সেশনজট নিরসনে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কমাল ঢাবি

আগের সংবাদ

কী নির্দেশনা পেলেন ডিসিরা : জনগণের সেবক হতে হবে > খাদ্য নিরাপত্তা-বাজার স্থিতিশীল রাখা > সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ

পরের সংবাদ

স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপির দ্বৈত নীতি : জিতলে আছে, হারলে নাই

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিটি করপোরেশন ভোটে অংশ নেয়াই এর মূল কারণ। অথচ নির্বাচনে অংশ নিয়ে যারা জয়ী হয়েছেন, সেসব নেতাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়নি বিএনপির হাইকমান্ড। এতে ক্ষোভ বাড়ছে দলটির তৃণমূলে। দলের শৃঙ্খলা ফেরানোর অজুহাতে ‘জিতলে আছে, হারলে নাই’ এমন দ্বৈত নীতিতে বিএনপি এগুচ্ছে কিনা, দলের ভেতরে ও বাইরে জন্ম দিচ্ছে এমন নানা প্রশ্নের।
গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে তৈমূর আলম খন্দকারকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। একই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালকেও বহিষ্কার করে তার স্থলে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টুকে।
এদিকে দলীয় প্রতীকে বিএনপি কোনো ভোটে যাবে না- এমন সিদ্ধান্ত থাকলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পদধারী অনেকে স্বতন্ত্রভাবে ভোটে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন। ইউপি নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলের যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের বাধা দেয়া হয়নি। বরং সেক্ষেত্রে কাউকে দল থেকে শোকজ বা বহিষ্কার করা হবে না- এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল। যে কারণে গত বছর মার্চের পর থেকে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছেন, কেউ কেউ জয়ীও হয়েছেন। ভোটে বাধা না দিয়ে পরাজিত হওয়ার পরে কেন বহিষ্কার করা হচ্ছে? এমন প্রশ্নে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের উত্তর- এখন পদে থেকে আর কেউ নির্বাচন করতে পারবেন না- এটা দলীয় সিদ্ধান্ত।
গত ২ নভেম্বর ঠাকুরগাঁয়ে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি থেকে কেউ প্রার্থী হলে

দলীয়ভাবে তাকে বাধা দেয়া হবে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করাটা সঠিক নয়। তাই বিএনপি এ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না। তবে বিএনপি থেকে কেউ স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নিলে সেখানে বাধা নেই। এর আগেও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে গত কয়েক মাসে ৪ জন নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে- কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, খুলনা জেলার বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু অন্যতম। অথচ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলে কোনো ব্যক্তিকে দল থেকে অব্যাহতি দিতে হলে আগে তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিস দিতে হয়। এক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
জানতে চাইলে এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, বিএনপির যারা আমাকে নির্বাচন চলার সময়ে অব্যাহতি দিয়েছিল, এখন বহিষ্কার করেছে। মহাসচিব বলেছিলেন, দলগতভাবে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু কেউ ব্যক্তিগতভাবে স্থানীয় নির্বাচনে গেলে দলের কোনো আপত্তি থাকবে না। কেন্দ্র থেকে বা দল থেকে তো আমাকে একবারের জন্যও বলেনি, ‘আপনি নির্বাচন কইরেন না’।
তৈমূর আলম বলেন, দল আমাকে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে মুক্তি দিয়েছে। এখন আমার সামনে ২টি কাজই খুঁজে পেয়েছি। একটি হলো যাকে আমি মায়ের মতো শ্রদ্ধা করি দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য এবং ভোট ডাকাতির মেশিন ইভিএমের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা। আমি বিএনপির পক্ষেই কাজ করে যাব।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও এ টি এম কামালকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পদধারী কেউ নির্বাচন করলে তাকে বহিষ্কার করা হবে।
স্বতন্ত্র ব্যানারেও চেয়ারম্যান পদে বিএনপি নেতাদের জয়ের হিস্যা একেবারে কম নয়। ভোটে স্বতন্ত্র পরিচয়ে বিএনপির প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছেন রাজশাহী বিভাগে। এই বিভাগে মোট ২৬ জন বিএনপি নেতা জিতেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় এসেছে রংপুর বিভাগে ১৮ জন। ঢাকা বিভাগে বিএনপির ১৭ নেতা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। চট্টগ্রাম ও সিলেটে এই সংখ্যাটি ১৩ জন করে। এছাড়া ছয়জন আছেন ময়মনসিংহে, চারজন খুলনায় এবং বরিশালে একজন। তৃতীয় ধাপে ৯৬টি ইউনিয়ন পরিষদের পর চতুর্থ ধাপেও ৯৮টি ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপির নেতারা। চতুর্থ ধাপেরও বেশ ভালো। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ১৪ প্রার্থী জয় পেয়েছেন।
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে পৌর নিবাচনে অংশ নেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান। একাধারে তিনি কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। মোবাইল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে নৌকাকে ৪ হাজার ভোটে হারিয়েছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, ভোটে বিরোধীদের সঙ্গে আঁতাতের কারণে পুলিশ প্রশাসন তার পক্ষে ছিল। অথচ তিনিসহ বিজয়ী কোনো নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি বিএনপি।
অন্যদিকে দলের গুরুত্বপূর্ণ ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নেতাদের অব্যাহতি দেয়ার কারণে সারাদেশে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধমে এসব ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকে বলছেন, কয়েক যুগ রাজনীতি করার পর একজন নেতা তৈরি হয়। কিন্তু তুচ্ছ কারণে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়ার ফলে দলেরই বেশি ক্ষতি হচ্ছে। এতে ত্যাগী নেতাকর্মীরা নিরুৎসাহিত হন। পাশাপাশি বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
রংপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইচ উদ্দিন বলেন, নির্দলীয় ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা ৬০-৬৫ ভাগ এলাকায় বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হব। তার প্রমাণ স্থানীয় নির্বাচনে। দলীয় প্রতীক ছাড়াও আমাদের প্রার্থীরা বিভিন্ন এলাকায় বিজয়ী হয়েছেন। এতে তো দলের সন্তুষ্টি প্রকাশ করা উচিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়