ক্ষমা চেয়েছেন চীনা নাগরিক, টাকা চাননি সার্জেন্ট

আগের সংবাদ

জাতীয় পুরুষ বেসবল শুরু

পরের সংবাদ

রাঙ্গামাটিতে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে : পর্যটন কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নন্দন দেবনাথ, রাঙ্গামাটি থেকে : রেড জোনে থাকা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় কয়েক দিনের ব্যবধানে হঠাৎ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ- যা আশঙ্কাজনক বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ৫ দিনে রাঙ্গামাটি জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২২৯ জন। এর মধ্যে ২০ জানুয়ারি ৭১ জন, ১৯ জানুয়ারি ৫৫ জন, ১৮ জানুয়ারি ৪২ জন, ১৭ জানুয়ারি ৩৫ জন এবং ১৬ জানুয়ারি ১৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
বর্তমানে সারা বাংলাদেশের মধ্যে রাঙ্গামাটি জেলায় সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রাঙ্গামাটি শহরের করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে লাল পতাকা। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে চালানো হচ্ছে মোবাইল কোর্ট।
১০ শতাংশের উপরে থাকায় এ জেলাকে করোনা সংক্রমণের রেড জোনের তালিকায় ঘোষণা করে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু এরপরও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে অসচেতন রাঙ্গামাটির বেশির ভাগ মানুষ। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাঙ্গামাটি শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হলেও রাঙ্গামাটির সাধারণ মানুষের মাঝে অসচেতনতা লক্ষ্য করা গেছে। রাঙ্গামাটির পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল শুক্রবার রাঙ্গামাটি কাপ্তাই হ্রদে অসংখ্য পর্যটককে ঘুরতে দেখা গেছে। তাদের অবাধে ঘোরাফেরায় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে।
রেড জোন ঘোষণা দেয়া রাঙ্গামাটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২০ জানুয়ারি রাঙ্গামাটি পিসিআর ল্যাব ও অ্যান্টেজিনায় ১৮২ জন নমুনা পরীক্ষা করেছেন। এর মধ্যে ৭১ জনের পজেটিভ এসেছে। নমুনা পরীক্ষা অনুসারে শনাক্তের হার ৩৯.০১ শতাংশ। রাঙ্গামাটি পিসিআর ল্যাবে ১০০ জন এবং অ্যান্টেজিনায় পরীক্ষা করেছেন ৮২ জন। মোট ১৮২ জনের মধ্যে রাঙ্গামাটি সদরে ৪৯, কাপ্তাই উপজেলায় ১৩, বাঘাইছড়িতে ২, কাউখালীতে ২, রাজস্থলীতে ১, লংগদুতে ১ ও নানিয়ারচরে ১ জনের পজেটিভ আসে।
রাঙ্গামাটিতে এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৬৯১ জন নমুনা পরীক্ষা করেছেন। এর মধ্যে নেগেটিভ এসেছে ২৩ হাজার ১৭১ জনের এবং পজেটিভ এসেছে ৪ হাজার ৫২০ জন। মোট মারা গেছেন ৩৪ জন। রাঙ্গমাটিতে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ৪,০০,৯৯ জন, ২য় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৩,০১,৬৪৬ জন।
রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের ম্যানেজার সৃজন কুমার বড়–য়া জানান, গতকাল

কয়েকটি বাস এসেছে রাঙ্গামাটি পর্যটন কেন্দ্রে। তারা সকালে এসে বিকালে চলে গেছে। তাদের আমরা মাস্ক ছাড়া পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছি। তবে রাঙ্গামাটির পর্যটন মোটেলে কোনো বুকিং নেই। এভাবে চলতে থাকলে আবারো রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্পে ধস নেমে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে রাঙ্গামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ না হওয়ায় রাঙ্গামাটি জেলায় করোনার সংক্রমণ রোধ করা যাচ্ছে না বলে ধারণা করছে রাঙ্গামাটির সচেতন মহল। রাঙ্গামাটির বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের মুখে মাস্কের বালাই পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। শহরে প্রবেশ করা পর্যটকরা যাচ্ছেতাইভাবে শহরে ঘোরাফেরা করছেন। শহরের হোটেলগুলোতে অর্ধেক আসন থাকার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। তাই এই মুহূর্তে করোনার লাগাম টেনে ধরতে আরো বেশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার আহ্বান জানায় সচেতন মহল।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, হঠাৎ করে রাঙ্গামাটি শহরে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি শহরে বিভিন্ন স্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। রাঙ্গামাটি শহরের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া কাউকে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ধারণক্ষমতার অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক টিমকেও রাখা হয়েছে সচেতনতা বাড়াতে।
বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি আশঙ্কাজনক বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, এরপরও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা না হলে ভবিষ্যতে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, যা সামাল দেয়া খুব কঠিন হয়ে পড়বে। বর্তমানে জেলা সদরের পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়