দুদকের মামলা : অব্যাহতি পেতে হাইকোর্টে ওসি প্রদীপের আবেদন

আগের সংবাদ

‘কাগুজে’ বিদেশি বিনিয়োগ : সাড়া মেলে নিবন্ধনের এক-তৃতীয়াংশের,হ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সুশাসনের অভাব

পরের সংবাদ

শীতের বুড়ি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কনকনে এক শীতের ভোরে, হুট করেই ঘুম ভেঙে যায় দিশার। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হতেই আব্বু-আম্মুর সাথে চলে এসেছে গ্রামে। বাবা বলেছিলেন, শীতের আসল আমেজটা না কি গ্রামে এলেই উপভোগ করা যায়। হাত-মুখ ধুয়ে হুডিসহ জ্যাকেট পরে বের হতেই দেখতে পেল আকাশ ফর্সা হতে এখনো ঢের দেরি। চৌধুরী বাড়ির চারপাশটা যেন ঘন কুয়াশার চাদরে যতœ করে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। এরই মাঝখানে রান্নাঘরের চুলোয় কয়েক পদের পিঠে তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে আছেন দাদু আর ফুফুরা।
– ও বুজি, এত্ত সক্কাল সক্কাল উঠে পড়েছো যে, ঘুম থেইকা?
দাদুর কথা শুনে মুচকি হাসে দিশা। চুলোর পাশেই, বড় এক দুধ ভর্তি গামলায় চিতই পিঠা ভেজানো হয়েছে। গুড়ের তৈরি পায়েস এগিয়ে দিতে দিতে লাভলী ফুফু বলে উঠলেন- দাওয়ায় বসে এটুকু খেয়ে নাও, আম্মু।
আহ! গুড়ের কী মিষ্টি গন্ধ! খিদেয় পেট চনমনিয়ে উঠল যেন দিশার। দাদু বাড়ি এলে, এই এক মজা। সবাই এত যতœ করে খাওয়ায় আর অনেক আদর দেয়। এতরকম পিঠে তো সে এর আগে কখনো একবারে চেখে দেখেনি। পিঠে-পায়েস খেতে খেতে চুলোর ধারে বসে কিছুক্ষণ আগুন পোহালো দিশা। ফুপাতো আর চাচাতো ভাই-বোনদের কেউ এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। এই সুযোগে কুয়াশার চাদর ভেদ করে উঠোন পেরিয়ে বাড়ির বাইরে চলে এলো সে।
সরু রাস্তা ধরে ধান ক্ষেতের দিকে এগোচ্ছিল যখন ছোট্ট মেয়েটি, তখনই সূর্য মামা যেন আস্তে আস্তে পূর্ব দিগন্তে শীতের ভয়ে কাবু হয়ে একটু একটু করে অচিনপুর গ্রামে পা রাখার চেষ্টা করছিল।
চারপাশটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো দিশা। গাছের ঝরা পাতায় অসাবধানে পা পড়তেই মর্মর করে উঠল। সেই শব্দে চমকে গেল মেয়েটি। সূর্য ওঠার সাথে সাথে কুয়াশাও বিদায় নিতে শুরু করল সন্তর্পণে। ঢাকার শীতের সকাল থেকে গ্রামের ভোর একেবারেই আলাদা। কিছুদূর হাঁটার পর সে দেখতে পেল, একজন মানুষ কাঁখে কলসির মতো পাত্র চাপিয়ে উল্টো দিক থেকে হেঁটে আসছে।
– ও বুজি, কোন বাড়ির মাইয়া গো, তুমি?
লোকটির কথায় হাঁটা থামিয়ে দিলো দিশা। শহরে যেমন অচেনা মানুষের সাথে কথা বলা নিষেধ, গ্রামেও সেরকম নিয়ম কি না, তা ঠাহর করে উঠতে পারছিল না মেয়েটি। তবুও সংক্ষেপে উত্তর দিল সে।
– চৌধুরী বাড়ির।
– বাহ, বেশ বেশ।
– তোমার কাঁধে ওটা কি? সাহস করে প্রশ্ন করেই ফেলল দিশা।
– এটা খেজুরের রস, খাইবা? বলেই কাঁধ থেকে হাঁড়িগুলো নামিয়ে গাছের গোড়ায় আরাম করে পা ছড়িয়ে বসল লোকটি।
খেজুরের রস! বেস্ট ফ্রেন্ড তানির কাছে অনেক শুনেছে, এই রসের মতো সুমিষ্ট পানীয় খুব কমই আছে! কিন্তু যতই গ্রামে থাকুক না কেন, একজন অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে তো হুট করে একটা কিছু খেয়ে ফেলা যায় না। আবার অনেকদিন ধরেই খেজুরের রস খাওয়ার লোভটাও সংবরণ করতে পারছিল না।
দিশা হ্যাঁ সূচক মাথা প্রায় নেড়েই ফেলতে যাচ্ছিল, ঠিক ঐ মুহূর্তে জঙ্গলের আড়াল থেকে থুত্থুড়ে এক বুড়ি এসে হাজির হলো।
– তোমার কি খুব বেশি ইচ্ছে করছে, খেজুরের রস খেতে? খনখনে কণ্ঠে বলে উঠল সেই বুড়ি। চুলগুলো সব সাদা। চোখ দুটো বয়সের ভারে কোটরে ঢুকে গেছে।
– খেতে তো চাই-ই। কিন্তু তুমি কে?
কী এমন দিশা বলেছে কে জানে, বুড়ি মা আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে হাহা করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন।
– আমি? আমি হলাম শীতের বুড়ি।
– শীতের বুড়ি? অবাক হয়ে তাকালো দিশা।
– হুম।
আচ্ছা আর কি কেউ দেখতে পাচ্ছে না এই বৃদ্ধাকে? খেজুরের রসওয়ালা লোকটির এদিকে কোনো মনযোগই যেন নেই!
– কী চাও তুমি আমার কাছে? ভ্রæ কুঁচকে জানতে চাইল দিশা।
– তেমন কিছুই না। শুধু বলব, কাঁচা খেজুরের রস খেলে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
– নিপা ভাইরাস! চিৎকার করে উঠল ছোট্ট মেয়েটি। ছোটো হলেও মা ডাক্তার হওয়ার সুবাদে; এই ক্লাস থ্রিতে পড়েও সে নিপা ভাইরাস সম্পর্কে অবগত আছে।
– হ্যাঁ, নিপা ভাইরাস।
– কিন্তু আমার যে অনেকদিনের শখ ছিল, জীবনে একবার হলেও খেজুরের রস খাব।
দিশার অসহায়ত্ব দেখে এবার বুড়ি নরম হলেন।
– এত ভেঙে পড়ার কিছু নেই। খেজুরের রস তো খেতে মানা করিনি। অবশ্যই খাবে তবে চুলায় জ্বাল দিয়ে।
– বাহ! ফুটিয়ে খেলে তাহলে রোগে আক্রান্ত হব না?
– না। বুড়ির ভাবলেশহীন কণ্ঠ শুনতে পেল দিশা।
সহজ সমাধান! পা ছড়িয়ে বসে থাকা গাছির কাছ থেকে রস নিয়ে চৌধুরী বাড়িতে ফিরে এলো দিশা। তারপর লাভলী ফুফুকে আবদার করে বসল, রস পুরোটা ফুটিয়ে দিতে। কিছুতেই কাঁচা রস নিজেও খাবে না, বাড়ির আর কাউকে খেতেও দেবে না।
মেয়ের কথা শুনে ভারি অবাক হলেন আব্বু। আহ্লাদী গলায় বললেন- বাহ! আমার মামনির মাথায় এত্ত বুদ্ধি!
এপাশ ওপাশ মাথা নেড়ে দিশা বললো- না, না, আব্বু। এই বুদ্ধি তো আমাকে দিয়েছে শীতের বুড়ি।
– শীতের বুড়ি! সে আবার কে? শোবার ঘরের পর্দা সরিয়ে এবার উঁকি মারলেন আম্মু।
ভোরের পাখিদের কিচির মিচির ডাকে কুয়াশার চাদর অনেক আগেই চৌধুরী বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। তবুও উঠোন পেরিয়ে জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে কাউকে আর খুঁজে পেল না দিশা।
কী আশ্চর্য! বুড়িটা না কিছুক্ষণ আগেই ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল?

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়