বিজিবির অভিযান : কক্সবাজারে উদ্ধার ৩০ কোটি টাকার আইস

আগের সংবাদ

আলোচনার কেন্দ্রে ইসি আইন

পরের সংবাদ

কর্মসংস্থান ও গ্রামমুখী উন্নয়ন দাবি স্থানীয়দের : বকশীগঞ্জে বিলুপ্তির পথে পাহাড়ি সংস্কৃতি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাশেদুল ইসলাম রনি, বকশীগঞ্জ (জামালপুর) থেকে : ‘ভূতেও এখন পাহাড়ে থাকতে ভয় পায়। দিনের বেলাতেই কাউকে পাওয়া যায় না। সবাই এখন শহরে থাকে। কেউ কাজ করে। আবার কেউ পড়াশোনা করে। আগে অনেক লোক ছিল। এখন পাহাড়ের মধ্যে কোনো নিরাপত্তা নেই। দিনের বেলাও কোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটলে কেউ বুঝতেই পারবে না কী হচ্ছে এলাকার মধ্যে। তাই আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি।’ ভোরের কাগজ প্রতিবেদককে কথাগুলো বলছিলেন জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের দিঘলাকোনা গ্রামের জয় দাংগো।
শুধু জয় দাংগো নয়। সেই গ্রামের পাহাড়ি জনপদের আরেক বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সি পুদি মারাক। সবুজ পাহাড়ের গা ঘেঁষা বাড়িটিতে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ছোট একটি সুখের সংসার ছিল তার। সেই ছোট সংসারটি এখন আরো ছোট হয়ে এসেছে। পাহাড়ে কর্মসংস্থান না থাকায় জীবিকার তাগিদে রাজধানী ঢাকায় কাজ করেন তার স্ত্রী ও সন্তানরা। শেষ জীবনে পাহাড়ের মায়া না ছাড়তে পারায় ছোট বাড়িটিতে এখন একাই থাকেন পুদি মারাক। বাড়ির কাজ ও বাগানের পরিচর্যা করেই জীবনের শেষ দিনগুলো পার করছেন তিনি।
পুদি মারাক বলেন, ‘আগে আমগরে কত সুখের সংসার ছিল। এখন আমি একাই থাকি। আমার ছেলেমেয়েরা সব বাইরে থাকে। কাজ-কাম করে। বছরে দুই-একবার আহে। আবার যায়গা। আমি এখন একা মানুষ। কোথায় যামু? পাহাড়ের মায়া ছাড়তে পারতাছি না। তাই আমার শেষ জীবনটা এখানেই কাটামু।’ সীমান্ত ঘেঁষা এই পাহাড়ি জনপদে শত বছরের অধিক সময় ধরে হাজারো গারো জনগোষ্ঠীর বাস। পাহাড়ে জুম চাষ, ফল, ফুল ও ফসল উৎপাদন করে বিক্রি এবং কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করত এই ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর পরিবারগুলো। তবে পাহাড়ে জুম চাষ বন্ধসহ নানা কারণে বনভূমি ব্যবহারে নিষেধ থাকায় কর্মসংস্থানের অভাব দেখা দিয়েছে এসব অঞ্চলে। ফলে জীবিকার তাগিদে পাহাড় ছেড়ে এখন শহরমুখী হচ্ছে আদিবাসী পরিবারের কর্মক্ষম প্রায় প্রতিটি সদস্য। স্থানীয়দের দাবি, অধিকাংশ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী শহরমুখী হওয়ায় এখন ধ্বংসের মুখে বনভূমি। বিলুপ্তির পথে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। এছাড়া এই অঞ্চলে দেখা দিয়েছে নিরাপত্তাহীনতার।
পাহাড়ি এলাকা সাতানিপাড়ার বাসিন্দা নপু মারাক নপ্তরীও বলেন, ‘আগে আমাদের কৃষ্টি-কালচার ছিল, এগুলা এখন লালন করতে পারি না। কারণ আমাদের জুম চাষ নেই। পাহাড়ে কাজ নেই। কেউ থাকে না। আগে কিছুদিন পরপর আমাদের এখানে নাচ-গান হতো। এখন বছরে একদিনও কেউ মিল হতে পারি না। এই সমস্ত কারণে আমাদের কৃষ্টি-কালচারও সমস্তই বিলুপ্তির পথে।’ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর নেতাদের দাবি, সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ গ্রামমুখী উন্নয়ন ও বনভূমি ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হলেই ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীরা আবারো ফিরে আসবে পাহাড়ে। বিলুপ্তি হওয়ার পথ থেকে রক্ষা পাবে তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।

ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পিটিশন সাংমা বলেন, এখানে কোনো কর্মসংস্থান নেই। আগে বনে আমরা জুম চাষসহ বিভিন্ন ফসল করতে পারতাম। নানা বিধিনিষেধের কারণে এখন আমরা সেখান থেকে বঞ্চিত। তাই ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী প্রতিটি ঘর থেকে শহরমুখী হচ্ছেন জীবিকা নির্বাহের জন্য। সরকার যদি আমাদের জন্য বন ব্যবহারের অনুমতি দেয় তাহলে আমরা ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী চিরস্থায়ীভাবে আবার আগের মতো বসবাস করতে পারব।
এ বিষয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুন মুন জাহান লিজা বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর যারা বকশীগঞ্জে আছেন, তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে একটি কালচারাল একাডেমিসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি দিয়েছে। এতে করে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর জনগণ তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা করতে পারবে।’
বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী কামালপুর ইউনিয়নে প্রায় দেড় হাজার ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী বসবাস থাকলেও সেখানে এখন বাস করছেন মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ জন ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়