সেশনজট নিরসনে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কমাল ঢাবি

আগের সংবাদ

কী নির্দেশনা পেলেন ডিসিরা : জনগণের সেবক হতে হবে > খাদ্য নিরাপত্তা-বাজার স্থিতিশীল রাখা > সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ

পরের সংবাদ

মাদার বখশের মৃত্যু দিবস জাতীয় স্বীকৃতি চাই

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে কিংবদন্তি নাম মাদার বখশ। রাজশাহীর শিক্ষা বিস্তার ও উন্নয়নে তার ভূমিকা চিরস্মরণীয়। মাদার বখশ সমাজসেবায় অসংখ্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তার সামাজিক কর্মকাণ্ড রাজশাহীর বাসিন্দাসহ সারাদেশবাসীকে সব সময় আন্দোলিত করবে, এটাই স্বাভাবিক। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক মাদার বখশ ১৯০৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নাটোর জেলার (তৎকালীন নাটোর মহকুমা) সিংড়ার স্থাপনদীঘি গ্রামে এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বলিউদ্দিন মণ্ডল। ১৯২২ সালে তিনি সিংড়ার চৌগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে মেট্রিক, রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯২৪ সালে আইএ এবং ১৯২৬ সালে একই কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯২৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ পাস করেন এবং ১৯২৯ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইন বিষয়ে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। মুর্শিদাবাদ ও নওগাঁয় শিক্ষকতা করার পর মাদার বখশ ১৯৩৪ সালে রাজশাহীতে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। একই সময়ে আইন পেশার পাশাপাশি তিনি সমাজসেবায়ও মনোনিবেশ করেন। মাদার বখশ অসহায় মানুষের পক্ষে পারিশ্রমিক ছাড়া মামলা পরিচালনার জন্য খ্যাতি লাভ করেন। তিনি চল্লিশের দশকের প্রারম্ভে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এরপর ১৯৪৬ সালে রাজশাহীর (আত্রাই, বাগমারা ও মান্দা) প্রতিনিধি হিসেবে অবিভক্ত বাংলার বঙ্গীয় আইন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। মাদার বখশ ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৫০-১৯৫৪ সাল পর্যন্ত রাজশাহী পৌরসভার (বর্তমানে সিটি করপোরেশন) প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যানও ছিলেন। প্রতিভাবান মানুষটি দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৬৭ সালের ২০ জানুয়ারি, শুক্রবার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাকে রাজশাহীর কাদিরগঞ্জ গোরস্তানে সমাহিত করা হয়।
মাদার বখশ মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তথাপিও মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনায় সালাম, বরকত, রফিকসহ অনেকেই শহীদ হন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী ভুবন মোহন পার্কে অনুষ্ঠিত সমাবেশে মাদার বখশ অন্যতম আয়োজক ও প্রধান বক্তা ছিলেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগের তিনিই একমাত্র এমএলএ, যিনি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় নিজ দলীয় সরকারের সমালোচনা করার দায়ে কারাবরণ করেছিলেন। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে দলের নীতিনির্ধারক ও সরকারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থানের কারণে মুসলিম লীগ নেতাদের সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ১৯৫৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ভুবন মোহন পার্কে এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জননেতা মাদার বখশ সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, যদি রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা না হয়, তবে উত্তরবঙ্গকে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ দাবি করতে আমরা বাধ্য হব। তার এ বক্তব্য নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চে প্রাদেশিক আইন সভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাস হয়। ক্ষণজন্মা-মহৎপ্রাণ মাদার বখশ ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৫৪ সালে সোবহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (বর্তমানে কোর্ট একাডেমি নামে পরিচিত), ১৯৬০ সালে ল²ীপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, ১৯৬৬ সালে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তারই নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালে রাজশাহীতে প্রথম বেসরকারি মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১৯৫৫ সালে সরকারিকরণ এবং ১৯৫৮ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নামে নামকরণ করা হয়। এছাড়া রাজশাহী মহিলা কলেজ, রাজশাহী গার্লস মাদ্রাসা (বর্তমানে গার্লস হাইস্কুল), রাজশাহী মুসলিম হাইস্কুলসহ আরো অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। মাদার বখশের কন্যা মনোয়ারা রহমান (১৯৩৪-২০১০) একজন ভাষাসৈনিক ছিলেন এবং পুত্র আ ন ম সালেহ (১৯৫২-২০১১) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করতেন। মাদার বখশের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন একটি আবাসিক ছাত্র হল ‘মাদার বখশ হল’ নামে নামকরণ করা হয়।
রাজশাহী মহানগরে মাদার বখশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি নামের একটি কলেজও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজের একটি ছাত্রাবাস মাদার বখশের নামে রাখা হয়। নাটোরের সিংড়া উপজেলায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পেট্রোল পাম্প-সংলগ্ন ব্রিজটির নামও মাদার বখশের নামেই রাখা হয়েছে। মাদার বখশ রাজশাহীর উন্নয়ন ও শিক্ষা বিস্তারে যে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখে গেছেন, তার যথাযথ মূল্যায়ন হয়েছে কি? রাজশাহী সিটি করপোরেশন এবং মাদার বখশ প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার জন্মদিবস বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয় কি? ২০ জানুয়ারি, ২০২২ রাজনীতিজ্ঞ, আইনজীবী, ভাষাসৈনিক ও সমাজসেবক মাদার বখশের ৫৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। রাজশাহী অঞ্চলের উন্নয়নে মাদার বখশের অবদান অনস্বীকার্য; কিন্তু তার মৃত্যুর ৫৫ বছর পেরিয়ে গেলেও নেই কোনো জাতীয় স্বীকৃতি। সমাজসেবা ও ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার অথবা একুশে পদকেও ভূষিত করা যেতে পারে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন অবৈতনিক শিক্ষক, জনদরদি আইনজীবী, শিক্ষানুরাগী জননেতা মাদার বখশের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

ফাত্তাহ তানভীর রানা : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও ব্যাংকার।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়