সেশনজট নিরসনে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কমাল ঢাবি

আগের সংবাদ

কী নির্দেশনা পেলেন ডিসিরা : জনগণের সেবক হতে হবে > খাদ্য নিরাপত্তা-বাজার স্থিতিশীল রাখা > সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ

পরের সংবাদ

কিংবদন্তি কাজী আনোয়ার হোসেন আর নেই : ‘মাসুদ রানা’র স্রষ্টা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২২ , ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জনপ্রিয় থ্রিলার সিরিজ মাসুদ রানার স্রষ্টা, কিংবদন্তি লেখক, অনুবাদক, সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার কাজী আনোয়ার হোসেন (৮৬) আর নেই। দীর্ঘদিন ধরে জটিল রোগের সঙ্গে লড়াই করে গতকাল বুধবার মৃত্যুর কাছে হার মানেন তিনি। সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা ও পুত্রবধূ মাসুমা মায়মুর তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গতকাল মাসুমা মায়মুর এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘নিভে গেছে দীপ জনমের তরে জ্বলিবে না সে তো আর। দূর আকাশের তারা হয়ে গেছে আমার ছেলেটা। আমার ছোট্ট ছেলেটা। আর কোনো দিনও আমার পিছু পিছু ঘুরে খুঁজবে না মায়ের গায়ের মিষ্টি গন্ধ। কোনো দিনই না। কিন্তু মাকে ছেড়ে থাকবে কীভাবে ওই অন্ধকার ঘরে আমার ছেলেটা? একা- শুধু একা? কী সব বকছি জানি না। আব্বা (কাজী আনোয়ার হোসেন) আর নেই। চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে।’
ওই স্ট্যাটাসে তিনি আরো লেখেন, ‘গত অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখ প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে। মাঝে পাঁচবার হসপিটালাইজড ছিলেন। চিকিৎসার সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায়নি। একটা ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্টঅ্যাটাক হয়ে সব শেষ হয়ে গেল। ১০ জানুয়ারি থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। আজ চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে।’ চাচাত ভাই কাজী রওনাক হোসেন জানান, ঢাকার বারডেম জেনারেল হাসপাতালে

চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে কাজী আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু হয়। রাতে তার মরদেহ বারডেমের হিমঘরে থাকবে। বৃহস্পতিবার (আজ) সকালে সেগুনবাগিচার বাসায় নেয়া হবে মরদেহ। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বাদ আসর বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
পাঠকের কাছে ‘কাজীদা’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেনের পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। ডাক নাম ‘নবাব’। তিনি বিদ্যুৎ মিত্র ও শামসুদ্দীন নওয়াব ছদ্মনামেও লিখতেন। ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশে ব্যাপক ‘পাঠক’ তৈরি করা এই লেখক-প্রকাশক। তার পিতা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মাতা সাজেদা খাতুন। তারা ছিলেন ৪ ভাই, ৭ বোন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের পূর্ব সীমানায় উত্তর ও দক্ষিণ কোণে যে দুটি দোতালা গেস্ট হাউস আজও দেখা যায়, সেখানেই উত্তরের দালানটিতে আনোয়ার হোসেনের ছেলেবেলা কেটেছে। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন বাড়ি বদল করে তারা দক্ষিণ দিকের গেস্ট হাউসে চলে যান। ১৯৬২ সালে কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন আনোয়ার হোসেন।
পরিবারের সংগীত চর্চার ধারাবাহিকতায় প্রথমে সংগীতশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ১৯৬৩ সালে বাবার দেয়া টাকায় সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা শুরু করেন। পরে সেই প্রেস থেকেই নিজের সম্পাদনায় পেপারব্যাকে সৃষ্টি করেছেন চিরতরুণ চরিত্রগুলো। ‘কুয়াশা’ ও ‘মাসুদ রানা’ সিরিজ দিয়ে আলোচনায় আসেন কাজী আনোয়ার হোসেন।
মাসুদ রানার জনপ্রিয়তা এতটাই ছিল যে তা রুপালি জগৎও তাকে নিয়ে ঋদ্ধ হতে চেয়েছে। ১৯৭৪ সালে মাসুদ রানার প্রথম চলচ্চিত্রায়ন ঘটে সিরিজের ‘বিস্মরণ’ বইটি নিয়ে। কল্পনার মাসুদ রানার ভূমিকায় এসেছিলেন সোহেল রানা, সেটাই এই চিত্রনায়কের প্রথম সিনেমা। আর মাসুদ রানার জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতার বাচসাস পুরস্কার জেতেন কাজী আনোয়ার হোসেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্যাকেজ নাটকের শুরুতেও জড়িয়ে মাসুদ রানা। সিরিজের পিশাচ দ্বীপ নিয়ে আতিকুল হক চৌধুরী তৈরি করেন নাটক প্রাচীর পেরিয়ে, যাতে মাসুদ রানার ভূমিকায় ছিলেন নোবেল, তার সঙ্গী সোহানা হয়েছিলেন বিপাশা হায়াৎ। মাসুদ রানাকে নিয়ে আরো দুটি চলচ্চিত্রও এখন নির্মাণের অপেক্ষায় রয়েছে। মাসুদ রানার পাশাপাশি অনেক বই অনুবাদও করেছেন কাজী আনোয়ার হোসেন। তার সম্পাদিত রহস্য পত্রিকাও বেশ জনপ্রিয় সাময়িকী। পরে বের করেন কিশোর পত্রিকা।
মাসুদ রানা সিরিজের কয়েকশ বই বের হলেও এর অনেকগুলো নিজে লেখেননি কাজী আনোয়ার হোসেন। ‘ঘোস্ট রাইটার’ হিসেবে অন্যরা লিখতেন, তবে লেখকের নাম যেত কাজী আনোয়ার হোসেন। এ নিয়ে শেষ জীবনে বিতর্কও সঙ্গী হয়েছিল কাজী আনোয়ার হোসেনের। সেবা প্রকাশনীরই লেখক শেখ আব্দুল হাকিম মাসুদ রানার স্বত্ব দাবি করলে বিষয়টি আদালতেও গড়িয়েছিল। শেষে হাইকোর্ট মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি এবং কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে মালিকানা স্বত্ব শেখ আবদুল হাকিমকে দিয়ে আদেশ দেয়। অধিকাংশ বইয়ের মালিকানা হারালেও ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের স্রষ্টা হিসেবে চরিত্রটি কাজী আনোয়ার হোসেনের মালিকানায় থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেয় কপিরাইট অফিস।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়