ক্ষমা চেয়েছেন চীনা নাগরিক, টাকা চাননি সার্জেন্ট

আগের সংবাদ

জাতীয় পুরুষ বেসবল শুরু

পরের সংবাদ

বাঁশ-বেতের জায়গা প্লাস্টিকের দখলে : ঘুরে দাঁড়াতে সহজ শর্তে ঋণ দাবি কারিগরদের

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

লিটন চক্রবর্তী, রাজবাড়ী থেকে : এমন একটা সময় ছিল বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসের চাহিদা ছিল ব্যাপক। বাজারে নিয়ে গেলেই বিক্রি হয়ে যেত। দিন বদলেছে। বাঁশ-বেতের জায়গা দখল করেছে প্লাস্টিক। যে কারণে এসব পণ্যের চাহিদা গেছে কমে। ফলে আয়-রোজগারও খুব একটা হয় না এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের। অনেকেই চলে গেছেন অন্য পেশায়। এ অবস্থা দেখা গেছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার পূর্ব মৌকুড়ি গ্রামের ঋষিপল্লীতে। এখনো যারা পেশাটিকে ধরে রেখেছেন তারা ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করে চলেছেন। চাইছেন সহজ শর্তে ঋণ।
জানা গেছে, বালিয়াকান্দি উপজেলার পূর্ব মৌকুড়ি গ্রামের ঋষি পল্লীতে বাস করে ৩৫টি পরিবার। যারা পূর্বপুরুষের পেশা ধরে রেখে বাঁশ ও বেত দিয়ে ডালা, কুলা, ধামা, চালনসহ নানান ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বাড়ির পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও তৈরি করে থাকেন এসব পণ্য। গত কয়েক বছর ধরে এসব পণ্যের চাহিদা কমতে থাকায় তাদের আয়-রোজগার অর্ধেকে নেমে এসেছে। আর্থিক অনটনের মধ্যে চলে তাদের সংসার। কেউ কেউ পেশা ছেড়ে চলে গেছেন অন্য পেশায়।
এই পল্লীর প্রদীপ দাসের স্ত্রী রূপালী দাস জানান, তার স্বামী আগে বাঁশ-বেত দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন। চাহিদা কমে যাওয়ার পর এসব ছেড়ে চলে গেছেন অন্য পেশায়। তবে তিনি নিজে এখনো বাঁশ-বেত দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করেন। বেশি পুঁজি নেই। তাই একটি-দুটি বাঁশ কিনে তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন। এতে সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয়শ টাকা আয় হয়। একটু বেশি পুঁজি থাকলে আরো একটু বেশি আয় করতে পারতেন। এজন্য তিনি সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার দাবি জানান।
একই গ্রামের মিলন দাসের স্ত্রী শেফালী দাসও জানান একই কথা। তিনি বলেন, টাকার অভাবে অনেক সময় বাঁশ-বেত কিনতে পারি না। তাই কাজও করা হয় না। তার সন্তানদের তিনি লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করতে চান। একটু বাড়তি আয় করতে পারলে তার চেষ্টা আর স্বপ্ন সফল হতো।
চন্দনা দাস জানান, তার স্বামী এখনো এ পেশাতেই আছেন। স্বামীকে সব সময় সহযোগিতা করেন। একটি কুলা তৈরিতে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকা। বিক্রি হয় ৫০ টাকা। লাভ মন্দ নয়। দিনে বা সপ্তাহে যে টাকা আয় হয় তা সংসার চালাতেই চলে যায়। পুঁজি থাকে না।
তিনি আরো জানান, তাদের দুই সন্তান। একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। অন্যজনের এখনো স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি। তার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করতে চান। এ পেশায় আর আসতে দিতে চান না।
রাজবাড়ী জেলা দলিত পঞ্চায়েত ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বিপুল কুমার দাস বলেন, বাঁশ ও বেতের অগ্নিমূল্যের কারণে বাঁশ ও বেত শিল্পের সঙ্গে জড়িত বেশির ভাগ মানুষের দুর্দিন চলছে। অবহেলিত ও অসহায় ঋষি জনগোষ্ঠীর তৈরি বাঁশ ও বেত শিল্পকে রক্ষায় সরকারিভাবে সহজ শর্তে ঋণ বা অনুদানের ব্যবস্থা করলে এরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. হাসিবুল হাসান জানান, বর্তমান সরকার সব পেশার মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পূর্ব মৌকুড়ি ঋষিপল্লীর বাঁশ ও বেত শিল্পীদের সব সময়ই সহযোগিতা করে থাকেন। তারা আরো কোনো সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই উদ্যোগ নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়