ঢামেকে আগুন আতঙ্ক, রোগীর স্বজনদের ছুটাছুটি

আগের সংবাদ

কড়া নির্দেশনা কার্যকরে ঢিলেমি

পরের সংবাদ

ধামইরহাটে খালে পানি সংরক্ষণ : সারা বছর সেচ সুবিধায় বাড়ছে ফসল উৎপাদন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আব্দুল আজিজ মণ্ডল, ধামইরহাট (নওগাঁ) থেকে : বরেন্দ্রাঞ্চলে খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সারা বছর ২টি ইউনিয়নের বাড়তি ১ হাজার ৩২০ হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পাচ্ছে। এতে ওই সব এলাকার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।
ধামইরহাটে আত্রাই নদীর দুপাশে খালের পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তাবায়ন করেছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। এতে একদিকে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমেছে। অন্যদিকে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারে প্রায় ১ হাজার ৩২০ হেক্টর জমির ফসল সারা বছর নিয়ন্ত্রিত সেচের আওতায় আসার ফলে বাড়তি উৎপাদনে খাদ্য ঘাটতি কমাতে সহায়তা করছে। এছাড়া এলাকার দিনমজুর ও প্রান্তিক কৃষকদের কৃষিকাজের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
ধামইরহাট উপজেলার আত্রাই নদীতে মনহরপুর শিমুলতলী দহে একটি পন্টুন এবং খেলনা ইউনিয়নের উদয়শ্রী মৌজার বেড়ীতলা দহে আরো একটি পন্টুন স্থাপন করে প্রায় ৬৬০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
এতে দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক-শ্রমিক উপকৃত হয়েছেন। সেচ সুবিধা পেয়ে এলাকায় এখন সারা বছর সরিষা, পাট, গম, করলা, শাকসবজি, সূর্যমুখী, শিম, কলাই, বড়ই, পেয়ারাসহ আমন, ইরি, বোরো চাষাবাদ হচ্ছে। ইতোপূর্বে বৃষ্টির পানি, গভীর-অভীর নলকূপের মাধ্যমে সারা বছর পানি সেচের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা ছিল না। খরা মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৫-১০ ফুট নিচে নেমে যাওয়ার ফলে দুই ইউনিয়নের চাষাবাদ অনেকটা কমে গিয়েছিল।
এখন নদীর ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে আগ্রাদ্বিগুন, কাউটি, রামচন্দ্রপুর, এন্দোয়া, কাশিপুর, আগ্রা খালের দুধারে ফসলের মাঠে সেচ দেয়া হচ্ছে। বেড়ীতলা পন্টুনের মাধ্যমে মড়লই, নন্দনপুর, সাড়ল, উদয়শ্রী, বটতলা, ডাকাহার, চকমগলিশ, দেশাহার, গুন ও দেবীপুর পর্যন্ত খালের দুপাশের মাঠে সেচ দিয়ে খিরা, বেগুন, তরমুজ, লাউ, শসা, শিমসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল চাষ করা হচ্ছে। উদয়শ্রী থেকে দেবীপুর খালটি আকাবাকা থাকায় এ খালের দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার। আবার শিমুলতলী থেকে আগ্রার খাল আকাবাকা হওয়ার কারণে প্রকৃত খালের দৈর্ঘ্য ২৫ কিলোমিটার।
আত্রাই নদীর শিমুলতলী দহে বছরব্যাপী পানি সংরক্ষিত থাকে। ২টি পন্টুন স্থাপনে ২ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন ১৮টি মটর সিন্ট্রফিউগাল পাম্প স্থাপন করে পানি পাইপলাইনের মাধ্যমে নদীর তীরবর্তী থেকে আগ্রার খাল ও বেড়ীতলা থেকে দেবীপুরে ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ খালে পানি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সংরক্ষিত বৃষ্টির পানি বা নদীর পানি ৪ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৬টি লো-লিফট পাম্পের মাধ্যমে দুই ইউনিয়নের ফসলের মাঠে সেচ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ওই প্রকল্প এলাকায় কোনো কোনো স্থানে গভীর-অগভীর নলকূপ থাকলেও কিছু কিছু এলাকায় ওই সুবিধা একেবারেই নেই। নেই কোনো পানির সংস্থান।
এক্ষেত্রে প্রকল্প ২টি বাস্তবায়িত হয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানির চাপ যেমন হ্রাস পেয়েছে তেমনি পতিত জমি ফসলের চাষযোগ্য হয়ে পড়েছে।
মনহরপুর গ্রামের ইউনুছ আলী বলেন, নদীতে পন্টুন স্থাপনের ফলে আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের সেকেন্দার আলী বলেন, শুকনো মৌসুমে এলাকায় সারা বছরই সেচ সুবিধা পাচ্ছেন কৃষকেরা।
উদয়শ্রী গ্রামের জামান আলী বলেন, পন্টুনের মাধ্যমে বাড়তি সেচ সুবিধা পেয়ে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, বেগুনসহ বাড়তি চাষাবাদ হচ্ছে। এতে জমির মালিকেরা ও কৃষকেরা যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি ভোক্তারা স্বল্পমূল্যে পণ্য ক্রয় করতে পারছেন।
আগ্রাদ্বিগুন আগ্রা গ্রামের আক্তার হোসেন বলেন, খালের পানিতে আমাদের ফসলের মাঠ সবুজের সামরোহ হয়ে উঠেছে।
মড়লই গ্রামের কৃষক ফজলুল হক বলেন, নদীর পানি সাপ্লাই পেয়ে গভীর নলকূপের উপর চাপ কমেছে।
ধামইরহাট বিএমডিএর সহকারী প্রকৌলশী হাবিবুল আহসান ভোরের কাগজকে জানান, ২০১৭-২০২১ সাল পর্যন্ত আত্রাই নদীতে এলএলপিসহ ১৪টি প্রকল্প ও ভাসমান ২টি পন্টুন বসিয়ে শিমুলতলী বেড়ীতলা বাঁধের ওপর দিয়ে সেচকাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২টি ইউনিয়নে সারা বছর বাড়তি নানা ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন এখন কৃষকের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়