ক্ষমা চেয়েছেন চীনা নাগরিক, টাকা চাননি সার্জেন্ট

আগের সংবাদ

জাতীয় পুরুষ বেসবল শুরু

পরের সংবাদ

বরিশালে অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ, বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল থেকে : বরিশালে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা একাধিক ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে চলতি মৌসুমে কয়লার দাম বৃদ্ধি হওয়ায় বরিশালের অধিকাংশ ইটভাটার মালিক পুরনো সনাতন পদ্ধতি ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে কাঠ দিয়ে ইট পুড়ছে। এতে একদিকে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে গাছ, অন্যদিকে ভাটার কালো ধোঁয়ায় আশপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি কৃষিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অনেক ফলের গাছ মরে যাচ্ছে। এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রায়ই অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও ভাটা গুঁড়িয়ে দেয়া হলেও কয়েক দিন যেতে না যেতেই পুনরায় ভাটা চালু করছে অবৈধ ইট ব্যবসায়ীরা। ভুক্তভোগীদের দাবি, লোকালয়ের ইটভাটা বন্ধ করার পাশাপাশি সরকারের বেঁধে দেয়া শর্তাবলী শতভাগ পূরণ না হলে লাইসেন্স বাতিল করা হোক। অপরদিকে নিয়মিত অভিযান চালানোর পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় ৩০০টির উপরে ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে জিগজ্যাক প্রায় ২০০টির মতো, পুরনো ফিক্সড পদ্ধতির ২৮টি ও পুরনো সনাতন পদ্ধতির নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি রয়েছে জেলার বিভিন্ন স্থানে। যার হিসাব বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরে নেই বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বরিশাল জেলায় প্রায় ২০০টি জিগজ্যাগ ইটভাটার ১০৩টির পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে আর বাকি ৭৬টির পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। যেসব ইটভাটার ছাড়পত্র নেই এসব ইটভাটা বছরের পর বছর বরিশাল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রমতে, বায়ুদূষণ কমানোর জন্য সরকার ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) আইন জারি করেছে। আইনে রয়েছে কোনো ইটভাটা স্থাপন ও ইট পোড়াতে হলে সংশ্লিষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। এছাড়া ইট পুড়তে জ¦ালানি কাঠ ব্যবহারের পরিবর্তে কয়লা দিয়ে পোড়ার বিধান রয়েছে। তবে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর গ্রামে মেসার্স আশার আলো, মেসার্স জে এ বি ব্রিকস, পরমানন্দসাহা গ্রামে মেসার্স হাজী ব্রিকস, কালিরবাজার গ্রামে এ বি এস ব্রিকস, রাখালতলা গ্রামে এস বি আই ব্রিকস, বাবুগঞ্জে ফাইন ব্রিকস, রাজ ব্রিকস, নিশা ব্রিকস, বন্দর থানার চরকাউয়া ইউনিয়নের

চরকরনজী গ্রামে গড়ে ওঠা মেসার্স খান ব্রিকস, রানীরহাট সংলগ্ন মেসার্স নিপা ব্রিকস এবং মেসার্স আরএইচবি ব্রিকস, মেহেন্দিগঞ্জে মেসার্স ধনিয়া ব্রিকস, মেসার্স ওয়ান ব্রিকস, মেসার্স নাম্বার ওয়ান ব্রিকস, মেসার্স খান ব্রিকস, বাকেরগঞ্জে পাণ্ডব নদীর চরে একতা ব্রিকস, শাপলা ব্রিকস, দুবাই ব্রিকস, গাজী ব্রিকস, আমতলী গ্রামে মেসার্স টু স্টার ব্রিকস, বাগদিয়া গ্রামে মেসার্স এইচ এন্ড এইচ ব্রিকস এবং নলুয়া গ্রামে মেসার্স ওয়ান নিপা ব্রিকসসহ বেশ কিছু ইটভাটায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিদিন কয়েকশ মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কিছু ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রাম চিমনি।
এসব ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। এতে ভাটার আশপাশের এলাকা সব সময় বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, লোকালয়ে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটার ধোঁয়ায় আশপাশের বাড়িগুলোর অনেক গাছ মরে গেছে। নারিকেল, সুপারি গাছে ফুল থেকে ফল ধরার কয়েক দিন পর তা ঝরে পড়ছে। অন্যান্য ফল গাছেরও একই অবস্থা। এসব ইটভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করেন না ভুক্তভোগীরা। তাদের অভিযোগ শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকিই নয়, অনেক ভাটা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের জমি থেকেও মাটি কেটে নেয়া হয়। তারা আরো জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে একাধিকবার এসব অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে কিছু দিন যেতে না যেতেই পুনরায় ভাটাগুলোতে ইট পোড়ানো শুরু হয়।
এদিকে ভাটা মালিকদের সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে বলেন, ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করেছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কিছু দিন আগে ভাটা পরিদর্শন করে গেছেন। এখনো ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আবেদন যখন করেছি, তখন অনুমোদন পাওয়া যাবে এমন আশায় তারা ভাটা চালু করেছেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আবদুল হালিম বলেন, বরিশালের অবৈধ ইটভাটাগুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত আছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে অনেক অবৈধ ভাটা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিগগিরই বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ইটভাটা ধ্বংস করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়