বিজিবির অভিযান : কক্সবাজারে উদ্ধার ৩০ কোটি টাকার আইস

আগের সংবাদ

আলোচনার কেন্দ্রে ইসি আইন

পরের সংবাদ

বরিশালে চোখ রাঙাচ্ছে করোনা শনাক্তের হার ৪৩.৩৯ : বিভাগের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল থেকে : বরিশালে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হার। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরটিপিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের হারও ঊর্ধ্বমুখী। যেন চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনা শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৪৩.৩৯ শতাংশে। এদিকে করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোতে করোনা ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে হাসপাতাল সূত্র বলছে, বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালটি করোনা ডেডিকেটেড হলেও হাসপাতালের পুরনো ভবনটি ভেঙে ফেলায় শুধু শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটটি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া বিভাগের সব হাপসাতালকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।
হাসপাতালের পরিচালক কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নানা উপসর্গ নিয়ে ৩ জন রোগী করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিল চলতি মৌসুমে সর্বাধিক ১৮ জন রোগী।
এদিকে মেডিকেল কলেজের আরটিপিসিআর ল্যাবে গত শুক্রবার রাতে ১০৬ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে ৪৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৩.৩৯ ভাগ। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে পিসিআর ল্যাবে শনাক্তের হার ছিল ৩২.০৮ ভাগ, বুধবার ২৪.৪৫ ভাগ, মঙ্গলবার ২৬.৩৮, সোমবার ১৭.৭২, রবিবার ১২.২২ এবং গত শনিবারের রিপোর্টে ৫.০৪ ভাগ করোনা শনাক্ত হয়।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ৪৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। অথচ গত ১৫ জানুয়ারি তা ছিল মাত্র ৮ জন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনা সংক্রমণের হার এত বেড়ে যাওয়ার পেছনে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এদিকে সংক্রমণের হার যখন ঊর্ধ্বমুখী তখন বেশির ভাগ মানুষকেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা

করতে দেখা যায়। বিশেষ করে দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চগুলোতে রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কোনো যাত্রীই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। গতকাল বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ ও নৌবন্দর ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। যদিও লঞ্চ ও বাস মালিক কর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে তাদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
অন্যদিকে বরিশাল জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করার পাশাপাশি মাস্ক বিতরণ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে রয়েছে পুরোই উদাসীন।
সূত্রমতে, গত নভেম্বরে বরিশালে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর হাসপাতালগুলোর করোনা ওয়ার্ডের কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছিল। কিন্তু জানুয়ারির প্রথম থেকে ধীরে ধীরে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আবার তা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, এ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ৩০০ শয্যা রয়েছে। এর বেশি রোগীকে এখানে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে গত বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালে বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়েছিল। হাসপাতালটিতে ১০০ শয্যা ছিল। কিন্তু এই হাসপাতালের পুরনো ভবনটি ভেঙে ফেলায় এখন আর এই হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড খোলা সম্ভব নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে না মানলে সংক্রমণ আগের মতোই গতি পেতে পারে। এ জন্য এখন সবাইকে জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দিকে নজর দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো জানান, এ সময়ে সংক্রমণ বৃদ্ধির ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের পূর্বসতর্কতা ছিল। এজন্য বিভাগের সব হাসপাতালকে করোনা ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে বেশির ভাগ হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখেই কার্যক্রম এগোচ্ছে। প্রাথমিকভাবে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে, সেখানে স্থান সংকুলান না হলে পরবর্তী সময়ে বিকল্প চিন্তা করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শেবাচিমে করোনা ওয়ার্ড চালুর পর ৭ হাজার ৪৭৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে করোনা পজেটিভ ছিল ৪২৮ জনের। এছাড়া মহামারি শুরুর পর থেকে বরিশাল বিভাগে এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৫৫৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪৪ হাজার ৬৫৬ জন আর মৃত্যু হয়েছে ৬৭৯ জনের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়