ক্ষমা চেয়েছেন চীনা নাগরিক, টাকা চাননি সার্জেন্ট

আগের সংবাদ

জাতীয় পুরুষ বেসবল শুরু

পরের সংবাদ

আন্দোলন অব্যাহত, অনশনরতরা অসুস্থ : শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া ভার্চুয়াল আলোচনার প্রস্তাব

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফারুক আহমদ, সিলেট ব্যুরো ও নাজমুল হুদা, শাবি : টানা এক সপ্তাহ আন্দোলন শেষে সরকার পক্ষ তথা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীরা ঢাকায় যেতে পারবেন না। ভার্চুয়ালি কিংবা সরাসরি শিক্ষামন্ত্রীকে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে টানা দুই দিনে অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছে অনশনরত অধিকাংশ শিক্ষার্থী। সর্বশেষ খবর, ১২ শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, বাকিরা অসুস্থ হয়ে অনশন স্থলেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনশন ভাঙাতে দফায় দফায় উপস্থিত হয়েছেন শিক্ষক প্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা। এদিকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল শুক্রবার অনশন করেন আন্দোলনকারীরা। এতে ২৩ শিক্ষার্থী অনশন করছেন। এক শিক্ষার্থীর বাবা অসুুস্থ হয়ে যাওয়ায় তিনি অনশনস্থল ত্যাগ করেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কেউই অনশন ভাঙেননি। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১২ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে ৬ জন ছাত্রী ও ৬ জন ছাত্র। বাকি শিক্ষার্থীরাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা অনশনস্থলেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জানা যায়, অনশনরত অবস্থায় একজন রাগিব বারেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, একজন মাউন্ড এডোরা হাসপাতাল ও ১০ জন এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। এর মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। এছাড়া আসিফ নামে এক শিক্ষার্থী ডায়াবেটিসের রোগী। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া ৪ জন শিক্ষার্থী শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। তারা নেবুলাইজার নিচ্ছেন। বাকি শিক্ষার্থীরা দুর্বল হয়ে পড়েছেন, নিয়েছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থীই প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্যালাইন।

ঘটনাস্থলে চিকিৎসা দিচ্ছেন সিলেট এম এ জি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল টিম। সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মো. মোস্তাকিম বলেন, এখানে ১২ শিক্ষার্থী অনশনরত অবস্থায় আছেন। তাদের মধ্যে কারো গøুকোজ লেভেল কমে গেছে। কারো ব্লাড প্রেসার কমে গেছে। আমরা তাদের স্যালাইন দিয়েছি। যারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তাদের মেডিকেলে পাঠানো হচ্ছে।
এর আগে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে মশাল মিছিল করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। শিক্ষার্থীরা জানান, যে পর্যন্ত উপাচার্য পদত্যাগ করছেন না, সে পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এছাড়া রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে শতাধিক শিক্ষকের প্রতিনিধি দল উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছেন। কিন্তু কোনো সুরাহা করতে পারেননি।
এদিকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অনশন ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর আড়াইটায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন। এর আগে দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় আগামী দুই সপ্তাহ স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা নেবে। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অধিশাখা থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনার ব্যাখ্যা হলো- স্কুল-কলেজের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করতে হবে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের আইনে চলে, তাই এ বিষয়ে তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি হলেও তারা এখান থেকে সরবেন না। সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
এদিকে গতকাল বিকালে শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেই আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এদিন বিকাল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে আলোচনায় সম্মতি জানিয়েছেন।
তবে অনশনরত ভাই-বোনদের রেখে ঢাকাতে যেতে অসম্মতি জানায় শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনশনরত শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদিন বলেন, ভিডিওকলে কথা বলার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা যাওয়ার কথা থাকলেও অনশনরত ও আন্দোলনরত অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ায় তারা ঢাকা যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই। তিনি বলেন, তার পরিবর্তে শিক্ষামন্ত্রীকে শাবিতে এসে বৈঠক আয়োজনের অথবা বৈঠকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অনলাইনে আলোচনার সুযোগ দিতে অনুরোধ জানানো হবে। আন্দোলনকারীরের পক্ষে সাব্বির আহমেদ বলেন, আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসব। কিন্তু ক্যাম্পাসের এ পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই ঢাকাতে যাওয়া সম্ভব নয়।
শিক্ষার্থীদের ঢাকা যাওয়া প্রত্যাখ্যানের খবর জেনে রাত ৮টার দিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল শিক্ষামন্ত্রীর বার্তা নিয়ে পুনরায় ক্যাম্পাসে আসেন। শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় আপনজন অসুস্থ হওয়াই সিলেটে আসতে দেরি হবে উল্লেখ করে নাদেল বলেন, প্রয়োজনে আকাশপথে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের ঢাকাতে নিয়ে যাওয়া হবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত সাড়ে ৮টা) শিক্ষার্থীরা নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। সিদ্ধান্ত পরে জানাবেন বলে আওয়ামী লীগ নেতাকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়