল কায়েস আগ্রাসীভাবে থাকলেও দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছেই বিদায় নেন। মুমিনুল ১৫ ও ইমরুল ১০ রান করেন। বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও ভালো করেছেন নাহিদুল ইসলাম। তার ১৬ বলে ১৬ রানের দায়িত্বশীল ইনিংসে জয়ের পথ তৈরি হয় কুমিল্লার। এছাড়া করিম জানাত খেলেন ১৩ বলে ১৮ রানের ইনিংস। সিলেটের সব বোলারই দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। অধিনায়ক মোসাদ্দেক সবচেয়ে কৃপণ বোলিং করেছেন। তিনি ৪ ওভারে ১০ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেন। তবে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেছেন বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম। ৪ ওভারে ১৭ রান খরচ করে তার শিকার ৩ উইকেট। এছাড়া সোহাগ গাজী ২টি ও তাসকিন আহমেদ নেন এক উইকেট।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সিলেট শুরুটা করে হতাশাজনক। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে দলীয় ৭ রানে ওপেনার এনামুল হকের বিদায়ে শুরু হয় একের পর এক উইকেট পতন। কুমিল্লার বোলিংয়ের সামনে সিলেট বড় জুটি গড়তে পারেনি। ফলে ১৯.১ ওভারে ৯৬ রানে থামতে হয় সিলেটকে। স্কোরবোর্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ স্কোরার কলিন ইনগ্রাম। ২১ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২০ রান করেন তিনি। রবি বোপারার ব্যাট থেকে আসে ১৭ রান।
কুমিল্লার বোলারদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান, নাহিদুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম ২টি করে উইকেট নেন।
গতকাল দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে চট্টগ্রামের দেয়া ১৬২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতে ফিরে যান আফগান ব্যাটার মোহাম্মদ শেহজাদ (২)। অন্য প্রান্তে থাকা তামিম তখন অস্বস্তি নিয়ে ব্যাটিং করছিলেন। শুরুর অস্বস্তি কাটিয়ে উঠে টানা দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ৪২ বলে পাওয়া এই হাফসেঞ্চুরি অবশ্য দলের কোনো কাজে আসেনি। শেষ পর্যন্ত ৪৫ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৫২ রানে আউট হন এই ওপেনার।
তামিম-নাঈম-শুভাগত হোম-মাহমুদউল্লাহদের বিদায়ের পর আশা ছিল ক্যারিবীয় তারকা আন্দ্রে রাসেল কিছু একটা করবেন। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি। বোলিং-ফিল্ডিংয়ে ব্যর্থ রাসেল এই ম্যাচেও ১০ রানের বেশি করতে পারেননি। রাসেলের আউটের পর লেট অর্ডার ব্যাটাররা কেবল হারের ব্যবধানই কমাতে পেরেছে। শেষ পর্যন্ত ১৯.৫ ওভারে ১৩১ রানে থামে ঢাকার ইনিংস।
চট্টগ্রাম বোলারদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম ৩৪ রানে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া নাসুম আহমেদ ৯ রানে তিনটি উইকেট নেন। মুকিদুল ও নাঈম একটি করে উইকেট নেন।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা চট্টগ্রাম লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করায়। ওপেনার লুইস ২ রানে আউট হলেও আরেক ওপেনার উইল জ্যাকসের তাণ্ডবে ভালো শুরু পায় চট্টগ্রাম। ২৪ বলে ঝড়ো ৪১ রানে স্কোরবোর্ডের গতিপথ ঠিক করে দেন জ্যাকস। চার ৬ ও ২ ছক্কায় জ্যাকস নিজের ইনিংসটি সাজিয়েছেন। সাব্বির রহমান ১৭ বলে ২৯, মেহেদী হাসান ২৫ বলে ২৫ এবং বেনি হাওয়েল ১৯ বলে ৩৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন।
ঢাকার বোলারদের মধ্যে আন্দ্রে রাসেল কোনো অবদান রাখতে পারেননি। ১ ওভার বোলিং করে ১৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন ক্যারিবীয় এই পেসার। রুবেল হোসেন ২৬ রান খরচ করে তিন উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া আরাফাত সানি, ইসুরু উদানা, শুভাগত হোম, মাহমুদউল্লাহ একটি করে উইকেট নিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়