ক্ষমা চেয়েছেন চীনা নাগরিক, টাকা চাননি সার্জেন্ট

আগের সংবাদ

জাতীয় পুরুষ বেসবল শুরু

পরের সংবাদ

মাঝপথে যাত্রী ওঠানামা না করায় সময় বাঁচে : যাত্রী বাড়ছে ‘ঢাকা নগর পরিবহনে’

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে সরকারিভাবে পরিচালিত ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ বাস সার্ভিস। একদিকে যাত্রী ভাড়া যেমন অন্য বাসের চেয়ে কম, তেমনি যাত্রীদের সময়ও বাঁচে। কেননা নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ড ছাড়া অন্য কোথাও এই বাস যাত্রী ওঠানামা করায় না। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, ‘বাসের সংখ্যা কম থাকায় যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। বাসের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে রাজধানীর সব রুটে এমন সার্ভিস চালু করা উচিত।’
জানা গেছে, ২০১৮ সালে ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে সরকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি’ গঠন করে। কমিটি ২০টি সমন্বয় সভা করে ছয়টি কোম্পানির অধীনে ঢাকার ২২টি রুটে সব বাস পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার সড়কে গত ৬ ডিসেম্বর থেকে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ বাস সার্ভিস চালু হয়। পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে দেশের পরিবহন বিশেষজ্ঞরাও এ ধরনের বাস সার্ভিস চালু করার জন্য অনেক দিন ধরেই সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। সার্ভিসটি চালু হওয়ার পর প্রথম দুই সপ্তাহ এই বাসগুলো যাত্রী পায়নি। তবে এখন যাত্রীদের কাছে সার্ভিসটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ধানমন্ডির শংকর বাসস্ট্যান্ডের কাউন্টার ম্যানেজার সুজন জানান, শুরুতে যাত্রী পাওয়া যেত না। এখন অনেক বেড়েছে। দিন দিন এই পরিবহনের পরিচিতি ও যাত্রী বাড়ছে। অন্য সব পরিবহনের চেয়ে নগর পরিবহনে ভাড়া কম। মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ১০ টাকা ভাড়া। শাপলা চত্বর পর্যন্ত ভাড়া ১৬ টাকা। অন্য বাসে শাপলা চত্বর পর্যন্ত ভাড়া ২০ টাকা। শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেয়া হয়। এই পরিবহনের বাসগুলো যাত্রী ওঠানোর সঙ্গে সঙ্গে গেট বন্ধ করে চলে। রাস্তার মাঝখানে যাত্রী ওঠানামা করানো হয় না। এতে সময় নষ্ট হয় না।
আগে ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত রজনীগন্ধা পরিবহনের বাস চলাচল করত। ঢাকা নগর পরিবহন বাস সার্ভিস চালু হওয়ায় রজনীগন্ধার রুট পারমিট বাতিল করে দেয় বিআরটিএ। এরপর এটি ‘টি-থ্রী পরিবহন’ নামে মোহাম্মদপুর থেকে পোস্তগোলা রুটে চলাচল করছে। যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত একই রাস্তা ব্যবহার করে। এই পরিবহনের চালকরা প্রায়ই নগর পরিবহনের বাসগুলোর রাস্তা আটকে দাঁড়ায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা ও বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নগর পরিবহন সার্ভিসে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ১৬ টাকা। প্রতিটি স্টপেজ থেকে ই-টিকেট দেয়া হচ্ছে। কিন্তু অন্য বাসে উঠলে দিতে হচ্ছে ২০ টাকা। ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত সর্বোচ্চ ভাড়া ৫৯ টাকা ও সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। অন্য বাসে আরো বেশি। যাওয়া-আসার পথে দেখি নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানামা করানো হয় না। অন্য পরিবহনগুলোকে দেখি যেখানে-সেখানে থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। এটা সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। সব রুটেই এই ধরনের বাস সার্ভিস চালু এবং

বাসের সংখ্যাও বাড়ানো উচিত।
শাহবাগ কাউন্টারের ম্যানেজার মিজান জানান, নগর পরিবহনের বাসগুলো এখন জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রথমে প্রচার ছিল না। যাত্রীরা কাউন্টার চিনত না। এখন আমরা যাত্রী পাচ্ছি। তবে অন্য কোম্পানির বাস যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামার কারণে তারা এখনো বেশি যাত্রী পাচ্ছে। এই রুটে অন্য পরিবহন বন্ধ না করলে যাত্রীর সংকট থাকবে।
নগর পরিবহনের চালক মনির জানান, আমরা যাত্রী ওঠানামার পর আর দাঁড়িয়ে থাকি না, কারো পথ আটকাই না। অথচ অন্য পরিবহনের বাসগুলো আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়ায়। মাঝ রাস্তায় গায়ে পড়ে ঝগড়া করে। এখন আমাদের যাত্রী বেড়েছে, যাত্রীরা আমাদের সহযোগিতাও করছে।
ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী শাহাদাৎ সায়েম জানান, নগর পরিবহনের বাসে ভাড়া নিয়ে কোনো সমস্যা হয় না। কাউন্টার থেকে হাফ ভাড়ার টিকেট দেয়া হয়। যাত্রী তোলার জন্য কোনো চালকের কোনো তাড়াহুড়া নেই। সার্ভিস ভালো হলেও বাসের জন্য অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। বাসের সংখ্যা খুবই কম। অন্য পরিবহনের ২ থেকে ৩টি বাস যাওয়ার পর একটি নগর পরিবহনের বাস আসে, এটা একটু বিরক্তিকর।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষেও নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা নগর পরিবহন বাস সার্ভিস রুট হাতে নেয়া হয়েছে। বিআরটিসি দোতলা বাসসহ মোট ৫০টি বাস চলছে। এখন দেখছি এই সার্ভিসটি সবার কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আরো বাস বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। চলতি পথে যে সব সমস্যা দেখা দিয়েছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়