ক্ষমা চেয়েছেন চীনা নাগরিক, টাকা চাননি সার্জেন্ট

আগের সংবাদ

জাতীয় পুরুষ বেসবল শুরু

পরের সংবাদ

রাজধানীসহ ৬ জেলায় দুর্ঘটনা : এক পরিবারের ৩ জনসহ সড়কে ঝরে গেল ১১ প্রাণ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইলে বাসের ধাক্কায় সিএনজি অটোরিকশা আরোহী একই পরিবারের তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো দুজন। এছাড়া রামপুরায় পিকআপ ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মধ্যে সংঘর্ষে এক অটোচালক, নওগাঁ জেলার পতœীতলায় ট্রাক্টরচাপায় নারীসহ দুই ভ্যানযাত্রী, মাদারীপুরের ধুরাইলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই ভাই, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় অটোরিকশার ধাক্কায় এক বাইসাইকেল আরোহী, নীলফামারীর সৈয়দপুরের বাইপাস সড়কে মাইক্রোবাস চাপায় এক মোটরসাইকেল আরোহী, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ড্রাম ট্রাকের ধাক্কায় আরো এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের জন্য নিহতদের লাশগুলো সংশ্লিষ্ট এলাকার হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
একই পরিবারের ৩ জন নিহত : গতকাল সকাল ৭টার দিকে যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইলে বাসের ধাক্কায় সিএনজি অটোরিকশা আরোহী একই পরিবারের তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- আব্দুর রহমান (৬৫), তার মেয়ে শারমিন আক্তার (৩৫), জামাতা রিয়াজুল (৪৫)। এ ঘটনায় নিহত শারমিনের মেয়ে বৃষ্টি আক্তার (৬) ও অটোরিকশাচালক রফিক (৪২) আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত শারমিনের বড় ভাই নজরুল ইসলাম জানান, তাদের বাড়ি বরিশাল উজিরপুর উপজেলায় মশান গ্রামে। গত সোমবার তার মা সাহেদা বেগমকে রাজধানীর মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মাকে দেখতে শারমিন, তার স্বামী, মেয়ে ও বাবাকে নিয়ে গ্রাম থেকে লঞ্চে করে গতকাল সকালে ঢাকায় আসেন। লঞ্চ থেকে সদরঘাটে নেমে সেখান থেকে অটোরিকশাযোগে মাতুয়াইলে তার (নজরুল) বাসায় যাচ্ছিলেন তারা প্রথমে। পথিমধ্যে দুর্ঘটনার শিকার হন। যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক

(এসআই) বিশ্বজিৎ সরকার জানান, গতকাল সকালে মাতুয়াইল মেডিকেলের সামনে সেন্টমার্টিন পরিবহনের একটি বাস অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশার চার যাত্রী ও চালক গুরুতর আহত হন। পরে তাদের ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত দুজনকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্বজনরা জানান, নিহত আব্দুর রহমান গ্রামে মাছের ব্যবসা করতেন। শারমিন গৃহিণী ও তার স্বামী বরিশাল বাবুগঞ্জ থানা এলাকার একটি এনজিওর ম্যানেজার। শারমিনের মেয়ে আহত বৃষ্টি এলাকায় একটি স্কুলের নার্সারিতে পড়ে।
রামপুরায় অটোরিকশাচালক নিহত : রামপুরায় পিকআপ ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত রাজিব (৩৮) নামে এক অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে রামপুরা বেটার লাইফ হাসপাতালের সামনে পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন তিনি।
নিহতের বড় ভাই মো. নিজাম জানান, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নেয়ামতি গ্রামের আইয়ুব আলির ছেলে রাজিব। এক ছেলে ও দুই মেয়েসহ স্ত্রী লাকী বেগমকে নিয়ে খিলগাঁও সিপাহীবাগ আইসক্রিম ফ্যাক্টরি গলিতে থাকতেন তিনি। অটোরিকশা ভাড়ায় চালাতেন তিনি। রামপুরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোমিনুর রহমান জানান, ঘটনার পরপরই পিকআপ ভ্যানটি জব্দ করা হয়েছে এবং এর চালককে আটক করা হয়েছে।
পতœীতলায় ট্রাক্টরচাপায় দুই ভ্যান যাত্রী নিহত : গতকাল সকাল ৮টার দিকে নওগাঁ জেলার পতœীতলা উপজেলার সাপাহার-নজিপুর সড়কের নকুচা এলাকায় ট্রাক্টরচাপায় নারীসহ দুই ভ্যানযাত্রী নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- উপজেলার বড় মাহরন্দী গ্রামের জুয়েল হোসেনের স্ত্রী বুলবুলি আক্তার (৪২) ও একই গ্রামের মৃত ময়েজ উদ্দিনের ছেলে ফারুক হোসেন (৬০)।
স্থানীয়রা জানান, সকালে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যানযোগে চার যাত্রী উপজেলার বাকরইল থেকে মধইল বাজারের দিকে আসছিলেন। পথে নকুচা এলাকায় ভ্যানের শ্যাপ ভেঙে রাস্তায় পড়ে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক্টর তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে বুলবুলি আক্তার মারা যান। বাকি তিনজনকে উদ্ধার করে পতœীতলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে ফারুক হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পতœীতলা থানার ওসি শামসুল আলম বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ দুটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মাদারীপুরে প্রাণ গেল দুই ভাইয়ের : গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাদারীপুর জেলার ধুরাইলের হবিগঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই ভাই নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- এলাকার লোকমান ফরাজির ছেলে নাইম ফরাজি (১৮) ও জহির ফরাজির ছেলে জনি ফরাজি (১৭)। সম্পর্কে তারা চাচাত ভাই। দুজনই স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাতে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তারা গুরুতর আহত হয়। পরে নাইম ফরাজিকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ও জনিকে ফরিদপুর হাসপাতালে নেয়ার পথে তারা মারা যায়। মাদারীপুর সদর থানার ওসি মো. কামরুল ইসলাম মিয়া জানান, মরদেহ স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাইকেল আরোহী নিহত : গতকাল সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রামজীবনপুর কাচারিমোড় বেতবাড়িয়া রোডে অটোরিকশার ধাক্কায় আব্দুর রাকিব (১৮) নামে এক বাইসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহত রাকিব শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউপির নাককাটিতলা এলাকার রুবেল আলির ছেলে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, রাকিব বাইসাইকেলযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ঘটনাস্থলে একটি অটোরিকশার ধাক্কায় সে গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাকিবকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ওসি আরো বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ অটোরিকশাটি আটক করেছে। তবে এর চালক পলাতক রয়েছে।
নীলফামারীতে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত : গতকাল দুপুরে নীলফামারীর সৈয়দপুরের বাইপাস সড়কে মাইক্রোবাসচাপায় লিমন (২২) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই রাগিব ও অন্য সঙ্গী ইমরান গুরুতর আহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাগিবকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঢেলাপীর থেকে মাইক্রোবাসটি (চট্ট-মেট্রো-চ-১১৩৭২৮) সৈয়দপুর বাসটার্মিনালে আসার পথে বাইপাস সড়কের মরিয়ম চক্ষু হাসপাতালের কাছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় মোটরসাইকেলে তিন আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে লিমন নামে এক তরুণকে মাইক্রোবাস চাপা দিলে দ্রুত তাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, নিহত লিমনের বাবার নাম আব্দুল গফুর। তার বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জের রাধানগরে।
সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত খান জানান, ঘাতক মাইক্রোবাসটি আটক করা হয়েছে। তবে চালক পলাতক রয়েছে।
দৌলতপুরে ড্রাম ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ১ : গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর-ভেড়ামারা সড়কের আল্লাহর দর্গা নামক স্থানে ড্রাম ট্রাকের ধাক্কায় মহসিন হোসেন (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। মহসিন ভেড়ামারা উপজেলার সাতবাড়িয়া এলাকার মৃত খতিবুর রহমানের ছেলে। স্থানীয় একটি বিড়ি কারখানায় কাজ করতেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাতে কারখানার ডিউটি শেষে মোটরসাইকেলে করে দৌলতপুর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন মহসিন। এ সময় একটি ড্রাম ট্রাক পেছন থেকে তাকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা মহসিনকে উদ্ধার করে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দৌলতপুর থানার ওসি এস এম জাবিদ হাসান জানান, পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়