সুরেশ চন্দ্র রায়, শিবালয় (মানিকগঞ্জ) থেকে : শিবালয় উপজেলার এক সফল কুলচাষির নাম আব্দুল আজিজ। হাজিরবাঁধা গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোট বেলা থেকেই কৃষি কাজের প্রতি তার বেশ আগ্রহ ছিল। কিন্তু যমুনা নদী সংলগ্ন এলাকায় বাদাম আর মিষ্টি আলু ছাড়া তেমন কোনো ফসল ভালো
জন্মে না।
সীমিত জমিতে তার যে ফসল উৎপাদন হতো তাতে তার নুন আনতে পানতা ফুরানোর উপক্রম। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট সংসারে তার অভাব অনটন ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। তিনি ২০০৮ সালে কয়েকজন সুহৃদ বন্ধুবান্ধব আর উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে শুরু করেন আপেল কুল চাষ। ৪ বিঘা জমিতে ৩২০টি কুল গাছের চারা রোপণ করে শুরু হয় তার কুল যাত্রা। পরের বছর থেকে অভাবের সঙ্গে তাকে আর সংগ্রাম করতে হয়নি। এখন তার কুল বাগানের পরিধি ৮ বিঘা। ৪ বিঘা নিজের আর বাকি ৪ বিঘা অন্যের কাছ থেকে নেয়া।
আব্দুল আজিজ জানান, প্রতি মৌসুমে গড়ে বিঘাপ্রতি ৪০-৫০ মণ কুল পাওয়া যায়। এ বছর ২ হাজার টাকা মণ দরে পাইকারি বিক্রি করছেন। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। এপ্রিল মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে। ফলন আগের চেয়ে অনেকটা কমে গেছে। কারণ গাছগুলোর বেশ বয়স হয়েছে। তবে আগামী ৫ বছর পর্যন্ত এ গাছ থেকে ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তিনি। আব্দুল আজিজ আরো জানান, বাজারে অনেক আপেল কুল রয়েছে। কিন্তু আমার বাগানের কুল সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ আমার বাগানের ফল শতভাগ কীটনাশকমুক্ত। তবে আমার বাগানটি যমুনা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় ভাঙনের শঙ্কায় দিন কাটে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং উপজেলা কৃষি অফিস যদি আমার বাগানের দিকে একটু নজর দেয় তবে বিশেষভাবে উপকৃত হবো। শিবালয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. আলাউদ্দিন আলাল বলেন, হাজিরবাঁধা গ্রামের আব্দুল আজিজ একজন সফল কৃষক। ব্যবসা বাণিজ্য আর চাকরির পিছনে না ছুটে কৃষি কাজ করেও যে জীবনে সফলতা পাওয়া যায় তার জলন্ত প্রমাণ আপেল কুলচাষি আজিজ। শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান দৈনিক ভোরের কাগজকে জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য মাঠে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা আজিজ মিয়ার কুল বাগানের খোঁজখবর রাখছি এবং যথাযথ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের পরামর্শে আব্দুল আজিজ এখন একজন সফল কুলচাষি।