সেশনজট নিরসনে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কমাল ঢাবি

আগের সংবাদ

কী নির্দেশনা পেলেন ডিসিরা : জনগণের সেবক হতে হবে > খাদ্য নিরাপত্তা-বাজার স্থিতিশীল রাখা > সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ

পরের সংবাদ

১ দিনে শনাক্ত সাড়ে ৯ হাজার : উচ্চ ঝুঁকিতে ঢাকাসহ ১২ জেলা > করোনা পরিস্থিতি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার ও বিস্তার ক্রমেই বাড়ছে। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জেলার সংখ্যাও বাড়ছে। করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তারের মধ্যে দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে সাড়ে ৯ হাজারের ঘরে। শনাক্তের হারও ছাড়িয়েছে ২৫ শতাংশের ঘর।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৫৫টি পরীক্ষাগারে ৩৭ হাজার ৮৩০ টি নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের উপস্থিতি মিলেছে ৯ হাজার ৫০০টিতে। গত বছরের ১২ আগস্ট এরচেয়ে বেশিসংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। ওই দিন ১০ হাজার ১২৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে ৬ হাজার ৯৫২ জনই ঢাকা বিভাগের। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪৭৩ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ। গত বছরের ১৩ আগস্টের পর যা সর্বোচ্চ। ওই দিন শনাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
এদিকে ভাইরাসটির সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ ১২ জেলাকে উচ্চ ঝুঁকির এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শনাক্তের হার বিবেচনায় দেশের জেলাগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেগুলো হলো- উচ্চ (রেড বা লাল), মাঝারি (ইয়েলো বা হলুদ) এবং স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ ( গ্রিন বা সবুজ অঞ্চল)। উচ্চ ঝুঁকির জেলায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার গড়ে ১০ থেকে ১৯ শতাংশ। মাঝারি ঝুঁকির তালিকায় থাকা জেলাগুলোতে এই হার ৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ। আর যেসব জেলায় শনাক্ত ৫ শতাংশের কম সেগুলো কম ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে।
১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উচ্চ ঝুঁকিতে আছে ১২ জেলা, মাঝারি ঝুঁকিতে রয়েছে ৩১ জেলা এবং বাকি জেলাগুলো স্বল্প ঝুঁকির এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকা ছাড়া উচ্চ ঝুঁকিতে আছে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রাঙ্গামাটি, বগুড়া, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, যশোর, লালমনিরহাট, গাজীপুর, পঞ্চগড় এবং খাগড়াছড়ি জেলা। মধ্যম পর্যায়ের ঝুঁকিতে আছে- শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ, ফেনী, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, সিলেট, নাটোর, কক্সবাজার, ঠাকুরগাঁও, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, বরিশাল, মাগুরা, জয়পুরহাট, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরা, ল²ীপুর, পিরোজপুর, বাগেরহাট, শরীয়পুর

ও নড়াইল। কম ঝুঁকিতে রয়েছে- কুমিল্লা, চাঁদপুর, পাবনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, ভোলা, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরগুনা, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী ও মেহেরপুর।
এদিকে গতকাল করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে অধিদপ্তরের পরিচালক (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেছেন, এই মুহূর্তে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের যে ব্যবস্থাপনা এবং মানুষকে যেভাবে সচেতন করছি এর সঙ্গে রেড, ইয়েলো বা গ্রিন জোনের প্রত্যক্ষ কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একেবারেই একটি প্রশাসনিক বিষয়। রেড-ইয়েলো কিংবা গ্রিন জোন এসব কিন্তু করোনা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়। গণমাধ্যমে যেভাবে বিষয়টি আসছে এ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনা সংক্রমণ ২২২ শতাংশ বেড়েছে। নতুন ধরন যখন আসে তখন পুরাতন ধরনটিকে অনেক সময়ই প্রতিস্থাপিত করে দেয় এবং নতুন ধরনটি তখন মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশেও হয়তো একসময় তেমনটি হবে। তবে এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য-উপাত্ত আছে তাতে দেখা যাচ্ছে ডেল্টা ধরনেই এখন মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে বেশি। দেশে ওমিক্রনেরও সংক্রমণ হচ্ছে। গত বছর আমরা ডেল্টার তাণ্ডব দেখেছি। দেখেছি পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে। কাজেই কোনো অবস্থাতেই অবহেলা ও অসচেতন হওয়ার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার ৩৫ হাজার ৫৪টি নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের উপস্থিতি মিলেছে ৮ হাজার ৪০৭টিতে। মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সোমবার ৩১ হাজার ৯৮০টি নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের উপস্থিতি মিলেছে ৬ হাজার ৬৭৬টিতে। মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। রবিবার ২৯ হাজার ৩০৫টি নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের উপস্থিতি মিলেছে ৫ হাজার ২২২টিতে। মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ কোটি ১৯ লাখ ৬৬ হাজার ২৮৯টি। এর মধ্যে রোগী শনাক্ত হন ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২৯৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ২৬৮ জন। আর মোট প্রাণহানির সংখ্যা ২৮ হাজার ১৭৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ১৬ জন এবং নারী ১০ হাজার ১৬০ জন। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের ১০ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। বয়স বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ৬ জন, ষাটোর্ধ্ব ২ জন, সত্তরোর্ধ্ব ২ জন আর আশি ঊর্ধ্ব ২ জন। বিভাগ বিবেচনায় ঢাকা বিভাগের ৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ২ জন, রাজশাহী বিভাগের ১ জন আর সিলেট বিভাগের ১ জন। ৮ জন সরকারি হাসপাতালে ও ৩ জন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এবং বাসায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়