ঢামেকে আগুন আতঙ্ক, রোগীর স্বজনদের ছুটাছুটি

আগের সংবাদ

কড়া নির্দেশনা কার্যকরে ঢিলেমি

পরের সংবাদ

আন্দোলনে উত্তাল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় : শিক্ষার্থীরা অনশনে অনড় অসুস্থ ৩ জন হাসপাতালে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফারুক আহমদ, সিলেট ব্যুরো ও নাজমুল হুদা, শাবি : উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান অনশন কর্মসূচি ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ৩ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাছাড়া ১০ জনের বেশি শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে অনশনস্থলেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের স্যালাইন দেয়া হয়েছে।
এদিকে দফায় দফায় শিক্ষক প্রতিনিধিদল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমঝোতার আলোচনা করতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থিত হন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত না হওয়ায় বারবারই ফিরে আসতে হয়েছে শিক্ষকদের।
গত বুধবার বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ২৪ শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসে। অনশনে বসা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অবন্তিকা বৃষ্টি ও বাংলা বিভাগের মোজাম্মেল হক নামে দুই শিক্ষার্থী সেদিন রাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারা সিলেটের রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে অনশনে পুনরায় যোগ দেন। এদিকে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের কাজল দাস নামে এক শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। পরে তাকে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া বিকাল থেকে একে একে অনশনে অবস্থানরত

শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হতে শুরু করে। রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডাক্তার এসে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিতে থাকে। ২৪ ঘণ্টা অনাহারে থাকায় ১০ জনের অধিক শিক্ষার্থীকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। তারপরও অনশন ভাঙেনি কোনো শিক্ষার্থী।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে দফায় দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক আন্দোলনস্থলে উপস্থিত হন। গত বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ৯টায় শতাধিক শিক্ষকের একটি দল আন্দোলনস্থলে হাজির হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস, সেন্টার অফ এক্সিলেন্সের পরিচালক অধ্যাপক ড. মস্তাবুর রহমান, সোশ্যাল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক দিলারা রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধানসহ শতাধিক শিক্ষক সেখানে উপস্থিত হন।
শিক্ষকরা আন্দোলনস্থলে উপস্থিত হলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকেন। শিক্ষকদের কাছে তারা জানতে চান- তাদের এই এক দফা দাবির সঙ্গে শিক্ষকরা একমত কিনা? এ সময় শিক্ষকরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাদের সুযোগ দেয়া হয়নি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, যদি আপনারা আমাদের এক দফা দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন তাহলে আমরা আপনাদের সঙ্গে কথা বলব। তাছাড়া আপনাদের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলতে রাজি নই।
এছাড়া গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে উপস্থিত হতে শুরু করেন। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একমত না হওয়ায় তারা ফিরে যান।
এদিকে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় প্রেস ব্রিফিং করা হয়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষে নাফিসা আঞ্জুম বলেন, সেদিনের হামলার ঘটনা উপাচার্যের মদতেই ঘটেছে। পুলিশ সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই হামলা করতে এসেছিল। এরপর আন্দোলনকারীদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছোড়া হয়। টিয়ারশেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করা হয় শিক্ষার্থীদের, করা হয় লাঠিপেটা।
উপাচার্যের অপসারণের আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রপতি তদন্ত কমিটি গঠনে শিক্ষকদের প্রস্তাবের জবাবে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের কাছে স্পষ্ট, ভিসির মদতেই পুলিশ আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা তাই ভিসির অপসারণ চাই। অপসারণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা রাষ্ট্রপতি কোনো কমিটি গঠন করবেন, আমরা তা চাই না।
এদিকে আন্দোলনরত ও অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের শিক্ষকরা হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। অনশনে বসা এক শিক্ষার্থী বলেন, ভিসি আমাদের অভিভাবক। কিন্তু অভিভাবক ইচ্ছাকৃত ও জেনে-বুঝে কোনো অপরাধ করলে আমরা তার ছাড় দেব না। উপাচার্যের নির্দেশেই শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা শুরু করে। এর দায়ভার উপাচার্যকেই নিতে হবে। এজন্য আমরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশন করছি। বিভাগ ও বিভাগের বাইরের প্রভাবশালী কিছু শিক্ষক ফোন দিয়ে আন্দোলন থেকে সরে আসার হুমকি দিচ্ছেন, অন্যথায় পরবর্তী সময় সমস্যার কথাও বলছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যর্থ হয়ে ফেরার পথে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘কার নির্দেশে পুলিশ এ কাজ করল, তা তদন্ত করে বের করতে হবে। এ কাজটি ভিসি, ট্রেজারার, ছাত্র উপদেষ্টা ও নির্দেশনা পরিচালক বা প্রক্টর, যার নির্দেশেই ঘটুক না কেন, তাকেই দায় নিতে হবে। ভিসির নির্দেশে হয়ে থাকলে আমরা ভিসির পদত্যাগের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একমত পোষণ করব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসিক হলের সমস্যা নিরসনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পরদিন রবিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। তারা প্রভোস্ট বডির পদত্যাগ ও হামলার বিচার দাবি জানান। পরে বিকাল ৪টায় আইআইসিটি ভবনের সামনে উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ উপস্থিত হয়। এ সময় ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন? প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগানে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় লাঠিপেটার পাশাপাশি, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে পুলিশ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে ভিসিকে উদ্ধার করে বাংলোতে পৌঁছে দেন। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ব¦বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) ১২টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেন। তবে শিক্ষার্থীরা হল না ছেড়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়